ওঁ কুবেরং ধনদং খর্বং দ্বিভুজম শুভ
পীরবাসসম প্রসন্ন বদনং দেবং
যক্ষগুহ্যক সেবিতং
ওঁ নমো কুবেরায়….
“ওঁ ধনোদায় নমোস্তভ্যং নিধিপদ্মাধিপায়
চ ভবন্তু তত প্রসাদাম্নো
ধনধান্যাদি সম্পদ:”………
আমরা প্রগতিপন্থী, তবু ধর্মের দেনা পাওনা ধারাবাহিকভাবে চলছে। বাঙালী “বারো মাসের তেরো পার্বণ “,এ তো কথার কথা নয়,বাস্তব কথাও তাই বলে। দর্শন বলে যেখানে বিজ্ঞানের শেষ, সেখানে দর্শনের শুরু। তাই ওখানে আমাদের যুক্তির অকাট্য দেওয়া নেওয়া চলে না। পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ সবসময় সিদ্ধান্ত নেবে এটা একাটু বেশী বলা হয়। তা না হলে সংস্কারের কথাই থাকত না। তবে প্রথাসর্বস্ব হলেও আমরা ঈশ্বর, পরম করুণাময়কে স্মরণ করি । আজ সেই স্মরণে আমাদের আলোচনায়, “কুবের দেবতা – “যক্ষদের রাজা ” বাংলায় এক প্রবাদ আছে “যক্ষের ধন “। মানুষ তার প্রাণের প্রিয় জিনিস কে রক্ষা করে, তখন তাকে যক্ষের ধন বলে। কিন্তু প্রশ্ন হল যক্ষ কে? পুরাকালে এই যক্ষের চল ছিল। যক্ষদের কাজ হল ধনসম্পত্তি রক্ষা করা।আর তার অধিপতি হলেন কুবের। কুবের হলেন পুলস্ত্য ঋষির বংশধর। পুলস্ত্য হলেন ব্রহ্মার বংশধর। কুবেরের পূর্বে নাম ছিল বৈশ্রবণ।
প্রজাপতি ব্রহ্মার কৃপায় তিনি একসময় লঙ্কার অধিপতি ছিলেন। এমনকি পুষ্পক রথও তাঁর অধীনস্থ ছিল। তবে ঐ যে বলে, ” মন চলো নিজ নিকেতনে “। রাজ্যপাটে মন নেই তার। কৈলাসধাম যার প্রিয়, বিষয় বিষ কি তাঁকে ধরে রাখতে পারে? নাকি বিষের ছোবল ঈশ্বরকে ছুঁতে পারে। তাই রবণের হাতে পুষ্পরথ দিয়ে তিনি রাজ্যপাট বণ্টন করে চলে যান কৈলাস পর্বতে। কুবেরের হাতে থাকে দণ্ড আর তাঁর বাহন হল হস্তী। মা লক্ষ্মী ধন দায়িনী। তিনি ধন সম্পত্তি দান করেন। কিন্তু ধন থাকলেই তো হবে না। তাকে পাহারা দেওয়াটা প্রয়োজন। আর তার দায়ত্ব ধন কুবেরের। তাই তো বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজোর আগে কুবেরের পূজা হয়। পুরোহিত আগে কুবেরের পূজা করেন। এটাই পূজার নিয়ম।তবে আমরা এখন একবার কুবের ধ্যাণ মন্ত্র দেখে নি – ওঁ কুবেরং ধনদং খর্বং দ্বিভুজম শুভ পীরবাসসম প্রসন্ন বদনং দেবং যক্ষগুহ্যক সেবিতং ওঁ নমো কুবেরায়…. এই নাম ধ্যানের মাধ্যমে কুবেরের পূজা করা হয়। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার পর দীপাবলী অমাবস্যায় ভগবতী মায়ের পূজার পর কুবের পূজা হয়।
আবার পুরাণ থেকেও কিছু শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি। এমনই এক কুবের সম্পর্কে একটি গল্প পুরাণে পাই। কুবের, ধন কুবের। তাই অহং সত্ত্বা কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। একবার তিনি নিজের প্রতিপত্তি জাহির করতে সমস্থ দেবতাদের আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই কে নিমন্ত্রণ করলেও হর – পার্বতীকে নিজে নিমন্ত্রণ করতে গেলেন। দেবাদিদেব বুঝলেন এ নিশ্চয় তাঁর ঐশ্বর্য দেখাতে সকলকে আহ্বান করেছে। তাই তিনি উচিৎ শিক্ষা দিতে গণেশে পাঠাবেন বলে দিলেন। কুবের ভাবলেন এ এমন কি ব্যাপার, একটাই তো ছেলে খাবে। কিন্তু ঘটনা হিতে বিপরীত হলো। গণেশ কুবেরের সব রান্না খেয়ে ফেললেন। তাও তার পেটের ক্ষিদে যায় না। কুবের মহাবিপদে পড়লেন। শেষে মহাদেবের স্মরণ নিলেন। মহাদেব একটু হেসে দুটি ভাত দিলেন। আর কুবের মহাদেবের কথা অনুয়ায়ী কাজ করলেন। আর এতেই গণেশের পেট ভরল। তা দেখেই কুবের বুঝতে পারলেন যে অহংকার পতনের মূল। কাউকে খাওয়ানোটা ভাগ্যের বিষয়, ঐশ্বর্য নয়। তাই আমরা বিষয় নয়, একমনে ঈশ্বর প্রাণে কুবের কে স্মরণ করব।