কবিদের চোখে রাত যদি বলি, রাত আর রাতের সৌন্দর্য কাব্য ও কবিতাকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে? তাহলেই অনুভবিত হয় রাতের রহস্য গ্রাম বাংলার কুঁড়ে ঘর ছেড়ে বাহির অবয়বে বেরিয়ে আসাকে, নিস্তব্ধ সুন্দরী রাত তখন মায়াময়ী প্রকৃতির খোঁজে স্বপ্নের ভিতর থেকে বাস্তবতায় এসে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে, কুয়াশার ধূলিকণায় মিশে সুনীল আকাশগঙ্গার সাথে সখ্যতায় জড়িয়ে এক অবিমিশ্রীত মাদকতা সৃষ্টি করে, তখনই কবিগুরু বলে ওঠে ~ "দূরে তাকায় লক্ষ্যহারা, নয়ন ছলোছলো , এবার তবে ঘরের প্রদীপ, বাইরে নিয়ে চলো । মিলনরাতে সাক্ষী ছিল যারা, আজো জ্বলে আকাশে সেই তারা, পাণ্ডু-আঁধার বিদায়রাতের শেষে, যে তাকাত শিশির সজল শূন্যতা-উদ্দেশে, সেই তারকাই তেমনি চেয়েই আছে, অস্তলোকের প্রান্তদ্বারের কাছে " রাত গায়ে জড়িয়ে নেয় নিস্তব্ধতাকে, সেই মুহূর্তেকে কেউই আর উপেক্ষা করতে পারে না, অসহযোগিতা সেখানে নিষ্প্রভ, কারন মহাকাল ও রাতের পাশে এসে দাঁড়ায় । ততক্ষণে রাত, তরুণীর চপলতায় অন্ধকার রূপে সীমাহীন প্রস্ফুটিত অবলোকনে, মাঝে মাঝে জোনাকি পোকার আলো আর পেঁচা, চামচিকের, উড়ে যাওয়া শব্দের সাথে দুষ্টুমির খেলায় উন্মত্ত হয় । রাতের চপলতা আর সৌন্দর্যকে প্রকৃতি দেখে । রাতকে নিসর্গীয় জ্যোৎস্না ধারায় স্নান করতে দেখে, নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে প্রকৃতি । রাত যে বড় রহস্যময়ী ! প্রকৃতির ডাকে, নিস্তব্ধতার সুযোগ নিয়ে রাত তখন সাড়া দেয়, ধীরে ধীরে, নিজের সকল বস্ত্র যেন একে একে উন্মোচন করে, প্রকৃতির বুকে নিজেকে ধরা দেয় । কবিতার অক্ষর গুলো এমনি, একটি নিশুতি রাতের দরজায় যেন প্রহরীর অপেক্ষায় সজাগ থাকে । সমস্ত একাগ্রতা কবির মানস চোখে সাক্ষী থাকে কাব্যের অক্ষর জালে । তাই অল্প কথায় অজ্ঞাত নামের কোন কবির কবিতায় রাত ধরা দেয় ~ "অল্প কথায় বলাই ভালো রাত প্রসঙ্গে, সেবার যখন ছিলাম দু’জন ছাদের উপর একই সঙ্গে, আধখানা চাঁদ, একটা আকাশ, ঘোর লেগেছে, আবছা যেন, চোখ ছুঁয়ে যায়, ঠিক জানা নেই, ইচ্ছে ছিলো তেমন একটা সেই রাতে তাই, ভুল ছিল না মনের বাহির অন্ধকারে, ঠিক যেমনটা আমার চাওয়া তেমনি যে হয়, এমন সময় শব্দ গুলো নিস্তব্ধ অল্প ক’জন, খুব বেশী নয়, মিশিয়ে দিলো বুদ্ধি কিছু দুষ্টু ভীষণ, সেই হাওয়াতে, এই ঘটনা, ঘটলো রাতে, যখন আমি, খুঁজছি তারে লক্ষ্যহারা, খুব বেশী তাই বলতে চাই না রাত প্রসঙ্গে " রাতের কালি, কবি কলমের নিঃসৃত রেখায় অসীম চিত্র এঁকে চলে, ভিন্ন ভিন্ন ক্যানভাসে । কবি হারায় তখন রাতের সঙ্গে কবিতায়, যেন কবি ও রাত পরস্পরের অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে কাব্যে ধরা দেয় । তাই কবিগুরু বলে ওঠেন ! নিজেরে ধিক্কার দিয়ে মন বলে ওঠে, নহি নহি আমি নহি অপূর্ণ সৃষ্টির, সমুদ্রের পঙ্কলোকে অন্ধ তলচর, অর্ধস্ফুট শক্তি যার বিহ্বলতা-বিলাসী মাতাল, তরলে নিমগ্ন অনুক্ষণ । নীল অভিজিৎ ~ 25/06/2017