এতদিন ফলের রাজা হিসেবে আপেল বহুল পরিচিত ছিল। কিন্তু আপেলের এই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা বর্তমানে ছিনয়ে নিয়েছে বিভিন্ন ধরণের বাদাম। সম্প্রতি এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে মানব শরীরে আপেলের থেকে বাদামের পুষ্টিগত মান অনেক বেশী। আমদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের জরুরী প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও তেলের উৎস হল বাদাম। পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব। সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে অল্প খরচে নিজেকে চিকিৎসক দূরে রাখতে বাদামের কোনও বিকল্প হয় না । একাধিক খনিজ এবং ভিটামিনে পরিপূর্ণ এই খাবারটি শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে এমন খেল দেখাতে শুরু করে যে একাদিক মারণ রোগ তো দূরে থাকতে বাধ্য হয়ই, উপরন্তু শরীর ও মন এতো চনমনে হয়ে ওঠে যে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আয়ুও বৃদ্ধি পায়। এতটা জানার পর নিশ্চয় এবার বাদামের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করছে? চলুন, তাহলে আর ্দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক বাদাম নামক “সুপার ফুড” টির বিভিন্ন সুফল সম্পর্কে………
১. শরীরে ব্যপক পুষ্টির যোগানঃ
বাদাম নামক প্রকৃতিক উপাদনটির শরীরে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো একাধিক ক্রনিক রোগকে দূরে রাখতেও এই উপাদানগুলি সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করে। ফলে এই খাবারটি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় থাকে না।
২. শরীরে ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করেঃ
এটি হল এমন একটি উপাদান যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে লেগে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
৩. নতুন কোষ তৈরী হয় ঃ
বাদামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরে যাতে কোনও ভাবে ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর তার কোনও প্রভাব পরে না।
৪. রক্ত-চাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
শুধু ডায়াবেটিস নয়, বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে শরীরে এই খনিজটির ঘাটতি দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মারাত্মক বেড়ে জায়। আর বেশি দিন যদি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে হঠাৎ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই দেহে যাতে কোনও সময় ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
৫. ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিকদের নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৫-৩৮ শতাংশ কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা সময় থাকতে বাদামকে কাজে লাগাতে শুরু করে দিন। দেখবেন উপকার মিলবে।
৬. খারাপ কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
প্রতিদিনের ডায়েটে বাদামের অন্তর্ভুক্তি ঘটান, তাহলেই দেখবেন হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। আসলে বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান শরীরে অন্দরে ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।