ওয়েব ডেস্কঃ “কুল “ নাম শুনলেই বাঙালীদের জিভে জল আসবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, তাই আজ আলোচনার “Ziziphus Ziziphus “।দক্ষিণ এশিয়ার কণ্টকাকীর্ণ ফল, তবে এটা Chinese date হিসাবে পরিচিত।আর হবে নাই বা কেন? এর কোন ইংলিশ নাম নেই। সাধারণ মাটিতে এই পাতাঝরা গাছ দেখা যায়,শীতকালে পাতা ঝরা আর বসন্তে নতুন পাতায় সেজে ওঠে এই বৃক্ষ। এই কুল বৃক্ষের স্বাভাবিক উচ্চতা ১২-১৩ মিটার। স্বাভাবিকের চেয়ে ডাল পালা বিকাশ করে এই কুল গাছের স্বাভাবিক বিকাশ। ফল কিন্তু আকারে ছোট, প্রায় ২.৫ সেন্টিমিটার। কুল এমনিতে সবুজ হয় কিন্তু পাকার সময় হলুদ, আর পুরো পেকে গেলে তামাটে রঙে নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে। বছরের সেপ্টেম্বর – অক্টোবর মাসে ফুল ধরা থেকে মানুষের অপেক্ষা সেই শীতের কখন কুল পেকে যাবে,আর কাঁচা পাকা মিঠে স্বাদ। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশী কুল জন্মায়। তবে কুলের উৎস বলতে আফ্রিকা হলেও, বর্তমানে ভারত, আফগানিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে। উত্তর ভারতে প্রতি বছর ৮০ – ২০০ কেজি করে ফল পাওয়া যায়। সেখানে ১০ – ২০ বছর পর্যন্ত গাছেই ফলন ভালো হয়।
১০০ গ্রাম কুলে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৭৯ কিলোক্যালরি, শর্করা ২০.২৩ গ্রাম, আমিষ ১.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৭৭.৮৬ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪০ আইইএ, থায়ামিন ০.০২ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লোবিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম, লোহা ০.৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০৮৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম, জিংক ০.০৫ মিলিগ্রাম।
কুল বিভিন্ন রকমের, আপেল কুল, বাউ কুল, নারকেল কুল, দেশী কুল ইত্যাদি।
বাউকুল…
একটি উচ্চফলনশীল ফল,যা প্রতি ৪ মাসে ১০ কেজি কুল ফলন দেয়। এই কুল ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল। এক একটি বাউ কুলের ওজন ৯০ থেকে ১৪০ গ্রাম,কিন্তু বর্তমানে সাধারণ কুলের ওজন ১০ – ৩০ গ্রাম। সাধারণ কুলের জন্মাতে সময় লাগে, দুই থেকে তিন বছর, কিন্তু এই কুল পেতে সময় লাগে মাত্র ছয় মাস। এই কুলের পুষ্টিমূল্য অপার, ৮৫.৯ ভাগ জল, ০.৮ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ১২.৮ ভাগ লৌহ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম শাঁসে ৫৫ ক্যালরি শক্তি, ৭০ আই. ইউ. ক্যারোটিন ও ৫০-১৫০ মিঃ গ্রাঃ ভিটামিন সি বিদ্যমান। এই কুলকে কাজে লাগান হয়। যেমন, এই গাছে, “Techardia laccad “নামক এক প্রকার অতি ক্ষুত্র পোকা লালন করে গালা তৈরী করা যায়।
আপেল কুল…
এটি সাধারণত আপেলের মতো স্বাদ ও গন্ধ বিশিষ্ট। কচি অবস্থায় সবুজ আর পাকা হলে খয়েরী রঙ ধারণ করে। এই কুলের ওজন ৩০ – ৫০ গ্রাম। কুলের কোন বিশেষ জাত নেই, তবে বেশ কিছু অঞ্চলভিত্তিক কুলের নাম পাওয়া যায়, যেমন -কুমিলস্না কুল, সাতড়্গীরা কুল, রাজশাহী কুল, ঢাকা-৯০, নারকেলী কুল, আপেল কুল ইত্যাদি।সাধারণ ভাবে দেড় বছরের কলমের চারা থেকে প্রথম বারে ২০-২৫ কেজি আপেল কুল পাওয়া যায় । তবে পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ থেকে ১৫০-২০০ কেজি কুল পাওয়া সম্ভব, তবে যেন সেটি যথার্থ হয়।
নারকেল কুল…
আকারে বড় এই কুল চাষ লাভ জনক এবং সুস্বাদু। এই কুলের স্বাদ বেশী আর বাগেরহাটে এই ফল প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। বর্তমানে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার এই কুলের চাষ হয়। পরীক্ষণ বলছে নভেম্বরের মাঝবরাবর এই ফলন অধিক। এখানে আশ্বিন মাসে এই চাষ করা হয়, আর মাঘ মাসে তা ভাঙ্গা হয়।
কুলের পুষ্টিগুণ কি কি :
- কুল শরীরকে শক্তি যোগায়।
- কুল ভিটামিন সি এর কাজ করে। আর এই সি, টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্বায় ঘা, ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া রোধ করে।
- কুলের রস ক্যানসার কোষ, টিউমার কোষ ও লিউকেমিয়ার রোধ করে।
- কুল যকৃতের রোগ প্রতিরোধ করে।
- কুলের রস রক্ত পরিশোধন করে। কুল ডায়রিয়া, ক্রমাগত মোটা হয়ে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, ব্রঙ্কাইটিস এর রোগ প্রতিরোধ করে।
- কুল মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে।
- কুল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সম্বৃদ্ধি ঘটায়।
- কুল বয়সের ছাপ রোধ করে।
- কুল ত্বকের রুক্ষতা দূর করে।
- কুল কোষ্ঠকাঠিন্যসহ হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
তবে শীতকালতো চলছেই, তাই আর দেরী নয় – গুণাগুণের হিসাব পাওয়া হয়ে গেলো, তাই উপকারীতা বিষয়কে আগলে নিয়েই কুল গ্রহণ করা শ্রেয়।