ওয়েব ডেস্কঃ মঙ্গলবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে ভারতবর্ষের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন রামনাথ কোবিন্দ। আজ ১২.১৫ থেকে শুরু হয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান । আজ থেকেই রাইসিনা হিলসের অধিবাসী হলেন রামনাথ কোবিন্দ। রাষ্ট্রপতি নির্বচনে ৬৫. ৬৫% ভোট পেয়ে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিহারের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিশিষ্ঠ আইনজীবী । বিরোধী মুখ মীরা কুমারকে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন কোবিন্দ। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
আজ ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্থলাভিষিক্ত হলেন যিনি, সেই নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে নিয়ে খবর ২৪ ঘন্টার তরফ থেকে রইল দশটি তথ্য, আসুন দেখে নেওয়া যাক –
১. ভারতবর্ষের উত্তরপ্রদেশের কানপুর দেহাত জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম পারোঙ্খে এক দলিত কোলি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রামনাথ কোবিন্দ। এমনই অবস্থা ছিল ছোটবেলায় বর্ষার সময় ঘরে জলে ভেসে যেত। কোবিন্দকে ভাইবোনদের সাথে ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। এখন অবশ্য তিনি তাঁর গ্রামের পৈতৃক ভিটেবাড়িটি গ্রামবাসীদের উদ্দেশে দান করে দিয়েছেন। সেই স্থানটিকে এখন ওই গ্রামের বরাতঘর (বিয়েবাড়ি বা বরযাত্রীদের রাখার স্থান) হিসেবে বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয় আনন্দ অনুষ্ঠানের জন্য।
২. পরবর্তীকালে বিজেপি-তে যোগদান করার পূর্বে তিনি ১৯৭৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব বা প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন। যদিও তিনি উকিল হিসেবেই প্রাকটিস করতেন এবং গরীব মানুষের বিচারের জন্য একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।
৩. ভারতবর্ষের আমলারা যে মর্যাদাপূর্ণ ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেন, মি কোবিন্দ সেই পরীক্ষায় স্বসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু আইএএস সার্ভিসের বদলে অ্যালায়েড সার্ভিসে মনোনীত হওয়ায় সে চাকরি তিনি আর করেননি।
৪. উত্তরপ্রদেশ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। এখান থেকে দেশের মোট নয়জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যদিও উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন রামনাথ কোবিন্দ। মি কোবিন্দের আগে এ রাজ্যের কেউ রাষ্ট্রপতি হননি!
৫. উত্তরপ্রদেশে যে সময় দলিত নেত্রী হিসেবে মায়াবতীর যখন দ্রুত উত্থান হয়েছিল সেই সময় বিজেপি রামনাথ কোবিন্দকে মায়াবতীর পাল্টা দলিত মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল। বছরকয়েক আগেও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং রাজ্যের দলিত এলাকাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারের সময় সবসময় মি. কোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
৬. লোকসভার ভোটে কোনও তিনি জিততে পারেননি। তবুও রামনাথ কোবিন্দ দুই বার ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা বারো বছর তিনি রাজ্যসভার এমপি ছিলেন।
৭. রাজনীতির জগতে তিনি বিজেপিতে যোগদান করার পর দলিত শ্রেণির একজন নেতা হিসেবে ওনাকে পোট্রেট করা হয়। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপির দলিত মোর্চার প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
৮. ২০১৫ সালের ৮ অগাস্ট তাকে বিহারের রাজ্যপাল (গভর্নর) পদে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল।
৯. রামনাথ কোবিন্দ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে ভাষণও দিয়েছিলেন।
১০. নিয়তির পরিহাসই বলি বা সমাপতন, মাত্র মাসদেড়েক আগে বিহারের রাজ্যপাল থাকাকালীন সপরিবারে হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে গিয়ে মি. কোবিন্দ সিমলার কাছে রাষ্ট্রপতির সামার রিট্রিটে ঢুকতে চেয়েছিলেন। যদিও রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুমতি নেই, এই যুক্তিতে রক্ষীরা তাকে গেট থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতেন না রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে কয়েকদিনের মধ্যেই তার নামই ঘোষণা করা হচ্ছে। আর এখন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সিমলার ওই রাজকীয় প্রাসাদই হবে তার গ্রীষ্মকালীন অবকাশযাপনের ঠিকানা – যার রাজসীয় গেট থেকে তাকে কিছুদিন পূর্বেই ফিরে আসতে হয়েছিল, এখন তিনি সেই স্থানের প্রধান। ভারতের এক নম্বর জনসাধারণ।