একরাতে ধনী ” কথাটা শুনতে যতটা ভালো লাগে কাজে কি সেই জায়গাটা এতোটাই সোজা? না, তবু এমনটা সত্য। হ্যাঁ, সেটা ভারতবর্ষের মতো জায়গাতেই সম্ভব। শুনতে অদ্ভূত লাগছে, তবে শুধু না শুনে আলোচনায় দেখে নি তার বিস্তৃত বিবরণ। ভারতবর্ষ আধ্যাত্মিক দেশ, আর তার সাথে প্রকৃতি অখণ্ড কিছু এমন ঐশ্বর্যময় সম্পদ থাকবে না, এমন বলা অমূলক।
পুরাতন ভারতের ঐশ্বর্য, ধন, দৌলতের জন্য ভারতকে বলা হতো ” সোনে কা চিড়িয়া “, আবার “গোল্ডেন স্প্যারো “, আখ্যায়েও ডাকা হতো। এখন প্রশ্ন, কোথায় সেই ঐশ্বর্য? কি সেই প্রাচূর্য? কি সেই গুপ্ত ধন যার আলোকময় রহস্য এতো ঐশ্বর্যশালী করেছে ভারতবর্ষকে? আসুন জানুন সেই রহস্যময় স্থান আর আকাশপথে উড়ে তা নিজের চোখেই দেখে নিন। ভাবলে বেশ রোমহর্ষক লাগছে তাই না? আসুন আগে জানি কোথায় সেই স্থান? আর তার রহস্যময় ইতিহাসকথা।
১. হায়দ্রাবাদের চারমিনার ট্যানেল….
ইতিহাসের স্বাক্ষর ভারতের পঞ্চম শহর এই হায়দ্রাবাদ। ইতিহাস রাজার আমলের সেই আদিবাসী প্রেমের কথা বলে। স্থাপত্যে পারসিক ছোঁয়া এক নতুন ইতিহাসে মন কাড়ার আহ্বানে সকলকে ডাকে। কিন্তু সেই ট্যানেল? হ্যাঁ,৫৬ মিটার উঁচু চারটি মিনারসহ হলুদরঙের তাজিয়াধরনের এই কাঠামোটি দূর থেকেই দেখা যায়। শোনা যায়, শহর থেকে প্লেগ দূরীকরণের স্মারকস্বরূপ ১৫৯৩ সালে মহম্মদ কুলি কুতুব শাহ এই মিনারটি তৈরি করান। চারমিনারের উত্তরে চারকামান বা খিলান। কাছেই লাডবাজার। আর এই ট্যানেল হলো রাজাদের হঠাৎ বিপদে বাইরে যাবার রাস্তা। আর এখানেই আছে অনেক সম্পত্তি। যার সন্ধান কেউ জানে না।
শোনা যায় রাজপরিবার এখানে সব সম্পত্তি রেখে গেছেন। আর এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা, কবে উদ্ধার হবে সেই রাজ ঐশ্বর্য? সবটাই গোপন আজও।
২. কোথি প্রাসাদ….
সে রাজা নেই, সে কাল নেই, সে ঐশ্বর্য আজ গল্প কথা। কিন্তু ১৯৩৭ সাল পৃথিবীর ধনকুবের ঘোষণা করছে হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম কে, হ্যাঁ মির ওসমান আলি। শোনা যায় এই বিপুল ধন এই কিং কোথি প্রাসাদের তলায় নিমর্জিত আছে। আর হীরা, জহর মাণিক্য, প্রবাদ, মুক্ত, দামী পাথর স্টিল ট্রাঙ্কে গচ্ছিত আছে।তবে আজ রাম নেই রাজত্ব নেই, আছে শুধু রহস্যের খোঁজ। আর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির নিত্য খোঁজ সাথে অপেক্ষা মাটি খুঁড়ে তার উদ্ধার।
৩. আলওয়ার দূর্গ….
কথিত আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্বাসনকালে, সম্রাট রাজস্থানের আলওয়ার ফোর্টের আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। কারণ তাঁর সময়ে তিনি তার ঐশ্বর্য এখানে লুকিয়ে রাখেন। তবে এখানে কিছু ঐশ্বর্য পাওয়া গেছে, সবটাই লুকিয়ে রাখা হয়নি। তবে অনেকটাই এখনও গোপনে, আর প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায়
৪. জয়গড় দূর্গ….
যখন মনসিংহ আফগানিস্তান থেকে তাঁর পথে চলেছিলেন, তখন তাঁর সাথে তাঁর একটি বিশাল ধনআধার ছিল। তথ্য প্রকাশ করেছে যে তিনি রাজার সঙ্গে সব ধন ভাগ কখনও ভাগ করেন নি। তিনি কিছুটা জাগড়গড় দূর্গে লুকিয়ে ছিলেন। এমন একটি সমান্তরাল কাহিনীও রয়েছে যা বলে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ধনকুবের শিকারের সন্ধানে আদেশ দেন।
কেউ জানে না যে শিকার কতটা সফল। সুতরাং, লুকিয়ে আছে অনেক ইতিহাস, তবে সে ভাগ্যবান যদি আপনারা হন, তখন কে বলতে পারে, তার সন্ধান আপনাদের কারোর ভাগ্যেই ঘটল। তাই একবার ঘুরে আসতে ক্ষতি কি, তাই না!
৫. পদ্মনাভস্বামী মন্দির ” তিরুবন্তপুরম”…..
২011 সালে, তিরুবনন্তপুরমে অবস্থিত পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের একটি ভূগর্ভস্থ গোপন তল আদালতের আদেশে খোলা হয় এবং স্বর্ণ, হীরা, রত্ন, রূপা অলংকার, মুকুট ও মূল্যবান পাথর সংগ্রহ করা হয়। কোষাধ্যক্ষের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২২ ডলার বিলিয়ন।
মন্দিরের আরেকটি খিলান আছে যা আবিষ্কার একের চেয়ে ধনী বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে তা সে ঐশ্বর্যময় প্রাচূর্যের ভাণ্ডার প্রকাশ্যের অন্তরালে অনেকটাই। কিছু পাওয়া গেলেও, অধিকাংশ, কেবল অপেক্ষায়।
৬. কৃষ্ণা নদী, অন্ধ্রপ্রদেশ…..
এই স্থানটি অহিংস কোহিনূর ডায়মন্ডের জন্ম দেয়, যা কৃষ্ণা নদীর তীরে বিশ্বের সেরা হীরা বলে থাকে। এক সময় একবার, এই খনি বিশ্বের হিরের মূল উৎস ছিল। কিন্তু খোঁজ পাওয়া দুষ্কর ।
বিশ্বের শীর্ষ ১০হীরাগুলির সাতটি অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেই বলা হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতে পারছেন তো? “সোনে কা চাঁদি”কথাটা ফেলে দেবার মতো না।
৭. “সনভাণ্ডার” গুহা…..
এককথার স্বর্ণভাণ্ডার গুহার স্বরূপ।স্থান? বিহারের রাজগীর। সোনালী কোষাগারের বুকের মধ্যে ‘সোনার রুপা’ ইঙ্গিতটি বেশ ভালোভাবেই লুকিয়ে আছে। মগধ সাম্রাজ্যের মহান রাজা, রাজা বিম্বিসার দ্বারা নিরাপদে সুরক্ষিত একটি বিশাল ধন লুকিয়ে রাখার জন্য বিহার রাজগির জেলার অন্তর্গত টুইন গুহাগুলির সমন্বয় করা হয়। ইতিহাস বলে এই যদি গুহাটির উপরে লেখা স্ক্রিপ্টগুলি পড়তে পারা যায় , তবে গুহাটির দরজা জাদুভাবে খুলবে।
এ সেই অনেকটা জাদুবিদ্যার মতো। আর সেই মনে পড়ে যায়, চিচিং ফাঁক, তাই না? কিন্তু জানেন কি এই পদ্ধতিতে ধন সম্পত্তির লোভে ব্রিটিশ রা এগোলেও ব্যার্থ হয়। এ যেন ব্যার্থতার স্বাক্ষর।
৮. শ্রীমুকাম্বিকা মন্দির , কর্ণাটক……
পশ্চিম ঘাটের তীর্থযাত্রায় অবস্থিত, শ্রী মুকাম্বিকা মন্দির কর্ণাটকের কোল্লুর জেলায় অবস্থিত। বেদনারের নায়েক প্রাথমিকভাবে বিজয়নগরের রাজত্বের অধীনে শাসিত হয়েছিল। এই মন্দিরকে তাদের রাষ্ট্রীয় মন্দিরের বলে ঘোষণা করে এবং অনেক গহনাসহ মূর্তি ও গৌরব সম্মান করে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে রাজাদের একটি গোপনভাবে বন্ধ করে রাখা চারণভূমি এখানে একটি মহৎ সম্পদ লুকিয়ে আছে, একটি সর্প এর মোটিফ দ্বারা সুরক্ষিত।তাই সাধারণের নাগালের বাইরে।
তাই ধন সম্পত্তি আর ঐশ্বর্য সমগ্রতায় গুপ্তধনে ধনী ভারতভূমি। যদিও গুপ্ত, তবে ঐশ্বর্যময় ঐশী ধনী ভূমিকে অস্বীকার সম্ভব নয়, এখানে “গোল্ডেন স্প্যারো ” যথার্থ।