Home ব্লগবাজি পথ — ২৪ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ২৪ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ২৪   ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —– ২৪
—————–
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বৃষ্টিদিনেও বাগানে যেতাম। অবিশ্রান্ত বৃষ্টি, ছাতা মাথায় দিয়েও বাগানে
ছুটেছি। একদিনের জন্যেও বাদ যায় নি। কিন্তু কোথায় সেই বাগানের চিরচেনা রূপ।
ছাতা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ভিজে যখন বাগানে পৌঁছাতাম তখন বাগান মুখর। নিজেদের
মধ্যে গাছেরা কথা বলায় ব্যস্ত। আমি কে তাদের! আমার সাথে কথা বলার সময় কোথায়!
খুব অভিমান হতো।
আমার পড়ার জায়গা তখন জলে ভাসছে। বাগানের জল ওইখান দিয়ে বয়ে গিয়ে
পুকুরে পড়ছে। আমি মালির ঘরে গিয়ে উঠতাম। মালির বউ রান্না করছে আর মালি পাশে
একটা জায়গায় তাঁতে গামছা বুনছে। ওর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়েটার বিয়ে হয়ে
গেছে। তিন ছেলের একটা ঘুমাচ্ছে, একটা পুকুরে মাছ ধরছে আর একটা দোকানে গেছে।
আমি মালির কাছে গিয়ে বসতাম। মালি ওর দুঃখের কথা আমাকে শোনাত। একমাত্র
মেয়ের বিয়ে দিয়েও শান্তি নেই। মেয়েটাকে ওর স্বামী, শাশুড়ি জ্বালা যন্ত্রণা
দেয়। ভালো করে খেতে দেয় না। বাবা হয়ে ও এখানে খেতে পারে না। মেয়েটার মুখ মনে
পড়ে। খুব কষ্ট হয়। আমাকে সব বলে। বুঝতে পারতাম, মানুষ তার দুঃখের কথা বলার
জন্য কাউকে একজন কাছে চায়, সে যে বয়সেরই হোক না কেন। সংসারের কথা শুনে মন্তব্য
করার মতো বয়স তখনও আমার হয় নি। তবুও শুনতাম। মালি আমাকে বলে হালকা হচ্ছে এটা
ভেবেই আগ্রহ ভরে শুনতাম।
কথা বলতে বলতেই পুকুর থেকে হাঁসগুলো উঠে আসত। ওদের তখন ভাত আর কুঁড়ো
মেখে দিতে হত। মালি আর তার বউ কেউ কাজ ছেড়ে উঠত না। আমি ভাত কুঁড়ো মেখে
বাইরে থাকা একটা মালসায় দিয়ে আসতাম। ওরা যে আমাকে ওদের বাড়ির একজন ভাবছে তার
জন্য খুব খুশি হতাম।
মালির ছেলে দোকান থেকে ফিরলে তাকে মুড়িও খেতে দিতাম। এসবের ফাঁকে খেয়াল
থাকত কখন মালির আর একটি ছেলে পুকুর থেকে মাছ আনতে ডাকছে। ভিজে ভিজেই এসব কাজ
করতাম। বাড়িতে থাকতে এসব কাজ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। মালির
বাড়িতে কাজ করতে খুব ভালো লাগত। আমার ওপরেও যে কেউ নির্ভর করতে পারে —–
এটা ভাবলেই মনে হতো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। বেনেপুকুর, মালির পরিবার আমাকে এই
বড় হতে ভীষণভাবে সাহায্য করেছিল।

 

হরিৎ  ~ 24/06/2017

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here