ভাববাদী বহিরঙ্গের বাস্তবানুগ ও তন্নিষ্ঠ সাহিত্যিক ” বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ” শ্রদ্ধা স্মরণ আজ। ( ১৮৯৪, ১২ সেপ্টেম্বর – ১৯৫০) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মাতুলালয় কাঁচড়াপাড়ার কাছাকাছি ঘোষপাড়া মুরাতিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় শাস্ত্রী ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত, মাতা মৃণালিনী দেবী। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনিই সর্বজ্যেষ্ঠ। কলম বৈশিষ্ট্য বলে যে তিনি বাস্তবতা বিরোধী নন।জীবনের বহিরঙ্গকে এঁকেছেন চরিত্র বিবর্তনের মধ্য দিয়ে, আবার জীবনকেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন, ভিন্ন শহর, গ্রাম বলে আলাদা সত্ত্বাকে প্রতিষ্ঠা দেন নি। পল্লাইজীবনের প্রতি পক্ষপাত থাকলেও, তাঁকে পলায়নমনোবৃত্তিসম্পন্ন বলা অন্যায় হবে। তবে প্রকৃতির সাথে এক হয়ে নিজের কলমকে এঁকেছেন তাই তিনি নৈসর্গিক রসিক কবি শিল্পী। প্রকৃতির অবিসংবাদী প্রাধান্য একমাত্র “পথের পাঁচালী ” র “আম আঁটির ভেঁপু ” অংশ ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। একথা সত্যি যে, প্রকৃতি বর্ণনায় ও প্রাকৃতিক রূপ চিত্রণে বিভূতিভূষণের একটি নিজস্ব ধরনের নৈপুণ্য আছে যা, অন্য সাহিত্যকের রচনায় সুলভ নয়, বরং বিশ্লেষণের অতীত।
রচনাবলী – উপন্যাস :
পথের পাঁচালী, অপরাজিতা, বিপিনের সংসার, আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হটেল, ইত্যাদি। গল্প সংকলন : মেঘমল্লার, মৌরীফুল, কিন্নরদল, নবাগত ইত্যাদি। এছাড়া ভ্রমণ কাহিনি, কিশোর পাঠ্য ” চাঁদের পাহাড় ” ” হীরা মাণিক ” ইত্যাদিতে তিনি অসামান্য প্রতিভার প্রকাশ করেন। আজোও চাঁদের পাহাড় স্কুলের পাঠ্য হিসাবে পড়ানো হয়।
আরন্যকের পাঠ শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রকৃতি পাঠে শিশুদের স্বাচ্ছন্দ্য করতে বর্তমানে অংশ হিসাবে এই পাঠ বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয়। তবু রচনা আর কলমে শৈলী ব্যাবহারে, বিভূতিভূষণকে প্রকৃতির কাব্যকার বললে অন্যায় হবে না। মানুষের সুখদুঃখের পাঁচালী সাহিত্যের সর্বপ্রধান উপজীব্য।
তাঁর কলমে নারী অতি সাধারণ – অশিক্ষিত, অপ্রগলভা ও সরলস্বভাবা। তাঁর শিল্পকর্ম বারে বারে কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ শিল্পধর্মের সাদৃশ্য মনে করিয়ে দেয়। তবে কিছু ক্ষেতে তিনি খণ্ডিত। আবেশে লিরিকের সুরে, romanticism ও realism এর যর্থাথ প্রয়োগ দেখা যায়। আর তাই বাঙালীর আটপৌরে ভাষার আজ শ্রদ্ধা স্মরণ, কালের ফেরে বারে বারে ফিরে ফিরে আসে, এখানেই তাঁর জীবন কলমের সার্থকতা।