web Desk: ভারতের মিডিয়া কোম্পানি ‘কালচার মেশিন’ তাদের মহিলা কর্মীদের জন্য মাসিক ঋতুস্রাবের প্রথম দিনটি সবেতন ছুটি দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে। ‘কালচার মেশিন‘ সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, মাসিকের প্রথম দিনটি নারীদের জন্য শারীরিকভাবে অস্বস্তিকর এবং কাজের জন্য উপযুক্ত নয় – এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঐ কোম্পানির সত্তর-আশিজন মহিলা কর্মী এই সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত এবং ভারত সরকারও যাতে অনুরূপ নীতি গ্রহণ করে তার জন্য এখন তারা অনন্য ক্যাম্পেইন শুরু করেছন। প্রসঙ্গত, উক্ত দিনের ছুটির জন্য অনেকদিন ধরেই কোম্পানীর মহিলা কর্মীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছিল। দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়নও সূত্রে জানিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়ে বলেছেন – কারণ সামান্য কয়েকটা কর্মদিবসের ক্ষতি তেমন কোনও বড় ব্যাপার নয়। নারীকে ভারত-সহ দুনিয়ার সর্বত্রই এক অস্বস্তি নীরবে সয়েই তাদের সে দিনগুলোতেও কর্মক্ষেত্রে রোজকার নিয়মিত রুটিনেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে এই সময় কারওর মেজাজ তিরিক্ষে হয়ে থাকে, মাথাধরা, ক্র্যাম্প, গা বমি-বমি, পেটব্যাথার মতো নানা উপসর্গে অনেকের শরীরটাই হাল ছেড়ে দেয়। তার সঙ্গে থাকে মুড সুইং।
মুম্বইয়ের মিডিয়া হাউস ‘কালচার মেশিন’ তাদের মহিলা কর্মীদের ওই দিনগুলোতে সবেতন ছুটি দিয়েছে কারণ তারা সত্যিটাকে স্বীকার করে নিয়েছে। সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স প্রেসিডেন্ট দেবলীনা এস মজুমদার সূত্রকে জানিয়েছেন চলতি জুলাই মাসের গোড়া থেকেই তারা সংস্থার নারী কর্মীদের জন্য এই FOP ( First Day Of Period) নীতি কার্যকর করেছেন। তিনি বলেন – অনেক সময়ই দেখা যায় মহিলারা মানসিকভাবে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমকক্ষ হলেও শারীরিক কারণে তাদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েন। যেমন প্রতি মাসে ঋতুবতী হওয়ার সময় তারা অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন বা মানসিক অবসাদে ভোগেন। এই সমস্যাকে অ্যাড্রেস করতেই আমরা এফওপি নীতি অনুসরণ করছি। এই ছুটিটা হবে একটা অপশনাল ছুটি – আমাদের নারী কর্মীরা প্রতি মাসে তাদের পিরিওডের প্রথম দিনে এই ছুটিটা নিতে পারবেন।এই ছুটির বিষয় সংস্থার নারী কর্মীরা বলেন – ঋতুস্রাবের যন্ত্রণাটা কেউ নিতে পারেন না, তবু এখন থেকে কাজের পরিবেশ অনেক সহনীয় হবে, মেয়েদের অকারণে লজ্জিত হতে হবে না। অন্য একজন বলেন, ওই দিনগুলোতে বাড়িতে বসে কফির কাপে চুমুক দেওয়ার জন্য এখন আর অন্তত কোনও অজুহাত খুঁজতে হবে না!
কিন্তু ভারতের শ্রমিক সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কী ভাবছে? দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন জানান এই সিদ্ধান্তটা শিল্পবান্ধব হল কি না, সেটা নিয়ে তিনি আদৌ বিচলিত নন। বিজনেস-ফ্রেন্ডলি হোক বা না-হোক, এটা তো হিউম্যান ফ্রেন্ডলি বটেই।সংস্থার তরফ থেকে বলা হয় – এমন কী, দেশের সব নারী শ্রমিক ও কর্মীরা এই ছুটি পেলেও কর্মদিবসের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না বলেই তার অভিমত। আমাদের দেশে শ্রমিকদের মধ্যে নারীদের শতকরা হার আর কতটুকু? তাতে যদি তারা মাসে একদিন, বছরে বড়জোর বারোটা দিন বাড়তি ছুটি পান তাতে আর কী এমন হেরফের হবে? আর তা ছাড়া এটাকে মেয়েদের শারীরিক কারণে ছুটি বলা উচিত নয় – এটা হল প্রাকৃতিক কারণ। প্রত্যেক সমাজেরই সেটার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এমন কী মাতৃত্বকালীন ছুটিও কিন্তু চালু হয়েছিল একই রকম কারণে…
এদিকে কালচার মেশিনের মহিলা কর্মীরা তাদের হঠাৎ-পাওয়া এই সুবিধেকে অন্যদের জন্যও ছড়িয়ে দিতে দুই কেন্দ্রিয় মন্ত্রীকে জানানোর জন্য একটি অনলাইন পিটিশনও শুরু করেছেন – যাতে দারুণ সাড়াও মিলছে। ভারতের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী আর মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরের উদ্দেশে পাঠানো সেই আবেদনে এই ছুটিকে গোটা দেশ জুড়ে আইনগত বৈধতা দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছে কালচার মেশিন। ফলে মাসিকের প্রথম দিনে মহিলাদের ছুটির দাবি অচিরেই ভারতে আরও বড় আকার নিতে চলেছে, সেই সম্ভাবনাও একদম জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে গেছে।