হাত দেখা ও কলা বেচা
দেবব্রত সান্যাল
অনুপমকে ওর কলেজের গুরু পাখি পড়া করে শিখিয়েছিলেন, ‘দেখ কখনো বিসনেস আর
প্লেসার এক সাথে মেশাবি না। কলা বেচতে গিয়ে মন দিয়ে কলার ব্যবসাটাই করো , রথ
দেখার সাধ রাখবি না। ধর সচিন , বাচ্চাকালে হয়তো বল পিটিয়ে বেজায় আনন্দ পেতো।
হ্যাঁ আজ ওর সবই ওই খেলার জন্য , কিন্তু আনন্দটা নেই’।
ছোটো বেলায় যেসব কাজকে খুব লোভনীয় মনে হতো , যেমন ট্রাফিক পুলিশ (হাত দেখালেই
গাড়ি দাঁড়িয়ে যায় ), লিফ্ট ম্যান ( কি মজা , সারাদিন লিফটে ), সিনেমা হলে লাইট
দেখানো (যখন ইচ্ছে সিনেমা ) আর বইয়ের দোকান ( সারাদিন গল্পের বই ), বয়স বাড়তেই
তার ব্যবহারিক অসুবিধে গুলো অনুপমের চোখে পড়তে থাকলো , আর চাকরি নিতে হলো
বোকারো স্টিলে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আলাপ হলো উত্তর প্রদেশের রবি প্রতাপ
সিংয়ের সাথে। রবি বলতো ওর ইচ্ছে ছিল চুড়িওয়ালা হবার। মেয়েদের হাত ধরার আর এমন
সুবিধে জনক পেশা আর নেই।
তখন অনুপমের মাথায় ঢুকলো কি করে ব্যবসা আর ফুর্তিটা মেশাতে হয়। ভালোবাসাটা
চুড়ির ব্যবসা নয় , পানি গ্রহণ। শোলে ছবিতে অপরাধী জয় , বীরু আর পুলিশ ঠাকুরের
শখ অভিন্ন। বিপদের সাথে কানামাছি খেলা। তবু একজন হলো পুলিশ আর অন্যরা হলো
চোর। ওই যত মত তত পথ।
অনুপম ছুটি কাটাতে কলকাতায় এসে জানলো ওদের ক্লাসের সবচেয়ে বখাটে ছেলেটি এখন
কালাচার্য শাস্ত্রী। গভীর রাতে কোনো একটা বাংলা চ্যানেলে এসেও জ্ঞান দেয়।
‘ Morning shows the day ‘ কথাটা যে নিদারুণ মিথ্যে সেটা বিকেলে একাধিকবার
বৃষ্টিতে ভিজে অনুপমের জানা হয়ে গেছে। তবু কালীনাথের কালাচার্য হবার রহস্যটা
জানার প্রবল ইচ্ছে হলো। সব ব্যাচেই একজন ‘মোক্ষদা মাসি’ থাকে , সেই সুবিমলের
কাছে খবরটা পাওয়া গেলো। হাত দেখার ওপর একটা ঝোঁক কালুর বরাবরই ছিল। কোনো রকম
ঝুঁকি ছাড়াই মেয়েদের হাত ধরার এমন চান্স কি ছাড়া যায় !
– তোমাকে কেউ বোঝেনা। ( সব মেয়ের তাই ধারণা )
– তুমি তোমার যোগ্য স্বীকৃতি এখনো পাওনি। ( বটেই তো )
– ছোট বেলায় একবার ( বাকি টা বলার আগেই মেয়েটি গড়গড় করে বলে যাবে )
– সাবধানে থেকো , কেউ তোমাকে ঠকাতে পারে ( সে আর বলতে )
এর জন্য ছক জানতে হয়না , ছকবাজি জানলেই যথেষ্ট।
এবার কলা বেচাটাও ওই পথে শুরু হলো।
” সামনের দু তিন বছর তোমার একটা ফাঁড়া আছে। একটা পাথর ধারণ করে দেখতে পারো। ”
এক : বড়ো কিছু হলে। নিয়তি কেন বাধ্যতে। তবে গণনা নির্ভুল।
দুই ও তিন : অল্পের উপর দিয়ে গেলে বা কিছু না হলে , জয় কালাচার্যের জয়।
অনুপমের একটা সমস্যা আছে। কাউকে বলতে পারে না। মা বিয়ে কর বলে চাপ দিলে এড়িয়ে
যেতে হয়। কোনো এক সিদ্ধবাক তাকে বলে দিয়েছে ও নাকি তিরিশের বেশি বাঁচবে না। আর
তিরিশ হতে এখনো তিন মাস দেরি। ‘বিশ্বাস করিনা ঠিক, তবে আর তিনটে মাস দেখে
নেওয়াই ভালো’।
হঠাৎ অনুপমের মনে পড়লো , স্কুলে ভর্তি হবার সময় বয়েসটা একবছর কমিয়ে লেখা
হয়েছিল না ? বার বার মিথ্যেটা লিখতে লিখতে সেটা অনুপমের আর মাথায় ছিল না।
******************
24/06/2017