আজ আমাদের কলম স্মরণে সারস্বত সাধনঃ প্রথিতযশা নজরুল গীতি শিল্পী “ফিরোজা বেগম “ ( ২৮। ০৭। ১৯৩০ – ৯। ০৯। ২০১৪) শ্রদ্ধা স্বরণ আজ……
“ম্যায় প্রেম ভরে , প্রীত ভরে শুনাউ “ আর “প্রীতি শিখানে আয়া”……
আভিজাত্যের পরিবারের বড়ো হয়েও , তিনি সঙ্গীত সাধনায় বেশী মনোনিবেশ করেন । সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ থেকেই ১৯৪০ এর দশকে তাঁর সঙ্গীত সাধনায় পদার্পণ। ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে তার অল ইন্ডিয়াতে রেডিওতে অনুপ্রবেশ । তিনি মাত্র দশ বছর বয়সে কবি নজরুলের সংস্পর্শে আসেন । পরবর্তী কালে তাঁর কাছেই তালিম গ্রহণ । তাই তাঁর কণ্ঠ সাধনে সেই নজরুল সাধনা আসবে এতে আর বেশী কি ? কমল দাশগুপ্তের সাহচর্যে উর্দু গানের রেকর্ড করেন। আবার তাঁর সহধর্মিনী রূপে আত্মপ্রকাশ ।
কিন্তু নজরুল সংস্পর্শ তাঁকে সঙ্গীত সাধনায় সাম্রাজ্ঞী” করে ।তাই বলে কি ভিন্ন রীতিতে যেতে নেই ? না তা হয় না । তাঁর কণ্ঠ সকল ধারাতেই সাবলীল । একবার তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে পঙ্কজ মল্লিক নিজেই তাঁর কলকাতার বাড়িতে চলে আসেন ।গুণীর মান গুণীরাই বোঝেন ।
অবশ্য সেই সঙ্গে তিনি আব্বাস উদ্দীন ও পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কাছে অল ইন্ডিয়া রেডিও জন্য তালিম নিতেন । রেডিও পাশাপাশি স্টুডিওতেও তিনি বড়ে গোলাম আলি খাঁ সাথে পাশাপাশি গাইতেন । নিজেকে নজরুল গীতির আসনে এক অন্য মাত্রায় দেখতে চেয়েছিলেন তিনি ।কারণ সেই সময় বলা হত যে নজরুল আধুনিক গান লিখেছেন ।একমাত্র তাঁর কণ্ঠ সেই অনন্য “নজরুল গীতি” প্রতিষ্ঠা পায় ।নজরুল আধুনিক কলম এবার “ নজরুলগীতি” উপাধি পায়। এমনকি দু একবার আধুনিক গানের ক্ষেত্রে মাসের সেরা শিল্পী হয়েছিলেন ।
একসময় গ্রামোফোন কোম্পানিগুলি তাঁকে বলেন “ এতো ভালো গলা তোমার ,এইভাবে কেরিয়ার কেউ নষ্ট করে “ তাঁর উওর তাঁর ধ্যান জ্ঞান সাধনা নজরুল গীতি । আর তারপর গেয়ে ওঠেন “গগন গহন সন্ধ্যাতারা “ । তাঁর সাধনা সার্থক হয় এবং গ্রামোফোন কোম্পানি তাঁর গান বাজারে ছাড়তে বাধ্য হয় , তবে তা “ নজরুল গীতি “ রূপে ।তারপরই ,
“শ্যাওনো রাতে “ “ মোর ঘুম ঘোরে “ ,”দূর দ্বীপ বাসিনী “ , “মোমের পুতুল “ তাঁকে স্বর্ণ কণ্ঠী স্বর্ণকালের ফিরোজায় পরিণত করে ।এরপরই ভাগ্য বিপর্যয় – ১৮ বছরে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ।
বিবিধে কণ্ঠ সাধনা ঃ
নজরুল গীতি ছাড়াও তিনি গজল , কাওয়ালি , ভজন বিবিধ ধরনের সঙ্গীতে আত্মনিবিষ্ট হন । তাঁর জীবদ্দশায় ১২টি এলপি , ৪টি ইপি ,৬ টি সিডি ও ২০ টির বেশী অডিও ক্যাসেট প্রকাশ পায় ।
পুরস্কার ও সম্মানে ব্যক্তিত্ব ঃ
স্বাধীনতা পদক , একুশে পদক ,
নেতাজী সুভাষচন্দ্র পুরস্কার ,
সত্যজিৎ পুরস্কার
নজরুল একাডেমি পদক ,
চুরুলিয়া স্বর্ণপদক
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান সূচক ডিলিট
আজকের দিনে এই মহান সারস্বত সাধনার ব্যক্তিত্ত্বের দেহবসান হয় । তবু আমরা তাঁকে স্মরণ করবে হৃদয়ের আসনে “ আয় না বলমা “ —- এই বিখ্যাত সুরে সাধনার আঙ্গিকে সার্থক সারস্বত সাধনাকে শ্রদ্ধা জানাই আজও নিরন্তর ।