ওয়েব ডেস্কঃ জাপান সত্যই এক কৌতূহলী দেশ, উদ্দীপকও বটে। জাপানের প্রাচীনকালের নানা ইতিহাসের সাথে আমরা পরিচিত — সামুরাই যোদ্ধা ও গেইশা গার্লদের ঐতিহ্যর মতো নানান ঐতিহ্য। তবুও উত্তর আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়েও জাপানের ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ দ্বীপটি আজও বড়ই প্রাচীন। জাপান এবং কোরিয়ার ঠিক মাঝামাঝি সাগরে একটি দ্বীপ ও প্রাচীন ধর্মীয় স্থান ওকিনোশিমা, এই দ্বীপে নারীদের প্রবেশ এক্কেবারে নিষিদ্ধ। অবাক করা এক বিষয়।
ইতিহাসের পাতা থেকেই জানা যায়, জাপানের এই দ্বীপে এখনও তাদের প্রাচীন ধর্মবিশ্বাসকে খুব কড়াভাবেই পালন করা হয়ে থাকে। আর সেই ধর্মবিশ্বাস অনুসারে, এই দ্বীপে কোনো নারীরা প্রবেশ করতে পারবেন না। তারা পুরো দ্বীপটাকেই ধর্মীয় মন্দিরের মতোই দেখেন, উপাসনা করেন। সেজন্য নিয়ম মেনেই দ্বীপে শুধুমাত্র পুরুষরাই যাতায়াত করে।
ওকিনোশিমা দ্বীপেই রয়েছে ওকিতসু উপাসনালয় – সমুদ্রে নাবিকদের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনায় এই স্থানটি সপ্তদশ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই দ্বীপে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু শর্তও রয়েছে। দ্বীপের ভেতরে প্রবেশ করার পূর্বে বিভিন্ন রকম রীতিনীতি পালন করে নিজেকে শুদ্ধ প্রমাণ করে পুরুষদের নিজের জামাকাপড় খুলে তার পরই যাওয়া যায় সেখানে। জাপান এবং কোরিয়ার সমুদ্রপথের মাঝামাঝি হওয়ায় প্রায় হাজার বছর ধরে এই দ্বীপটিতে সমুদ্রের নাবিক ও যাত্রীরা যাত্রা বিরতি ঘটিয়ে তাদের পুজো দিয়ে যেত। এই সময় তারা নিবেদন হিসেবে তরবারি, ড্যাগার, ছোট পাথরের গোলক ইত্যাদি মন্দিরে তারা জমা দিত। সেইসব জিনিস জমা হতে হতে দ্বীপে এসবের বিশাল একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে। প্রাচীনত্ব ও ইতিহাসে সেগুলোর বিভিন্ন গুরুত্বের জন্য ইউনেস্কো এই দ্বীপটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছেন।
এই দ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার সময় সেখান থেকে তাদের কোনও স্মারক নিয়ে যাওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয় না। এমন কী ওই দ্বীপে যাওয়ার পর কী ঘটেছে, সেটাও তারা অন্য কাউকে বলতে পারেন না বলেই প্রতিজ্ঞা করতে হয়। এখানে বিদেশ থেকে আনা হাজার হাজার শিল্পসামগ্রী পাওয়া গেছে। কোরিয়া উপদ্বীপ থেকে আনা বহু সোনার আংটিও বিশেষ করে পাওয়া যায়।
প্রত্যেক বছর কেবলমাত্র ২৭ মে এই দ্বীপে জাপানি ছাড়া অন্য কোনো জাতির দর্শনার্থীরা প্রবেশ করার অনুমতি দেন। তবে দর্শনার্থীদের সব প্রাচীন রীতিনীতি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হয়।
যদিও দর্শনার্থীর মোট সংখ্যা কিছুতেই ২০০ ছাড়াতে পারবে না। তবে সবচেয়ে বিতর্কিত যে বিষয়টি, তা হল তাদের সবাইকে পুরুষই হতে হবে! সময় বদলে গেলেও দ্বীপের মানুষের মানসিকতা কিংবা দ্বীপের রীতিনীতি আজও বদলায়নি। তাই এখনও এই দ্বীপে কোনো নারী প্রবেশ করে না, ভবিষ্যতেও কোন নারীকে এই দ্বীপে প্রবেশ করতে দেবে এমন সম্ভাবনাও তেমন দেখা যাচ্ছে না। কেন এই নিয়মের শুরু হয়েছিল সেটা অজানাই রয়ে গেছে ইতিহাসের অতল গহ্বরে। টেকস্যাভি জাপানের এ এক বিপরীত ছবি। নারী তুমি আজও যে বড়ই অসহায়…
ওকিনোশিমা দ্বীপ-এর ভিডিও……