Home ব্লগবাজি আমি তো সেলেব না ~ সোমাদ্রি সাহা

আমি তো সেলেব না ~ সোমাদ্রি সাহা

আমি তো সেলেব না   ~   সোমাদ্রি সাহা

আমি তো সেলেব না

~~~~~~~

 সোমাদ্রি সাহা

 

অনেক সময় মনের মধ্যে বিক্রম বেতালের ফ্রেমটা খেলা করে। সেই পথেই হয়তো রুবী হাসপাতালে অভিমুখে চলেছে অ্যাপ নির্ভর গাড়ি। ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। গাড়ির রাস্তাটা ঘুরে যেতে হয়। মানুষের জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার রাস্তাটাও তেমনই। ঘুরিয়ে ধরতে হয় নাক। এই লেখাটি লেখার সময় পর্যন্ত থ এ থেঁতলে যাওয়া গাড়ির সামনে হাজারো প্রশ্ন তোলপাড় করছে সমাজকে। মানে বাঙালিরা তো একটু এইসবই ভালবাসে। কী করে মরল, কেন মরল, কিভাবে মরল। হাইলি সাসপিসিয়াস। সব বাঙালি যেন গোয়েন্দা। সব বাঙালি পুলিশ। নিয়ন কলকাতা বুকে যখন নিস্তব্ধ রাত তখনই বেপরোয়া গাড়ি সমস্ত ব্রেকার ভেঙে দূরন্ত গতিতে ছুঁটে চলেছে। গানটা বাজালে কেমন হয়…রানার রানার রানার ছুটেছে…রাতের শহুরে নিয়নে একসময় স্টোন ম্যান হট কেক, তারপর রাতের শহরে ধর্ষণ তাও চলেছে, এখন চলছে রাতে কলকাতা দুর্ঘটনা। ইস আগে শ্রীজিত জানলে বাইশে শ্রাবণে একটা সিকোয়েন্স ঢুকিয়ে দিত। তবে শুধু রাত দেখলে হবে না, পরিসংখ্যান বলছে দিনেও বেশ অনেকের ইহলোক পরলোক হয়েছে। যেমন হয়। দুর্ঘটনার মে মাস কে ভুলতে পারে। লালবাড়িতে দুর্ঘটনা। সব কিছু তো ভুলতে নেই কারণ স্মৃতি তো সবই মনে রাখে। সালমান খানের জল খেয়ে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে হালফিলের কালিকাপ্রসাদের মৃত্যু। যদিও সূত্র বলছে কালিকাপ্রসাদ ভয়ে ট্রমা কাটাতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন, পুলিশের আইপিসি অ্যাক্টের গল্পটি ভিন্ন। তেমনই বিক্রমের ইচ্ছেরা নদীর মতো বদলে যাচ্ছে বয়ান। নিজেকে সেফ সাইডে রাখতে অনেকবার উইং দিয়ে ওঠানামা করছে। তেকাঁঠি ছুঁতে চাইছে না। কারণ এটাই সেলেবদের ভবিতব্য। টেবিলের তলায় রফা আমরা চাই না। চাই সত্য মানুষ জানুক। এক্ ফুল, দো মালি…নাকি গাড়ির মধ্যে গালাগালি…যা হয়। উঠতি জীবনের অনেক টাকার প্রলোভন যা করে।

সেলফি লাইটে ছবি তোলার বিজ্ঞাপন বলেই দেয় কতটা এন্ডোর্সমেন্ট পেয়েছিল বিক্রম। বেতাল বলব সোনিকাকে। কারণ আর তো তাকে প্রো কাবাডিতে সঞ্চালনা করতে দেখব না। মুনাফা কিন্তু হল খবরের বাইট জোগাড় করা কিছু সাংবাদিকের। বেশ কিছু কলম জুড়ে আলোচনা। আলো তো উড়ে যাবে। পরে থাকবে শুধু চোনা। মানে যেমন মিটমাট হয়ে যায় সালমানের গল্পরা। টিউবলাইট না হলে পাঠক ঠিকই বুঝবে কী বলতে চাইছি। তেমনি এই কালিকাপ্রসাদের জন্য জেল খাটা ছেলেটা যত টাকাই নিয়ে থাক, জেলে থাকবে। আরও বড় ক্রিমিনালই তৈরি হবে। সংশোধনের চিন্তা এই সমাজ করে না। ইগো। আর তেমনই নদী ভরে যাবে জলে। বিক্রম তার পরের গল্প বা তার পরের প্রেমিকার সাথে ২০১৮ সালের এই সময় হয়তো কোনও নাইট ক্লাবে ঝিংকু নাচবে। এটাই সমাজের অভিমুখ। মধ্য মেধা এখানেই থমকে দাঁড়ায়। এখানেই হট কেক হওয়া খবর ধুলোময় রাতে কেবলই ধোঁয়া হয়ে যায়। নিজের চোখের সামনে দেখা বাইক গিয়ে মারল ট্যাক্সির বোনেটে। মুখ থুবড়ে রক্তাক্ত রাস্তা। দুর্গাপুজোর সময় দেখা। সেই সময় পাঁচদিন পুলিশ কিছুই বলে না। এছাড়াও তো স্পিড রাইড রোজই চলে। এই যে সরকারী ঘোষণায় কদিন আগেই পুরোনো পদ্ধতির বাইকগুলো বিক্রি হল কম দামে। স্টক ক্লিয়ারেন্স। এখন সেই ক্লিয়ারেন্সরা চিত্রগুপ্তের খাতায় তো যাবেই। কেউ কবরে। কেউ আবার বেঁচে থাকবে শুধু প্রোফাইলে।

আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর জানতাম, জানতাম একটি ছেলে বেসমেন্টে পরে গেল। মরে গেল। তারপর মোমবাতি টু নিউজ বাইট। সেলেব আনাগোনা। বাইট নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা। সন্ধ্যার চ্যানেলে মুড়ি চা খেতে খেতে হেব্বি সময় কেটে যায়। সব তো গুলিয়ে যায় কিছু কাল পরে। স্মৃতিরা বাঙালির মস্তিষ্ককে বিট্রে করে। মজার বিষয়। হয়তো অমর্ত্যবাবুকে রবি ঠাকুর স্বপ্নে বলেছেন, “ওরে তোর নোবেল সামলে রাখিস। শান্তিনিকেতনে তো অশান্তির চূড়ান্ত হচ্ছে।” বাঙালি সে সব নিয়ে ভাবে না। বাঙালি তো লজ্জা করতে ভুলে গেছে। মেতে থাকে গোবরের গন্ধ নিয়ে। গোবর জল কি দিতে হবে। এতো পাপ। আরে কাস্তে হাঁতুড়ি দিয়ে আজও  – শত শত ভগ্নশেষ পরে ওরা কাজ করে। মানুষের ইগোরা প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই দুর্ঘটনার গতি বাড়ছে। উত্তর আধুনিকতার প্রধান লক্ষণ গতি। শহর হয়ে উঠল কারখানাময়। সেই শিল্প বিপ্লব। এখন আবার সে সব বদলে গিয়ে ডিজিট্যাল বিপ্লব। সেই ক্যাশলেস সোসাইটিতে এখন আজ তো বেচে থাকো। কালকের কথা কাল ভাবা যাবে। এই নিয়েই বিশ্ব সংসার। রাত বাকি, বাত বাকি। বাদবাকি কথারা মধ্যমেধার পাঠক জানতেও চান না।

অতিরিক্ত গতি আসে মজা থেকে আর ক্রোধ থেকে। যখন কেউ কিছু পায় না, অভিলাষা, পেতে হবে। মাইন্ড ফ্রি হবে। তখন এই স্পিড। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস। এরা সকলেই জানে কখন এদের মৃত্যু আসবে। জেনেও এরা না জানার ভান করে। উড়িয়ে দেয় রেড রোডে প্যারেডের প্রস্তুতিতে থাকা জোওয়ানে শরীর। ভ্রূক্ষেপ নেই। বাইক নিয়ে ধাক্কা মারে এক দৌহিত্র। আমরা সে সব খবর চেপে দিই। কারণ ঐ যে বললাম বাঙালি কেন সব মানুষের স্মৃতিরা এখন ম্লান। স্পিড দেখাতে হয় শ্যুমেখারের সাথে লড়াই কর। থুড়ি সে নিজেও সেই গতির শিকার। কোমা থেকে ফিরেছে শুনেছি। বড়ই অসহায় সামাজিক জীব আমরা। কেবল প্রত্যাশা করি কখন বৃষ্টি আসবে। আর কিছুর প্রত্যাশা নেই। যে সমাজ শিক্ষাহীন যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে সেই সমাজকে নিয়ে ভাবি না। আমরা তো কচ্ছপ। তাই নিজেদের ঠিক এদিক ওদিক করে বাঁচিয়ে নেব। মা সব সময় বলে অল্প কথা বলবি। শত্রু তৈরি করিস না।

আমজনতার বাঙালি ভাবে –  বাবা সে তো ঘরে বসে চাট দিয়ে মাল খাই। সে তো আর নাইটক্লাবে এই মোটা বউকে নিয়ে যাচ্ছে না। যে যায়, যে মরে মরুক। তাই সকালে ইয়ে করতে করতে একটু ইয়ে খবরগুলো পড়বে। আর একটু মডেলিংয়ের ছবি দেখে নেবে। বেশ দেখতে ছিল কিন্তু মেয়েটাকে। কেউ কেন সিনেমা করাল না। তাহলে অফিস কম করে বেশ দেখতো সিনেমা। ভালই লাগত। ধীরে ধীরে এদিক ওদিক মুখ ঘুরিয়ে দেখে নিতে হয়, সামনে বউ আছে কিনা। থাকলে একমুখ হাসি। বলবে – এই দেখো কি সব লিখেছে কাগজে। বউ চোখ বড় বড় করতেই বলে দেওয়া তোমাকে নিয়ে যাব একদিন পাতালপুরিতে…বউ তো খুশিতে বলে উঠবে…পুজো তো এসে গেল কবে ড্রেসটা কিনে দেবে গো….হৃদকম্পন গতিময় হতে বাধ্য। কে জানে সেদিন অফিস যাওয়ার সময় সেও কালিকাপ্রসাদের মতো ঈর্ষার শিকার হবো কিনা। সেও তো বেশ উন্নতি করে ফেলেছে চাকরিতে। এখন বেশ ভালই মাইনে পায়। শুধু রাজ্যের পে কমিশনটা ঘোষণা হচ্ছে না, হলে ফাটাফাটি হয়ে যেত। সেও একটা টয়োটা করোলা নিয়ে ঝিংকু হয়ে যেতো। লোভ।

এই লোভের জন্য আমরা শান্তির সীমানা পেরিয়ে মৃত্যু উপত্যকায় এগিয়ে চলেছি। লোন নেওয়ার হাতছানি। আরও চাই। আরও।….উলঙ্গ শিশুটা মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কী আজ রাতে ডেনরাইট লাগবে। এতো ভেবে লাভ নেই, আমি বরঞ্চ একটা ভাত ঘুম দিই। জানলার সাইডে বসার জায়গা পেয়েছি। আর কী চাই। ঘুমাই। বাসটা লোক নিতে দাঁড়ালেই বলব জোড়কে চালাও…জোড়কে…

সোমাদ্রি:17/05/2017

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here