Home ব্লগবাজি অফসাইড!! ~ অতনু সাঁপুই

অফসাইড!! ~ অতনু সাঁপুই

অফসাইড!!    ~   অতনু সাঁপুই

অফসাইড!!

****************

অতনু সাঁপুই 

 

পাশের বাড়ির দেরাজ টানা ইসি টিভিতে ছিয়াশির বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছিলাম। সেই কি শুরু! হতে পারে। বা হতে পারে নিতান্তই কাকতালীয় যে বাঁ পা-টাই আমার চলতো বেশী। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, ওই ছোটখাটো মানুষটাই আমার পাগলামির প্রশ্রয় আশ্রয় হয়ে উঠেছিল। ভালোবেসে ফেললাম। ভালবেসে ফেললাম ঘাসের গন্ধ-হলদেটে সাদা জাল-চুনের দাগ। ভালোবেসে ফেললাম সিনগার্ড-স্টাডে আটকে থাকা মাটি-সাদাকালোর মাঝে সেলাইয়ের দাগ। সময় গড়ালো। ময়দান পেরিয়ে আমার স্বপ্নেরা তখন ছুটে বেড়াচ্ছে খবরের কাগজ আর ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায়। কাঁচি হাতে আমি একের পর এক সাজিয়ে রাখছি বুরুচাগা-ক্যানিজিয়া-লিনেকার-জিকো-ব্র্যাঙ্কো-প্লাতিনি-তিগানা-লোথার ম্যাথিউজ-রুডি ফোয়লার-ক্লিন্সম্যান। পরে আসছে আরও.. আরও নাম। গুলিত-বাস্তেন-রাইকার্ড-দুঙ্গা-রোমারিও-বেবেতো-হাজি-রজার মিল্লা-ওয়াল্টার জেঙ্গা-বারেসি-মালদিনি-দোনাদুনি-সিলাচ্চি-পল গাসকোয়েন-পিটার শিলটন-ভালদেরামা.. পাগল হয়ে যাচ্ছি। হাঁ করে পোস্টের পিছনে দাঁড়িয়ে দেখছি দাদাদের খেলা। বল এনে দেওয়ার সুযোগ পেলে গায়ে কাঁটা দিত। বলটা অন্তত একবার ছুঁয়ে দেখা যাবে। ওই বারপোস্টের পিছনে দাঁড়িয়েই শুরু হয়েছিল প্র্যাকটিস। তারপর কোনও একদিন বদলি হিসেবে মাঠে নামার চান্স। এরও অনেকদিন পরে কোনও এক শনিবারের দুপুরে একটা ফুটবল কিনে এনেছিলেন বাবা। সারা দুপুর অপেক্ষার পর বিকেলে যখন মাঠে নামবো, এল ঝেঁপে বৃষ্টি। সে মনখারাপ ভাগ করে নেওয়ার জন্য ছিল একটা দেওয়াল। সে দেওয়ালে বহুদিন লেগেছিল ছোপছোপ দাগ। বাড়ি বদলানোর সময় তাপ্পি দেওয়া ব্লাডারের ওই তেবড়ে যাওয়া বলটা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে বালিশের পাশে বলটাকে নিয়ে শুয়ে থাকা অনেকগুলো রাত হারাবে না কোনওদিন। শুধু ময়দান নয়। ফড়িয়াপুকুর আর ময়দান মার্কেটও তখন ছিল তীর্থক্ষেত্র। অনেকগুলো দিন ধরে স্বপ্ন বুনে চলা মধ্যবিত্ত ছেলেদের ঘুম ভাঙে চাকরির খোঁজে। মাস মাইনের বন্দোবস্তের খোঁজ ফিকে করে দেয় সবুজ চিরে বল পায়ে ছোটার স্বপ্ন। অনেকগুলো বছর পরে সে স্বপ্নের কথা ভাবতে গেলে মনে হয় গতজন্মের কথা। যে জীবনে স্বপ্নগুলো ছিল, সে জীবন কি আমারই ছিল! যদি তাই হয়, তবে এ কার জীবন বয়ে চলেছি! উত্তর মেলে না। মিলে যায় জুতোর দোকানে এক জোড়া সাধারণ জুতো। ‘বিলি-র বুট’ বা ‘রোভার্সের রয়’-এর সময়ে ঠিক যে রকম জুতো পরে স্বপ্নের সওয়ার হওয়া যেত.. অনেকটা সে রকম দেখতে। জুতোজোড়া হয়ে যায় ক্যালাইডোস্কোপ।

আজও রাতে মাঝেমাঝে স্বপ্নেরা পাশ ফিরে শোয়। পারফেক্ট স্ন্যাচিং-এর পর লেফ্ট উইং থেকে ওভারল্যাপিং.. শরীরটা একটু বেঁকিয়ে একটা ডজ.. দ্রুত দুটো ওয়ালেই ডি বক্সে ঢুকে পড়া.. আজও রাতে মাঝেমাঝে বাঁ পায়ের আলতো টোকায় নড়ে ওঠে মশারির জাল। ওয়াচম্যানের রাতজাগা হুইসলে হেসে ফেলে ভাবি.. আবার অফসাইড।।

অতনু ~     ১৮/০৫/২০১৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here