তুমি নির্মল কর মঙ্গল কর, মলিন মর্ম মুছায়ে!
১৮৬৫ এর ২৬ শে জুলাই রজনীকান্ত পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।মাত্র ৪৫ বছর বয়সে রজনীকান্ত দেখেন মৃত্যুর মিছিল। জীবনের পরিণতি আর হারানোর যন্ত্রনাকে ভুলতে তিনি সঙ্গীত সৃষ্টিতে মগ্ন থাকতেন। আর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই সাধনা ছিল চলনশীল।তিনি রুচিশীল সঙ্গীত সাধনার মগ্ন সাধক ।
তাঁর পিতা গুরুপ্রসাদ সেন ছিলেন পেশায় সাব জজ।তাই বংশপরম্পরা অনুয়ায়ী তিনি যে এই পেশায় আসবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়াল অকস্মাৎ সংসারবে নি:স্ব রিক্ত অবস্থা, আর এই জীবনে নিজেকে দাঁড় শকরিয়ে সংসারকে সুস্থির করাই তাঁকে এক পরীক্ষার মুখে দাঁড় করায়। তবু কোথাও গানের প্রতি তীব্র আকাঙ্কা ও সারস্বত সাধনে তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়।
রজনীকান্ত সেনের প্রাথমিক সঙ্গীত গুরু ছিলেন তারকেশ্বর চক্রবর্তী। তারকেশ্বর চক্রবর্তী গান, লয় সাধনে রজনীকান্তের মনে বিশেষ অনুরাগ জন্মায়। আর তারপর ই তিনি আসেন। তবে প্রথাগত শিক্ষাপাঠ তিনি দূরে ছিলেন, যা ছিল তা হল অনুরাগ।এ ছাড়া বাঁশীতে সঙ্গীত নিবেদন ছিল অপার।
তার ডায়েরীর পাতা বলছে –
“আমি কখনও বইপ্রেমী ছিলাম না। অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। ”
তবে ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল। রাজনাথ তর্কনাথের কাছে তিনি সংস্কৃত ভাষা শিখতেন। এছাড়াও গোপাল কৃষ্ণ লাহিড়ীকে তিনি শিক্ষাগুরু হিসাবে পান।
জীবনের দু:খে শরিকি হয়ে তাঁর কলম বলে,
“তোমারি দেওয়া প্রাণে তোমারি দেওয়া দু:খ
তোমারি দেওয়া বুকে, তোমার অনুভব।”
এ যেন বিরহ ভাবনায় কান্তকবির আবেদন ঈশ্বরের কাছে নির্দিষ্ট হয়েছে। বঙ্গভঙ্গের কালে তাঁর গান নবজাগরণ সৃষ্টি করে।
“আমরা নেহাত গরীব, আমরা নেহাত ছোট
তবু আছি সাত কোটি ভাই, জেগে ওঠ ”
ব্যঙ্গার্থ ও নীতিকবিতায় তিনি কবি হিসাবে বিশেষ জ্ঞানগর্ভ প্রকাশ করেন।
আজ তাই প্রণম্য আবেদনে,
“আমায় সকল রকমে কাঙ্গাল করেছ, গর্ব করিতে চুর “,আজ এই প্রাণিত সঙ্গীত সাধনে স্মরণে ফিরে ফিরে বারে বারে।