ওয়েব ডেস্কঃ ২রা অক্টোবর, খুব চেনা এক দিনের কথা তাই না? হবে নাই বা কেন, প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা যিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অহিংস আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব, হ্যাঁ ঠিক, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী শ্রদ্ধা নমন আজ জনসাধারণের উপর নির্মম অত্যাচার দেখেও যাঁর মনন অহিংসার কথা বলে, সেই সহিষ্ণু ব্যক্তিত্ব যে অন্যতম চালিকা শক্তি হবে তা বলা বাহুল্য মাত্র। তাই তো স্বাধীনতা, অধিকার, অনুপ্রেরণায় ১৯৪০সাল। বিশ্ব জুড়ে যখন মহান আত্মা অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধী জাতীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সেই থেকেই ২রা অক্টোবরের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রাথমিক জীবনে ধর্মীয় পরিবেশ তাঁকে জৈন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে। আর মূলক গ্রহণ করবো কিন্তু তার খন্ড খন্ড উপশিরা বাদ দেবো তা হয় না? তাই তো তাঁর জীবনের সাথে জড়িয়ে গেলো অহিংসা, আত্মশুদ্ধি ও সহিষ্ণুতা প্রভৃতি গুণাবলি। তারপরই তাঁর জীবনের মোড় ঘুড়ে যায়। কারণ ধর্মের আঙ্গিকে তিনি থিওসোফিক্যাল সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তারপরই ১৮৯৩ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত দক্ষিন আফ্রিকার গণ অধিকার আন্দোলন তাঁর জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়। কালো চামড়ার সাথে শ্বেতাঙ্গের ভেদ তাঁকে মর্মাহত করে বারেবার। কিন্তু অবশেষে গান্ধীজীর কাছের দক্ষিন আফ্রিকার জেনারেল সমঝতা করতে বাধ্য হন। তারপর চম্পারন বিক্ষোভ দেখা দিলে পরবর্তীকালে তা কুসংস্কারমুক্ত সমাজের আহ্বান জানায়। দীর্ঘ বিক্ষোভ, সর্দার প্যাটেলের প্রতিনিধিত্ব এক আমূল পরিবর্তন আনে। এরপর বৃটিশের অত্যাচার, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড ব্যক্তিগত বিরোধ ছেড়ে আদর্শগত রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ পায়। চৌরিচৌরার ঘটনা, স্বরাজ ও লবণ সত্যাগ্রহ, ডাণ্ডিযাত্রা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিবেশে এক আমূল পরিবর্তন আনে।
গান্ধীজীর মূল নীতি হলো-
সত্য, অহিংসা, নিরামিষ ভোজন, ব্রহ্মচর্য, বিশ্বাস, সরলত্ব।
জীবনের শিক্ষা, অনুপ্রেরণা, কর্ম এবং আত্মনিষ্ঠ আদর্শের জন্য তিনি “A role model for the generations to come” হিসেবে অভিহিত হয়েছেন।
ধর্ম সমর্কে তাঁর উক্তি হিন্দুবাদ আমাকে পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত করে, আমার সম্পুর্ণ স্বত্ত্বাকে পরিপূর্ণ করে…।
জীবন সম্পর্কে প্রশ্নে তিনি উওর করেন,
“হ্যাঁ, আমি তাই। এ ছাড়াও আমি একজন খ্রিস্টান, একজন মুসলিম, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি।”
এখন প্রশ্ন যে, অহিংসা নীতি কি নেতিবাচক ছিল?….
না, এই নীতির পেছনে ছিল রুশ ঐপন্যাসিক লিও টলস্টয় “Kindom of God is within You” এবং লেলহক জন রাসকিনের “Unto this last ” গ্রন্থ দুটির প্রভাব বিদ্যমান। তবু নৃশংসতায় হিংসা ছড়িয়ে যখন বিপথগামী তখন আন্দোলন স্থগিত ঘোষনায়, ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় লিখলেন “This Satanic Government cannot be mended ;it must be ended “। তবে ১৯৪৭ সালে যেভাবে ভারত ভাগ হয় তা, গান্ধিজি মন:পূত ছিলেন না। হতাশ হয়ে রাজনীতি থেকে সরে আসেন তিনি। অবশ্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ দেশভাগের জন্য এবং হিন্দু স্বার্থহানির জন্য গান্ধিজিকেই দায়ী করে। সংঘের উগ্র সমর্থন নথুরাম গডসের গুলিতে প্রাণ হারান ভারতের শ্রেষ্ঠ সন্তান, আর এখানেই দিনের গুরুত্ব বিদ্যমান।