Home ব্লগবাজি পথ — ১১ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ১১ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ১১  ~   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ----- ১১
------------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


     দ্বিতীয়বার বাড়ি ছেড়ে পালাই যখন ক্লাস টেনে পড়ি। প্রায় তিনদিনের
জন্য হঠাৎই। এবার বর্ধমান। বন্ধু তপন দত্তর বাড়ি। দামোদরের ওপার। বন্ধুর মুখে
দামোদরকে নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। একদিন থাকতে না পেরে ডাক দিলাম ওকে। বলার
সঙ্গে সঙ্গেই ও রাজি।
     গ্রামটির নাম বড়বৈনান। বন্ধুর আসল বাড়ি ওখানেই। আমাদের স্কুলের সামনে
ওর দাদার বাড়ি। ও দাদার বাড়িতেই থাকত। মাঝে মাঝে ও বাড়ি যেত।
     বাস থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে এসে নদীর পারে হাজির হলাম। সেখান থেকে নৌকা।
জীবনে প্রথম নৌকা চাপা। দারুণ অনুভূতি। নদীর দুপারে সবুজ গাছপালা। আর মাঝখান
দিয়ে আমরা চলেছি। সূর্য অস্ত যেতে তখনও অনেকটা বাকি। কারণ আমরা স্কুলের ছুটির
পর বেরিয়েছিলাম।
     নৌকায় আমরা চারজন। মাঝি বন্ধুর চেনা। পাড়া সম্পর্কে কাকা হয়। যখন নদীর
বুকে আমরা তখন তো গ্রীষ্মের ভয়ঙ্কর দাবদাহ। বর্ষায় এই দামোদরের অবস্থা
শুনলাম। তখন তার দামাল অবস্থার কাছে ঘেঁষে কার সাধ্য। এখনকার দামোদরকে দেখলে
কিছুতেই বোঝার উপায় নেই। বৈঠায় একটু হাত লাগালাম। কী দারুণ অনুভূতি।
     সন্ধ্যে নামছে। বাড়ি বাড়ি সবাই শাঁখ বাজাচ্ছে। আমরা ঢুকলাম। আমাদের
বাড়িতে তখনও হ্যারিকেনের আলো। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখলাম ইলেকট্রিকের আলো।
খুব আনন্দ হয়েছিল।
     পরদিন সকালে দামোদরে দলবেঁধে স্নান করতে গেলাম। বাড়িতে যেখানে পুকুরে
স্নান করতে যাওয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা সেখানে দামোদরের মতো নদীতে এইমুহূর্তে
অবাধ চলাচল -------- ভাবতেও পারি না।
     বন্ধুর বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা হেঁটে এসে তবে নদী। পথের ধারে একটা
আমবাগান পড়ে। আমরা সেই বাগানে ঢুকে আম খেয়েছিলাম যত খুশি। বাগানের মালিক
বন্ধুর চেনা। একদিন আম এত খাওয়া হয়ে গিয়েছিল যে সেদিন দুপুরে ভাত তো খেতেই
পারি নি, রাতেও না খেয়ে শুয়ে পরেছিলাম।
     দামোদরে স্নান করতে গিয়ে একবার চোরাবালিতে পরেছিলাম। বন্ধুরাই বাঁচায়।
গামছা দিয়ে মাছ ধরতাম। একদিন কে একজন মশারী নিয়ে এসেছিল মাছ ধরবার জন্য।
     একদিন স্নান করে বাড়ি ফিরছি। অনেকটা দূরে মনে হলো পথ ধরে কে যেন আসছে।
চলনটা খুব চেনা। কাছে আসতে দেখি বাবা। " কি রে, কাউকে কিছু না বলে এখানে চলে
এসেছিস? মা দিদি চিন্তা করছে " ------ মানুষ এত শান্ত হতে পারে! বাবার কথা
শুনে তখন তাই মনে হয়েছিল। কোনো রাগ নেই। যেন আমি কয়েক ঘন্টার জন্য বন্ধুর
বাড়িতে এসেছি। অথচ আমি এসেছি তিন দিন হয়ে গেছে। বাবা নিজের চিন্তা কাউকে
বুঝতে দিত না।
     সবাই ধরে নিয়েছে আমি আর ফিরবো না। বাড়িতে নাওয়া-খাওয়া সব বন্ধ। একটা
অদ্ভুত ব্যাপার দেখেছিলাম সেদিন বাড়ি ফেরার পর দিদি কিন্তু একঘাও মারে নি।


~   হরিৎ: 31/05/2017


                                *******************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here