পাঁচ দিনে ৪৩ হাজার পদে নিয়োগ প্রাথমিকে

মামলার পর মামলা হয়েছে। বিতর্কের পর বিতর্ক। টেট নিয়ে দীর্ঘ টানাপেডন পেরিয়ে অবশেষে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের চূডান্ত প্রক্রিয়া শুরু হল। আদালতের নির্দেশ ও নিয়মবিধি অনুযায়ী নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদেরই।

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমবেশি ৪৩ হাজার পদে নিয়োগ পর্ব সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে প্রার্থীদের আশ্বাস দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সংস্থার সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, শিক্ষক নিয়োগের চূডান্ত পর্ব এ দিনই শুরু হয়েছে। নিয়োগ হবে মোট ৪২ হাজার ৯৪৯ শূন্য পদে। প্রতিটি জেলায় কাউন্সেলিং শুরু হবে ২ ফেব্রুয়ারি (কাল, বৃহস্পতিবার)।

”এ দিন প্রথম ধাপে ১২ হাজার প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। রবিবারের মধ্যেই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছি,” বলেন মানিকবাবু।পর্ষদ-প্রধান জানান, এ বার টেটে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লক্ষেরও বেশি। তাঁদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন এক লক্ষ ২৫ হাজার জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে প্রশিক্ষিতের সংখ্যা ১১ হাজার ৩০০-র কিছু বেশি। এর পরে ধাপে ধাপে তালিকা প্রকাশ করে রবিবারের মধ্যেই সব শূন্য পদে নিয়োগ করা হবে। তবে নিয়োগ-বিধি এবং আদালতের নির্দেশ মেনে প্রশিক্ষিত প্রার্থীদেরই যে আগে নিয়োগ করা হবে, তা স্পষ্ট করে দেন মানিকবাবু।

প্রার্থীরা কাউন্সেলিংয়ের কথা জানতে পারবেন কী ভাবে?

মানিকবাবু জানান, বৃহস্পতিবার যে-বারো হাজার প্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া হবে, আজ, বুধবার থেকেই এসএমএস এবং ই-মেলে তাঁদের সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে কাউন্সেলিং হবে মূলত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসেই। ব্যতিক্রম শুধু চারটি জেলা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রার্থীদের কাউন্সেলিং হবে আলিপুরের হেস্টিংস হাউসে। বর্ধমান জেলার ক্ষেত্রে তা হবে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে। মালদহের প্রার্থীদের কাউন্সেলিং হবে বার্লো গার্লস হাইস্কুলে এবং বারাসতের প্যারীচরণ সরকার গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে কাউন্সেলিং হবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রার্থীদের।

নিয়োগ পরীক্ষার

আগে থেকেই টেট নিয়ে নানান বিতর্ক শুরু হয়েছিল এবং তা চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। ২০১৫ সালের অগস্টে পরীক্ষা শুরুর দু’দিন আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে গাডি থেকে কিছু প্রশ্নপত্র উধাও হয়ে যায়। সেই ঘটনায় হইচই হয় ব্যাপক। শেষ পর্যন্ত তদন্তে নামে সিআইডি। তার পরে ঠিক হয়, পরীক্ষা হবে ৪ অক্টোবর। কিন্তু ফের তারিখ পাল্টে পরীক্ষা নেওয়া হয় ১১ অক্টোবর। বাধা আসতে থাকে তার পরেও। প্রশিক্ষিত না অপ্রশিক্ষিত, নিয়োগে কারা অগ্রাধিকার পাবেন- তা নিয়ে একের পর এক মামলা হতে থাকে। গত সিঙ্গুর দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভামঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, মামলা না-থাকলে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হয়ে যাবে। বারবার মামলার মুখে পেড শেষ পর্যন্ত ফল বেরোয় গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এ দিন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।নিয়োগের চূডান্ত পর্বে পৌঁছনোটা খুব মসৃণ হয়নি। প্রথমে শুধু প্রশিক্ষিতদের মধ্য থেকে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্র আরও এক বছর প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদেরও ওই পদে নিয়োগের ছাডপত্র দেওয়ায় রাজ্য সিদ্ধান্ত নেয়, প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণহীন- দু’ধরনেরই প্রার্থী নিয়োগের সংস্থান রাখা হবে। স্কুলশিক্ষকের পদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগ করার জন্য অন্য কিছু রাজ্য কেন্দ্রের ছাডপত্র পেলেও বাংলাকে সেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল না। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গে প্রশিক্ষিত প্রার্থী দিয়েই শূন্য শিক্ষক-পদ পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ ছাডাই শিক্ষক নিয়োগের সময়সীমা আরও কিছুটা বাডানোর জন্য রাজ্যপাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই দিল্লিতে তদ্বির-তদারক করে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র সেই ছাড মঞ্জুর করে।

এ দিনই হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়-ভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের পরীক্ষার (স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট) ফল ঘোষণার উপরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দু’সপ্তাহ বলবত্‍ থাকবে। আইনজীবী কিশোর দত্ত জানান, ওই পরীক্ষা হয় গত বছর। বিচারপতি রাজীব শর্মা ডিসেম্বরে নির্দেশ দেন, ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশের উপরে স্থগিতাদেশ জারি থাকবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ দিন সেই সময়সীমা শেষ হয়। নিজের মক্কেলদের হয়ে মেয়াদ বাডানোর আবেদন জানান ওই আইনজীবী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here