আজ মহাসপ্তমী, মহামায়া আজ যোগী নন। আজ মা বাস্তবের মানুষের মতো ষড়রিপুর গুণে গুণী। মা যে আজ আদ্যাশক্তি।।তাই তো আমরা সকাল থেকে আজ মায়ের পাঠ করছি। তবে অতীত কি ভোলা যায়? আমরাও ভুলিনি রামচন্দ্রের কথা। রাবন বধের জন্য যখন মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন সেই কথা, মনে পড়ছে? হয়ত পড়ছে অনেকের, কিন্তু আমরা তবু আজ মনে করিয়ে দেব আমাদের আপামর জণগণকে। আসুন দেখিনি পুরাণের কথায়,স্বয়ং ব্রহ্মা বলেছিলেন – “রাবণবধে রামচন্দ্রকে অনুগ্রহ করার জন্য তোমাকে অকালে জাগরিত করেছি। যতদিন না রাবণ বধ হয়, ততদিন তোমার পূজা করব। যেমন করে আমরা আজ তোমার বোধন করে পূজা করলাম, তেমন করেই মর্ত্যবাসী যুগ যুগ ধরে তোমার পূজা করবে।
যতকাল সৃষ্টি থাকবে, তুমিও পূজা পাবে এইভাবেই।” এরপর?, মা রাজী হলেন। আর হবেন নাই বা কেন? মা যে স্বয়ং প্রসন্ন হয়েছেন, তাই মায়ের ভাষায় – “সপ্তমী তিথিতে আমি প্রবেশ করব রামের ধনুর্বাণে। অষ্টমীতে রাম-রাবণে মহাযুদ্ধ হবে। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে রাবণের দশমুন্ড বিচ্ছিন্ন হবে। সেই দশমুন্ড আবার জোড়া লাগবে। কিন্তু নবমীতে রাবণ নিহত হবেন। দশমীতে রামচন্দ্র করবেন বিজয়োৎসব।’’
এ তো গেল অতীতের সকাল। সপ্তমীতে মায়ের কথায় আমি মনে করিয়ে দিলাম আমাদের দেবী দূর্গার গুরুত্ব কে।তবে এখন নিশ্চয় একটু জানতে ইচ্ছা করছে কি ভাবে হয়, এই সপ্তমী পূজা? কারণ যারা জোগার করেন তারা ছাড়া সবার জানা সম্ভব নয়। আসুন তবে সামান্য হলেও তুলে ধরতে ক্ষতি কি, তাই না?
তবে প্রথম কলাবউয়ে কথা বলি,
মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা। কদলীবৃক্ষসহ আটটি উদ্ভিদ এবং জোড়াবেল একসঙ্গে বেঁধে শাড়ি পরিয়ে একটি বধূ আকৃতিবিশিষ্ট করে দেবীর পাশে স্থাপন করা হয়। এই হল ’ নবপত্রিকা’, প্রচলিত ভাষায় যাকে ‘কলাবউ’ বলে।
মাদুর্গা নয়টি শক্তির প্রতীক। এই নয়টি উদ্ভিদ হলো
কদলী বা রম্ভা ( কলা গাছ ), কচু, হরিদ্রা ( হলুদ ), জয়ন্তী , বিল্ব ( বেল ), দাড়িম্ব ( দাড়িম ), অশোক, মান ও ধান ।কলা গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী , কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা, হরিদ্রা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা, জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্ত্তিকী, বিল্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা, দাড়িম্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা, অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা, মান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুন্ডা ও ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
দুর্গা পূজোর প্রথম দিন সপ্তমীর দিন সকালে পুরোহিত নিজেই নবপত্রিকা কে নিয়ে নিকটস্থ কোন নদী বা পুকুরে স্নান করাতে নিয়ে যান । সাথে মহিলারা উলু ধ্বনি ও শঙ্খ ধ্বনি করতে করতে যান, ঢাকী রাও ঢাক বাজাতে বাজাতে যান ।
। কৃত্তিবাসী রামায়নে এর উল্লেখ পাওয়া যায় । – “বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস
তবে নবপত্রিকা আর নবদুর্গা মিলে মিশে গেছে। এই নিয়ে অনেক মতামত আছে। কেউ বলেছেন, নবপত্রিকা আগন্তুক মাত্র। তবে প্রদেশ ভিত্তিকে তার ভিন্নতা। এখানেই হয়ত সপ্তমীর পূজার যথার্থতা।