ওয়েব ডেস্কঃ বৃদ্ধাশ্রমের উদ্বোধনে একবার মহাত্মা গান্ধী গিয়েছেন। সকলেই প্রত্যাশা মত ওঁনাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি সেদিন যা বলেছিলেন তার সারমর্ম – আজ নয়, সেইদিন তিনি ভাল কিছু শোনাবেন, যেদিন এই সমস্ত বৃদ্ধাশ্রমগুলি বন্ধ হবে। প্রকৃত অর্থেই, যাঁরা নিজেদের সারাজীবন উৎসর্গ করে শুধু সন্তান-সন্ততিকে, পরিবারের ভালো চান অবিরত, বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের সংসার তথা মনের পরিসরে কী সত্যিই জায়গা করে দেওয়া যায় না? তবে এসব ভাবনা তো সকলের নয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সকলে গুরুজনদের প্রতি ভাবনা বুঝতে পারেন না।
আবার অন্যদিকে যাদের সন্তানরা বিদেশে থাকেন বা যারা নিঃসন্তান, তাঁরা চান স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে শেষ বয়সটুকু অতিবাহিত করতে। কাজেই এই দুই ক্ষেত্রেই প্রবীণ নাগরিকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এবং তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সমস্ত দেশেই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এইসব বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা তথা দেখভালের জন্য প্রচুর লোকজনও দরকার। তাই এই বিষয় নিয়ে এখন পড়াশোনারও চাহিদা রয়েছে। জেরেন্টোলজি পড়ে এখন অনেকেই এ ধরনের কাজে নিজেদের যুক্ত করছেন।
মূল বিষয়…..
মধ্যবয়স পেরিয়ে বৃদ্ধবয়সের দিকে এগোনোর সময় মানুষের মধ্যে কী ধরনের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তন আসে, তাই নিয়েই চর্চা করা হয় জেরেন্টোলজি-তে। আধুনিক যুগে শরীর সুস্থ রাখতে ওষুধ-পথ্যের পাশাপাশি উপযুক্ত সেবা যত্নের বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই পরিবর্তিত মানসিকতার প্রবীণ এবং অশীতিপর মানুষদের কীভাবে সেবা যত্নের মাধ্যমে কতটা সুস্থ সবল রাখা যায়, সেই বিষয়টা পড়ানো হয় জেরন্টোলজিতে।
পাঠ্যক্রম…..
যে সব প্রতিষ্ঠান জেরেন্টোলজি কোর্স করিয়ে থাকে, তাদের মূল উদ্দেশ্যই হল প্রবীণদের সঙ্গে সঠিক আচার-আচরণ এবং ব্যবহারের দিকটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সুশিক্ষিত করে তোলা। তাঁদের জন্য উপযোগী জীবন প্রণালী সুরক্ষিত করতে মানবাধিকার বিষয়টিকেও পাঠ্যক্রমে রাখা হয়।
কোর্সের পাঠ্যসূচীতে জেরেন্টোলজি বিষয়ে একটা সামগ্রিক ধারণা দেওয়া ছাড়াও রয়েছে বৃদ্ধ বয়সের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার পাঠ, পরিষেবার পদ্ধতি, রকমফের ও ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্টের পাঠ, তাঁদের জীবনযাত্রাকে কতরকমভাবে আরও উন্নত করা যায়, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বয়স্কদের সামলানোর পদ্ধতি, প্রবীণদের মন ভাল রাখতে কী কী ধরনের সৃজনকলার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, কিভাবে গণমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে এই বিষয়ে আরও সচেতনতা বাড়ানো যায়, বৃদ্ধ নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা এবং যাবতীয় বিষয়ে কী কী আইন আছে, মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নানান বিষয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বৃদ্ধাবাসে গিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকে।
কাজের সুযোগ……
আমাদের দেশে এখন বয়স্কদের নিয়ে চর্চার বিষয়টি আগের থেকে বেশি জনপ্রিয়। দেশে বহু শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানই তাই এখন এই জেরেন্টোলজিকে পাঠ্যক্রমের আওতাভুক্ত করেছে।
তবে এখনও জেরেন্টোলজিতে ডিগ্রি পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই এ দেশে। ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করে বিভিন্ন বদ্ধাবাসে পরিষেবামূলক কাজে অথবা পরিচালনা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করা যায়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কাজ করা যায়। বিনিয়োগ করার মত অর্থ সামর্থ্য থাকলে নিজস্ব বৃদ্ধাবাসও খোলা যেতে পারে।
কলকাতায় যেখানে পড়া যায়:
ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট অব জেরেন্টোলজি
ই-১, সোপান কুটির, ৫৩ বি, ড. এস সি ব্যানার্জি রোড, কলকাতা – ৭০০০১০
ফোন – +৯১ – ৩৩-২৩৭০ ১৪৩৭ / ২৩৬৩ ৩৩৩৩।
ইমেল – cmig@rediffmail.com
ওয়েবসাইট – www.cmig.in
এছাড়াও দেশের মধ্যে :–
ইনস্টিটিউট অব হোম ইকোনমিকস (আইএইচই)
এফ-৪, হউজ খাস, ব্লক এফ, পুলিশ কলোনি, নতুন দিল্লি – ১১০০১৬
ফোন ০১১ ২৬৫৩ ২৪০২
ওয়েবসাইট – www.ihe-du.com/
ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ডিফেন্স (এনআইএসডি)
ওয়েস্ট ব্লক-১, উইং-৭, এক তলা, আর.কে. পুরাম, নতুন দিল্লি – ১১০০৬৬
ফোন +৯১ ১১ ২৬১০০০৫৮, ২৬১০৬৩২৫
টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স
ভি এন পূরব মার্গ, দেওনার, মুম্বই – ৪০০০৮৮
ফোন – ৯১ ২২ ২৫৫২ ৫০০০ / ৫৫০০
ওয়েবসাইট www.tiss.edu/
এছাড়াও যোগাযোগ করতে পারেন…..
জেরিয়াটি সোস্যাইটি অব ইন্ডিয়া
কে-৪৯, গ্রিন পার্ক মেন, নতুন দিল্লি – ১১০০১৬
ফোন – ৯১ ১১ ২৬৮৬৫৯১৬
ওয়েবসাইট www.geriatricindia.com