Home ব্লগবাজি পথ — ২৬ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ২৬ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ২৬    ~       হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ------- ২৬
-------------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




     দুপুর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি। মনখারাপ। আর একটু পরেই চাঁদু, বাবলু,
শক্তিরা ডাকতে আসবে। দুপুরে খেতে যাওয়া আছে। বারোয়ারীতলায়। সোজারথের পরের দিন
থেকে উল্টোরথের আগের দিন পর্যন্ত রোজ খাওয়া। এটা আমার কাছে একটা উৎসবের মতো।
কী আনন্দ যে পেতাম! দল বেঁধে খেতে যাওয়ার মজাটাই আলাদা।
     চাঁদু, বাবলু, শক্তিরা ওদের মামার বাড়িতে আসে। ওদের মায়েরা কেউ আমার
দিদি, কেউ আমার পিসি। বৃষ্টি পড়লে ওদের যাওয়া তো আটকাবে না। কারণ ওরা মামার
বাড়িতে আনন্দ করতে এসেছে। তাছাড়া ওদের শাসন করার মতো লোকও কেউ নেই। কিন্তু
বৃষ্টি পড়লে আমার যে যাওয়া হবে না। দিদি পথ আটকে দাঁড়াবে।
     বার বার আকাশের দিকে চাইছি। বৃষ্টি থামার নামগন্ধ নেই। রথের ক'টা দিন
বাড়িতে খেতে আমার একেবারেই ভালো লাগে না। কিন্তু কি আর করা যাবে! বৃষ্টি না
থামলে তো বাড়িতেই খেতে হবে!
      বৃষ্টির বেগ একটু কমতেই চাঁদুরা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত
শুরু করে দেয়। ওরা জানিয়ে দেয় আর একটু থামলেই আমরা বেরিয়ে পড়ব। ওদের তো
যেতে কোনো মানা নেই। ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
     একটু পরে বৃষ্টি শুধু কমলই না, একেবারে খটখটে রোদ উঠে গেল। আর যেতে মানা
নেই। সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম। কলাবাগানে ঢুকে কলাপাতা কাটলাম। তারপরে সেগুলো
একজায়গায় বেঁধে বারোয়ারীতলার দিকে হাঁটা দিলাম।
     বারোয়ারীতলায় বড় বড় কড়ায় খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। আমরা যারা ব্রাহ্মণ
তাদের জন্য ভাত। ঠাকুরের দুয়ারে জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। কলাপাতাগুলো খুলে
একটা একটা করে পেতে আমরা জায়গা ধরে রাখলাম।
     বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে। পেটের খিদেয় চোখে অন্ধকার দেখছি। হঠাৎ
বালতিতে ভাত নিয়ে পরিবেশনকারী হাজির। আমাদের সে কি আনন্দ। মনে হবে এই যেন
প্রথম চোখে ভাত দেখছি। ভাত, মুগের ডাল, ডাঁটার চচ্চড়ি আর শেষ পাতে আমড়ার
পোস্ত চাটনি। সবাই একসঙ্গে বসে খুব আনন্দ করে খেতাম। যেন অমৃত! কি সুন্দর
স্বাদ। আমড়ার পোস্ত চাটনি এখনও মুখে লেগে আছে।
                                                  হরিৎ ~ 26/06/2017
                         *************************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here