Home ব্লগবাজি পথ — ৩০ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩০ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩০ ~    হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ------- ৩০
-------------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




     আমি বাবার দিকের দাদু ঠাকুমাকে যেমন কাছে পাই নি, ঠিক সেরকম মায়ের
পক্ষের দাদু দিদিমা থেকেও বঞ্চিত। অবশ্য মায়ের বাবাকে জীবনের শেষ ক'টা দিন
দেখেছিলাম। তখন আমি খুবই ছোট। কিছুই প্রায় মনে নেই। তাই দাদুকে আমি দেখেছি বলে
জোরের সঙ্গে বলতে পারছি না।
     দাদু ঠাকুমাকে কাছে পেলে অবশ্যই বাবার ছেলেবেলা নিয়ে অনেক কিছু জানতে
চাইতাম। মানুষটাকে আমি এতটাই অন্তর্মুখী দেখেছি যে, তার ছেলেবেলা সম্পর্কে
আমার কৌতূহলের সীমা পরিসীমা নেই। মা আমার কৌতুহলের অনেকটাই নিরসন করেছেন।
     মা বৌ হয়ে এবাড়িতে আসার পর থেকে সে তার শ্বশুর শাশুড়ির কাছ থেকে বাবা
সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারে। আমি সময় পেলেই মায়ের কাছে বাবার সম্পর্কে জানতে
চাইতাম।
     বাবা যুবক বয়সে একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তখনও তার মা বাবা বেঁচে।
খোঁজ খোঁজ। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না।
     বাবা গিয়ে উঠল গুরু ওঙ্কারনাথ ঠাকুর কাছে। তখনও ওঙ্কারনাথের জনপ্রিয়তা
গগনচুম্বী হয়ে ওঠে নি। সংসার থাকলে তাকে আর ওখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাই
বাবা ওখানে গিয়ে জানাল তার বাবা মা কেউ নেই। খুব সহজেই বাবা সেখানে আশ্রয়
পেয়ে গেল। বাবা নিজ গুনে সকলের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠল। বিশেষ করে গুরুদেবের।
বাবা তাঁর সঙ্গেই খেত। খাওয়ার শেষে গুরুদেব জটা খুলে দিতেন।বাবা সেই জটার ওপর
শুয়ে ঘুমাত।
     দাদু একদিন জানতে পারলেন তার ছেলে ওঙ্কারনাথের আশ্রমে। সাথে সাথে দাদু
গুরুদেবকে চিঠি লিখলেন। চিঠি হাতে পেয়ে গুরুদেব রেগে গিয়ে খড়মে করে বাবাকে
মেরেছিলেন।
     বাবা এমনই একটা মানুষ যে, তার সংসার করার মোটেই ইচ্ছা ছিল না। দাদু
একপ্রকার জোর করেই বাবাকে বিয়েতে বসায়। বড় হয়ে দেখেছি সংসারের প্রতি একটা
তীব্র অনীহা। সংসারের সবকিছুর মধ্যে থেকেও তিনি নেই। একটা জায়গার পর থেকে
তাকে যেন আর ধরা যেত না। সারাদিনে আমার সঙ্গে দু'টো কি একটা কথা বলত। কিন্তু
ওই সামান্য কথাতেই মনে হতো আমার ওপর তার সীমাহীন সমর্থন। বন্ধুর মতো সবসময়
আমার পাশে পাশে আছে।
হরিৎ : 05/07/2017
                       *****************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here