Home ব্লগবাজি পথ — ৯ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৯ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৯    ~    হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ----- ৯
--------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



     শীতের দুপুর আমার কাছে মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। সকাল থেকে কখন যে দুপুর হয়
জানাই যায় না। শীতকালের দুপুরকে চিনতেই তো পারি না। সে এতই ছোটো যে, খেয়ে একটু
চোখ বুজলেই সন্ধ্যে। আর চোখ খুলেই যদি একবার বাড়ির বাইরে অন্ধকার দেখি তাহলেই
ব্যাস, মন একবারে দুঃখে ভরে যাবে। সেই দুঃখ কোন জাতের তা ধারণা করা আমার পক্ষে
তখন সম্ভব ছিল না।
     শীতের দিনে একটু বেলা বাড়তেই আলোটা যেন আস্তে আস্তে মরে আসে। বলা ভালো
শীতের আলো যেন মরেই আছে। গ্রীষ্মের আলোয় যেমন নিজেকে আলোকিত করতে পারি, সেই
আলো যেমন আমার চারপাশে ছড়িয়ে আমাকে জীবন্ত প্রাণবন্ত করে তোলে, তেমনি সেই
আলোয় আমার পথ উদ্ভাসিত হয়ে থাকে। সেই আলোয় আমি তার চিরঅস্থির হাত দেখতে পাই।
সে আমাকে ডাকে। যতক্ষণ না আমি তার দুয়ারে গিয়ে দাঁড়াই ততক্ষণ তার এই ডাকা
চলতেই থাকে। গ্রীষ্মের রোদ এমনই যে তার আলোয় পথের আলোকিত অস্তিত্ব আমাকেও
আলোকিত করে তোলে। আমি যখন তার আলোয় অবগাহন করি তখন মনে হয় আমার বন্ধু, আমার
স্বজন রূপে পথ আমার মনের খবর নিতে যেন অতি ব্যস্ত।
     শীতের মরা আলোয় আমার পথ যেন অতি বিষন্ন। বড় মনখারাপ করা তার শরীরী-ভাষা।
কোথায় তার সেই চিরঅস্থির অস্তিত্ব ! কেমন যেন মন গুমিয়ে থাকে। পথে নেমে তার
কথা আমাকেও ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। যে পথ আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায় তার এই
আচরণ আমি যেন আর দেখতে পারি না।
      শীত যেন আমার কাছে আপোষের ভাষা। যেন কোনো কিছু মেনে নেওয়া। একটুকরো
জায়গার জন্য তার পদলেহন। সে যেন দয়া করে আমাকে তার চৌহদ্দিতে জায়গা দেয়। শীতের
এই মানসিকতায় পথও যেন নিজেকে গুটিয়ে নেয়। পথ যেন তার সম্পূর্ণ অস্তিত্বকে
ছড়িয়ে দিতে পারে না।
     শীতের দুপুরগুলো আমি বাড়িতে থাকতে পারতাম না। ভীষণ মনখারাপ লাগত। তাই
মাঠে চলে যেতাম। ওই যেখানে আলু তোলা হত। শীতকাল মানেই তো গ্রামে আলুর মরশুম।
বাড়ির লোকের মানা। তবুও চোখ এড়িয়ে কিছুক্ষণের জন্য পালিয়ে যেতাম। বাড়ি
ফিরলেই প্রচণ্ড মার। তবুও যেতাম।
     যে জমিগুলোতে আলু তোলা হয়ে যেত আমরা কয়েকজন সেই জমিতে নেমে পড়তাম।
অন্যের কাছ থেকে কোদাল চেয়ে আলু জমির নরম মাটি কোপাতাম। অনেক কুপিয়ে কুপিয়ে
মাটির মধ্যে সোনা রঙের আলু দেখতে পেতাম। আমার সে কী আনন্দ। যেন মাটির নিচে
থেকে সোনা তুলে এনেছি। যেহেতু আমার ব্যাগ ছিল না তাই সেই আলুগুলো মাঠের একদিকে
জমা করতাম। আট দশটা আলু হয়ে গেলেই আমার কোদাল থেমে যেত। তখন নতুন আইসক্রিম
উঠেছে। খাওয়া ভীষণভাবেই মানা। বাড়ির কেউ দেখতে পেলে, বিশেষ করে দিদি
------আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে। তবুও আট দশটা আলু নিয়ে পথের ওপর দিয়ে
ছুটতাম আইসক্রিমওলার কাছে। ওই আলুগুলো নিয়ে একটা আইসক্রিম দিত। পথের ওপর
দাঁড়িয়ে শীতের বিষন্ন আলোয় আইসক্রিমের সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে।


                         **********************
                                                      হরিৎঃ২৯/০৫/২০১৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here