ওয়েব ডেস্কঃ আজ মহা অষ্টমী। ও গো মা তুমি যে আর চিন্ময়ী মায়েতে এক রইলে না , তুমি প্রাণবন্ত হলে। কারণ আজ যে তোমার চক্ষুদান। মা, আদ্যাশক্তি মহামায়া, চিন্ময়ী স্বরূপে শক্তিরূপী মহিষাসুর মর্দিনী।
মা এখন অসুর বিনাশিনী, অর্থাৎ মা অশুভ নাশ করেছেন। বাস্তব জীবনে ষড়রিপুর আঘাত থেকে তিনি মানবজাতির শাশ্বত সংগ্রামের বার্তা বহন করেন,তাই তিনি মহামায়া। তবে এখন প্রশ্ন যে প্রথাসর্বস্বতা ছেড়ে আমরা যদি শাস্ত্রীয় বিধানে যাই, তবে তার সংজ্ঞা কি হতে পারে? প্রশ্ন আসছে তো, চলুন নিজেদের মতো করে আমরা উওর খুঁজি….
শাস্ত্রমতে………
দুর্গাষষ্ঠী: বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস;
মহাসপ্তমী: নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা;
মহাষ্টমী: মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমী ব্রত, মহাষ্টমী ব্রতোপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা;সন্ধিপূজা ও বলিদান;
মহানবমী: কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা;
বিজয়াদশমী: বিজয়াদশমী বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়াদশমী কৃত্য ও কুলাচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা।
আপনারা জানেন কি দূর্গাপূজা প্রথম কে করেন? জানি সবাই বলবেন সেই অকালবোধনের কথা। কিন্তু আমি যে একটু অন্যকথা বলি, আর সেই যদি পুরাণ, সত্য বলে মেনে নেয়, তবে বিষয় টা বেশ হয় তাই না। তবে নতুন তথ্য বলব কিন্তু, অপেক্ষা থাকবে না এমন কি হয়? আসুন ব্রক্ষ্মবৈবর্ত পুরাণ কি বলে দেখি –
“প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমাত্মনা।
বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদ্যৌ গোলকে রাগমণ্ডলে।
মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মণা সা দ্বিতীয়তঃ।
ত্রিপুরপ্রেষিতেনৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা”
অর্থাৎ, সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠেরআদি-বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। এরপর মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেছিলেন। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শিব বিপদে পড়ে তৃতীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে ইন্দ্র যে পূজার আয়োজন করেছিলেন, সেটি ছিল চতুর্থ দুর্গাপূজা। এবার অপেক্ষার অবসান তাই তো? তবে আর ভণিতা নয় অষ্টমীর পূজারীতি আর গুরুত্ব আরো একটু আলোচনা করে নেব আমরা।
অষ্টমীতে মা দুর্গা রামের বাণে আশ্রয় নিলেন। আর সন্ধিক্ষণে রাবণবধ। আর এই দুই তিথির মিলনই হচ্ছে ব্রহ্মমুহুর্ত , এখানে দেবী নিজেই চামুণ্ডা। চন্ড ও মুণ্ড এই দুই উগ্রমূর্তি অসুরের বধ হয় এই সন্ধিক্ষণে।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ বলে, যে রামচন্দ্র হনুমানজীকে দেবীদহ থেকে ১০৮ টা পদ্ম আনতে বলেন।
দীর্ঘদিন অসুর নিধন যজ্ঞে মাদুর্গার ক্ষত বিক্ষত দেহের অসহ্য জ্বালা দেখে মহাদেব কাতর হলেন । মায়ের সারা শরীরে একশো আটটি স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল । মহাদেব তাঁকে দেবীদহে স্নান করতে বললেন সেই জ্বালা জুড়ানোর জন্য । দেবীদহে মায়ের অবতরণে একশো সাতটি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল একশো সাতটি পদ্মের । মহাদেব দুর্গার এই জ্বালা সহ্য করতে না পারায় তাঁর চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু নিক্ষিপ্ত হল মায়ের একশো আটতম ক্ষতের ওপর । দেবীদহে স্নানকালে সেই অশ্রুসিক্ত ক্ষতটির থেকে যে পদ্মটি জন্ম নিয়েছিল সেটি মা নিজে হরণ করেছিলেন ।
তবে আসুন এই সন্ধিক্ষণে বার বার “উচ্চারণে জেনেনি আমরা তার গুরুত্ব…
দুর্গাপুজোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষণ হল এই সন্ধিপুজো। অষ্টমীতিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীতিথির শুরুর ২৪ মিনিট….এই মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়। মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধের সময় দেবী দুর্গার পিছন দিক থেকে আক্রমণ করেছিল দুই ভয়ানক অসুর চন্ড ও মুন্ড। দেবী তখন এক অদ্ভূত রূপ ধারণ করেন। কেশরাজিকে মাথার ওপরে সু-উচ্চ কবরীতে বেঁধে নিয়ে, কপালে প্রজ্জ্বলিত অর্ধচন্দ্রাকৃতি টিপ ও তিলক এঁকে, গলায় বিশাল মালা ধারণ করে, কানে সোনার কুন্ডল ও হলুদরঙা শাড়িতে নিজেকে সজ্জিত করেন। তাঁর রক্তচক্ষু, লাল জিহ্বা, নীলাভ মুখমন্ডল এবং ত্রিনয়ন থেকে অগ্নি বর্ষণ করতে থাকেন। ঢাল ও খড়্গ নিয়ে চন্ড ও মুন্ডকে বধ করেছিলেন দেবী এই সন্ধিপুজোর মাহেন্দ্রক্ষণে।
আর এখানের এই দুর্গাষ্টমী ও সন্ধিক্ষণের গুরুত্ব। তাই আজ নিবেদনে,
‘কাত্যায়নায় বিদ্মহে কন্যাকুমারী ধীমহি তন্নো দুর্গিঃ প্রচোদয়াত্’।
( সূত্র – তন্ত্র সমগ্র, দেবী পুরাণ, মার্কণ্ড, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ )
———+++++++++সমাপ্ত +++++++++++++++