Home ঘুরে আসি জানেন কি উড়িষ্যার এই হিল স্টেশনে শীতকালে বরফ পড়ে!!! চলুন ঘুরে আসি “Kashmir of Orissa”~ থেকে…

জানেন কি উড়িষ্যার এই হিল স্টেশনে শীতকালে বরফ পড়ে!!! চলুন ঘুরে আসি “Kashmir of Orissa”~ থেকে…

জানেন কি উড়িষ্যার এই হিল স্টেশনে শীতকালে বরফ পড়ে!!! চলুন ঘুরে আসি “Kashmir of Orissa”~ থেকে…

আমাদের মন সব সময় শান্তি চায়। শাসন করা পাহাড় তাই হাতছানি দিয়ে ডাকে। হতেই পারে আমাদের রাজ্যের পাহাড়ে এখন একটু সরগরম তা বলে প্রতিবেশী রাজ্যের শৈলশহরে যেতেই পারেন। ঠিক ধরেছেন উড়িষ্যার দারিংবাড়ির কথা বলছি। 

Image result for kashmir of orissa

কন্ধমাল জেলার একটি উল্লেখযোগ্য শৈলশহর। আকর্ষণীয় মনোরম আবহাওয়ার শৈলময় পরিবেশ হল এক ভার্জিন ট্যুরিস্ট স্পট। প্রায় চার হাজার ফুট (সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৯১৫ মিটার) উচ্চতায়  ঘন সবুজ ঘেরা এক নৈস্বর্গিক আবেশ। আসলে পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণির বিভিন্ন শৃঙ্গগুলি উঁচুনিচু তরঙ্গায়িত ছন্দে শহরটিকে ঘিরে আছে। স্থানটিতে অন্যরকম শীতল আবহাওয়ার পরিমন্ডলে অপূর্ব সেরেনিটি রয়েছে। চোখ মেলে তাকালেই চারিদিকে ভিউ ফাইন্ডারে পাইনের জঙ্গল, নিবিড় শালবন, কফি বাগিচা বা সবুজ উপত্যকা যেন আপনাকেই পাগল করে দেবে। এখানেই রয়েছে বৃষ্টি প্রধান ক্রান্তীয় অরণ্য বা রেন ফরেস্ট। বন্য জীবজন্তুর আনাগোনায় আপনিও দু চারটে সেলফি তুলে নিতেই পারেন। শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা এই স্থানটিতে। এখনও পর্যন্ত -0.৫ ডিগ্রী সেণ্টিগ্রেড সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

শীতের দিনে কোনো কোনো সময় ঘাসের ডগায় বরফ জমে থাকতে দেখা যায়। দারিংবাড়ি একটি ব্লক ও তহসিল হেডকোয়ার্টার ; মোট আয়তন ৭৬৯.৬৮ বর্গ কিমি. মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৩ ভাগ কন্ধ উপজাতির মানুষ স্থানীয় কুইভাষায় ‘দারিং’- শব্দের অর্থ উপত্যকা, আর ‘বাড়ি’- অর্থে ঘর, সেইদিক থেকে ‘দারিংবাড়ি’ – শব্দের অর্থ হলো- উপত্যকার বাড়ি।

ট্রেনে বাসে বা ফ্লাইটে আপনাকে ভুবনেশ্বর পৌঁছাতে হবে। উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে বাসে ২৫১ কিমি. দূরে দারিংবাড়ি। দারিংবাড়ির নিকটতম রেল স্টেশন গঞ্জাম জেলার ব্রহ্মপুর। অন্য পথ ধরে গেলে বেরামপুর থেকে সড়ক পথ দূরত্ব মাত্র ১২০ কিমি.। এই সুন্দর শৈল শহরটি ফুলবনী থেকে ১০০ কিমি., বালিগুড়া থেকে ৫০ কিমি. এবং উদয়গিরি থেকে ৫৮ কিমি. দূরে অবস্থিত।

দারিংবাড়িতে সারা বছর মানুষজন আসেন। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য তাই রইল একটা ওভারভিউ।

 

থাকবেন কোথায় –

এখানে অল্প কিছু হোটেল রয়েছে। হোটেল ইউটোপিয়া কিংবা ডিয়ার ইকো হোমে থাকতে পারেন। এছাড়া পিডব্লিউডি’র বাংলোয় থাকার বন্দোবস্ত হতে পারে, বালিগুদার ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলে। ফুলবনিতে থাকতে পারেন সার্কিট হাউজ বা হোটেলে। এখন পর্যটকের কাছে ভার্জিন প্লেস। আপনি এখানে এলে অনেকগুলি প্রকৃতি কেন্দ্রিক পয়েন্ট দেখতেই পারেন। অবশ্য আপনাকে বেছে নিয়ে দেখতে হবে। অল্প দিনের ছুটিতে সব কটি প্রাকৃতিক স্থান শান্তি করে একবারে দেখে উঠতে পারবেন না। তাই প্রথমবারের জন্য মনোরম স্থানগুলি বেছে নিন।

  • কফি বাগিচা – এখানে কফি ও গোলমরিচের বাগান পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। ৪৫ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত এই বাগিচা উড়িষ্যা সরকারের ভূমিসংরক্ষণ ও বনদপ্তর বিভাগ তত্ত্বাবধান করে থাকে। অসংখ্য রূপালী রঙের ওক গাছে আবৃত বাগানটি আর গোলমরিচ লতাগুলি গাছগুলিকে আশ্রয় করে অদ্ভুত সৌন্দর্য সুষমা আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেবেই।
  • হিল ভিউ পার্ক – এই হিল ভিউ পার্কটি দারিংবাড়ি থেকে মাত্র এক কিমি. দূরে বালিগুডা যাওয়ার পথেই অবস্থিত। পার্কের ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমগ্র দারিংবাড়ি এবং তাঁর পারিপার্শ্বিক অঞ্চল আপনি দেখতেই পাবেন, সাথে ডিএসএলআর বা বাইনাকুলার থাকলে আপনি হয়ে উঠবেন একজন ট্রাভেল ফটোগ্রাফার।
  • মড়ুবান্দা জলপ্রপাত- দারিংবাড়ি থেকে ১৫ কিমি. দূরে বামুনিগাম যাওয়ার পথে ঘন অরণ্যময় পরিবেশে এই সুদৃশ্য জলপ্রপাতটি এক আলাদা শোভা। এখানে সেলফি না নিলে আপনি আর কী করলেন। স্থানীয় কুইভাষায় ‘মড়ু’ শব্দের অর্থ ময়ূর আর ‘বান্দা’ অর্থে পুকুরকে নির্দেশ করে।
  • পাইন জঙ্গল- আদিবাসী অধ্যুষিত শহর দারিংবাড়ি থেকে দক্ষিণে ২ কিমি. গেলেই রাস্তার দু-পাশে সবুজ পাইন গাছের সমারোহ। ৭০ এর দশকে উড়িষ্যার বনবিভাগ এই পাইন প্লানটেশন শুরু করে। এই পাইন জঙ্গলের মধ্য দিয়েই সশব্দে ব’য়ে চলেছে দুলুরি নদী
  • দুলুরি নদী- অপরিমিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পাহাড়ী দুলুরী সুন্দরী বয়ে চলেছে সঙ্গে আছে সুদৃশ্য জলপ্রপাত। পাইন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সশব্দে বয়ে যাওয়ার দুলুরির নৈসর্গিক দৃশ্যময়তা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকের সৌন্দর্য পিয়াসী মনকে থমকে দেবেই। তাই যদি এই ইঁট কাঠ পাথরের নেট দুনিয়া থেকে একটু শান্তি চান। এখানে ঘুরে আসুন।
  • পুতুদি জলপ্রপাত- স্থানটি উড়িষ্যার অন্যতম প্রধান জলপ্রপাত, চারিদিক ঘন অরণ্যে আবৃত এক মায়াবি স্থান। দারিংবাড়ি থেকে ১২৫ কিমি. দূরে ফুলবনী ব্লকে এই স্থানটি।
  • বেলঘর অভয়ারণ্য- দারিংবাড়ি থেকে ৫০ কিমি. দূরে এই ক্রান্তীয় অরণ্যভূমি নিঃসন্দেহে এখানকার বড় আকর্ষণ। ১৬,১৭৪,৪৬ একর জুড়ে বিস্তৃত এই অরণ্যভূমি যার মধ্যে ৩৮৭৬.৪৪ একর ভূমি চাষযোগ্য আর বাকিটা সংরক্ষিত বনভূমি। গভীর এই অরণ্যে বড় বড় দাঁতাল হাতি, পাখী, বুনো শুয়োর, হরিণ সহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর বাস।
  • এমু ফার্ম- ডোডোবাড়ার কাছেই পর্যটকদের জন্য অপর একটি আকর্ষণ এমু ফার্ম। অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক এই পাখিগুলি তাদের সুস্বাদু মাংসের জন্য সুপরিচিত। বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রকল্পটি অবশ্যই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। অস্ট্রেলিয়া না যেতে পারলেও এখানে আপনিও হয়ে উঠবেন স্টিভ স্মিথ।
  • ডোডোবাড়া বা লাভার্স পয়েন্ট- দারিংবাড়ি থেকে ১৯ কিমি. দূরে সদর মহকুমা শহর বালিগুডা যাওয়ার পথে কিরিকুটি নামক গ্রামের নিকট ঘন সবুজ অরণ্যের মাঝে এই স্থানটি অবস্থিত। অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরা স্থানটিকে পাহাড়ী-নদীর সশব্দ প্রবাহ আরও আকর্ষণীয় করেছে স্থানটির কাছাকাছি বেশ কয়েকটি স্বাভাবিক গুহা রয়েছে। চাইলে উৎসাহী পর্যটকেরা এখানে পিকনিকের আয়োজন করে সারাটাদিন অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতেই পারেন। তবে হ্যারিকেন ট্যুরে তা তো হয় না। তবু স্থানটি দেখতে যেতেই পারেন।
  • মন্দাসুরে কুঠি – দারিংবাড়ি থেকে ৪২ কিমি. দূরে রাইকিয়া ব্লকে অবস্থিত এই কুঠির দুটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে পারিপার্শ্বিক ঘন অরণ্যশোভিত পর্বতের অনির্বচণীয় শোভা জাস্ট পাগল করে দেবে। পাহাড় জঙ্গলের নীরব সৌন্দর্য উপভোগের এক ঈর্ষণীয় স্থান। বহুক্ষণ অনায়াসেই এখানে বসে প্রাকৃতিক সুধারস পান করে মনে আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরুন।
  • লুদু জলপ্রপাত – দারিংবাড়ি থেকে প্রায় ১৪০ কিমি. দূরে কোটগড় ব্লকে এই সুদৃশ্য জলপ্রপাতটি অবস্থিত। ঘন অরণ্যের মধ্যে এমন একটি জলপ্রপাত সৌন্দর্য পিয়াসী পর্যটকদের মনে অবশ্যই আলোড়ন তুলবে।
  • ডোকরা কুটিরশিল্প – বেড়াতে যাবেন আর একটু শপিং করবেন না! দারিংবাড়ি থেকে ৬০ কিমি. দূরে বালিগুডা ব্লকের বারাখামা গ্রামে আদিবাসী মানুষদের ডোকরা শিল্পের একটি কেন্দ্র রয়েছে। সরকারী ঋণের সাহায্যে হতদরিদ্র মানুষগুলি মোমের বিভিন্ন প্রকার ছাঁচে পিতল গলিয়ে নানারকম মূর্তি তৈরী করে থাকেন। সুন্দর এই শিল্পকর্মটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। নিঃসন্দেহে বলা যায় ডোকরা শিল্পীদের হাতের এই যাদুকর্ম পর্যটকদের মনে নান্দনিকতার ছোঁয়া দেবে। ডোকরার কানের দুল, হার, ঘর সাজানোর জিনিস একটু দামী হলেও তো আমরা কিনি।

এছাড়াও দারিংবাড়ি থেকে ৮২ কিমি. দূরে জলেশপাতা আশ্রম, ৭২ কিমি. দূরে বিরূপাক্ষ মন্দির, ১৪৫ কিমি. দূরে ফুলবনী ব্লকের কাত্রামাল জলপ্রপাত, ৮০ কিমি. দূরে হরভাঙ্গী জলাধার, ১৫ কিমি. দূরে বুঢান পাটা, ২ কিমি. দূরে সাইলেন্স ভ্যালি ও ১১০ কিমি. দূরে তুমুদিবাঁধ ব্লকে বেলঘর অভয়রণ্যের মধ্যে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলে তৈরি কাঠের বাংলো পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের পয়েন্ট। শুরুতেই বলেছি একবারে যদি এতগুলি স্থান দেখতে চান তাহলে অনেক দিন সময় লাগবে। তাই এত সুন্দর ইকো ট্যুরিজিম এ দুই বার যাওয়ার প্ল্যান করতেই পারেন।

আসুন দেখে নেওয়া যাক এই অপূর্ব হিল স্টেশন এর উপর একটি তথ্যচিত্রঃ~

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here