Home ব্লগবাজি জীবনের খোঁজে ~ প্রশান্ত কুমার ঘোষ

জীবনের খোঁজে ~ প্রশান্ত কুমার ঘোষ

জীবনের খোঁজে    ~    প্রশান্ত কুমার ঘোষ
জীবনের খোঁজে
****************
প্রশান্ত কুমার ঘোষ

        পদ্মাবতী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করেন।মৃতুর সময় রেখে যান
৭৮ বছরের স্বামী আর দুই ছেলেকে।দুই ছেলেই বিবাহিত।তাদের নাতি নাতনিদের ও সংসার
হয়ে গেছে ছেলে,বৌ,নাতি,নাতনিরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।বাড়ির আঁস্তাকুড়ের খবর
রাখার মন ও সময় তাদের নেই।একাকী জীবনে হতাশার জলসায় হতাশ্বাস।খোলা বাতাসে রাখা
প্রদীপের মতই তার নিভু নিভু জীবন।
                   পদ্মাবতীর বোন দুর্গা।ফুলেল সুবাসে সে মদ মত্ত হতে
পারেনি। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর দাদা-বৌদির কাছে রাস্তার ঘাসের মতই থাকতে
হয়।তার  গতরের কদর  থাকলেও মনের ঘরে এক চিলতে জায়গা নেই। অথৈ জলে অসহায়
পিপিলিকা যেমন একটা খড়কুটো কে আশ্রয় করে বাঁচবার চেষ্টা চালায় তেমনি পঞ্চান্ন
বছরের অতৃপ্ত দুর্গাএকটা আশ্রয়ের অপেক্ষায়।
                             দিদির মৃত্যুর খবর শুনেই ছুটে আসে দুর্গা।আত্মার
শান্তি অনুষ্টান শেষ হয়ে গেলেও আর বাপের বাড়ি ফিরলেননা।তিনি জামাই বাবুর কাছেই
থাকেন।জামাই বাবুর সেবা শুশ্রূষা করেই অতৃপ্ত হৃদয়ে তৃপ্তির স্বাদ পেতে
থাকেন।কিন্তু এভাবেই আর কতদিন থাকা যাই।ছেলে বউমাদের আপত্তি এত দিন এখানে না
থেকে মাসি বাপের বাড়িতেই ফিরে যাক।বেঁকে বসেন  ক্ষুদিরাম।এখানেই থাকবে
প্রয়োজনে আমি ওকে স্বীকৃতি দিয়ে সসম্মানে আমার কাছে রাখব।বনের শুষ্ক পাতাতে
অগ্নিসংযোগ করলে যেমন ভয়াবহ আকার ধারণ করে তেমনি হল ক্ষুদিরাম ও দুর্গার
জীবনে।মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে স্থানীয় নেতাদের
দ্বারস্থ হন ক্ষুদিরাম।বাঁচার অধিকার,পরিবার গঠনের অধিকার পৌর অধিকার।এই
অধিকারে হস্তক্ষেপ নয় জানিয়ে দেন স্থানীয় পঞ্চায়েত।অনেক বুঝানোর পরেও এ বিয়ে
মানতে রাজি নয় পদ্মাবতীর পরিবার।অবশেষে স্থানীয় মানুষের চেষ্টায় স্থানীয়
বাজারে ঘটা করে বিয়ের আসর বসে।সকল নেতা নেত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দা একত্রিত হয়ে
মহাসমারোহে বিয়ের ব্যবস্থা হয়।এক বর্ষীয়ান বিজ্ঞ ব্যক্তি বেদ মন্ত্র পাঠ
করান।শুভদৃষ্টি,মালা বদল,সিঁদুর দান ,উলু ধ্বনি প্রভৃতি আনুষঙ্গিক বিষয় হৃদয়ে
গেঁথে রাখার মত করেই সম্পন্ন হল।প্রত্যেকে সাধ্যমত অর্থ,গহনা ও ধান দুর্বার
ছিটা দিয়ে নব দম্পতি কে  আশীর্বাদ করেন।একটি মারতি ভাড়া করে বর কনেকে নিয়ে
যাওয়া হয় বাড়িতে।বাড়ির দরজা বন্ধ।এখানে থাকতে দেয়া যাবে না।পদ্মাবতীর পরিবার
এক জোট।সমস্ত সম্পত্তি করে দিতে হবে দুই ছেলের নামে এই দাবিতে অনড়
ছেলেরা।বরযাত্রীরা বুঝাতে থাকেন একদিন বসে সব ঠিক করা হবে,এখন দম্পতিকে বাড়িতে
আশ্রয় দেয়া হোক।পরিস্থিতি জটিল হয়,বাকবিতণ্ডার হাত ধরে হাতাহাতি
শুরু।মুঠোফোনের দৌলতে পুলিশের কাছে খবর গেলে জিপ ভর্তি পুলিশ ঘটনাস্থলে
আসেন।পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা দুই পক্ষের কাছ থেকে সব কিছু শুনেন।
ছেলেরা বলেন,আমাদের নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিলে বাড়িতে থাকতে আপত্তি
করবনা।আমরা বৌ ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব ?
ক্ষুদিরাম বাবু বলেন,আমি আটাত্তর,ও পঞ্চান্ন নতুন ভাবনার কিছুই নেই।শুধু একটু
অবলম্বন,শেষ কটা দিন একটু শান্তিতে থাকা,একটু শুশ্রূষা পাওয়া।
পুলিশ জানিয়ে দেন,লেখালিখি নয় ওনার বাড়িতে উনি সপরিবারেই  থাকবেন।ছেলেরা
বলেন,আমরা ?
পুলিশ বলেন,আপনারা ওনার পরিবারেরই সদস্য তাই আপনারাও...।
এক পুলিশ অফিসার বলেন,মাসি তো মা।আপনাদের ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছেন ওনাকে
মায়ের আসনে বসিয়ে শ্রদ্ধা করুন;স্নেহের প্লাবনে ধৌত হবেন,সুখের মোড়কে দিন যাপন
করবেন,আবার বৃদ্ধ পিতাকে দেখাশোনার যে ভাগাভাগি সেটাও করতে হবেনা,নতুন মা
আছেন,আপনারা নিশ্চিন্তেই রাতে ঘুমাবেন,দিনে কর্মে ব্যস্ত থাকবেন।
পুলিশ আরও জানিয়ে দেয় নব দম্পত্তির কোন অসুবিধা যাতে না হয় তা আপনাদেরই লক্ষ্য
রাখতে হবে।ওদের অসুবিধা হলে আমাদের আবারও আসতে হবে সেটিই ক্যান্সার।
                                                         প্রশান্ত: 19/05/2017

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here