“প্রকৃতির গুপ্তধন ভোরের আলোকিত পাহাড় ভূমি “……
আজ আমরা অরুণাচলের দিকে। পূজোর ছুটি এখন। মা এখন শ্বশুরকুলে ফিরেছেন, আর আমাদের মন বলছে একটু ঘুরে আসি। সেই নিত্য কাজের ব্যস্ত জীবন থেকে সামান্য হলেও তো মুক্ত তাই নয় কি? আমি তাই তো কলম নিয়ে সেই পথের সন্ধান দিতে এসেছি। এখন প্রশ্ন হতেই পারে পাহাড় কেন? উওর আমি বলছি, আবেগের পাহাড়, চকমকে নদীর সাথে এক হতে ইচ্ছা করছে। তাই হিমালয়ের পাদদেশকেই মনের কলমে এঁকে নিলাম আমরা।
আচ্ছা প্রকৃতির কোলে অবস্থানের ঠিকানা চাই তো? তানাহলে অবস্থানের মাহাত্ম্য বোঝাই কি করে? উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। এর দক্ষিণে ভারতের অঙ্গরাজ্য অসম, পশ্চিমে ভুটান, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে গণচীন, এবং পূর্বে মিয়ানমার।
অবস্থান বোঝালাম, কিন্তু অবস্থানের প্রাকৃতিক দেহ থাকবে না তবে তো অকর্ষণ ই থাকে না? কারণ অবয়ব ছাড়া, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গুরুত্ব কি থাকে? কখনই নয় – তাই তো ব্রহ্মপুত্রের সাবলীল ধারা হিমালয়ের বার্তা নিয়ে আসে। জলবায়ু ও উপক্রান্তীয় প্রদেশ নিয়েই তো অরুণাচল প্রদেশ।যতই উপরে উঠব ততই তাপ হ্রাস। আর বৃষ্টিপাত তো রয়েছে,তবে এমন মনোরম পরিবেশে না গিয়ে কি আর থাকা যায়? আরে যাব কি করে? পথ টাও তো জানা দরকার? আসুন তবে, পথের চলা মাধ্যমগুলোকে রপ্ত করি,
বিমান পথ……
বিমান হোক বা রেল, তাওয়াং যেতে হলে আপনাকে গৌহাটি যেতে হবে। উওর ভারতের সে কোন জায়গায় যেতে হলে গৌহাটি হয়ে যেতে হ। প্রায় সবকটি বিমান সংস্থার বিমান কলকাতা থেকে ১ ঘন্টা ১০ মিনিটে আপনাকে গৌহাটি পৌঁছে দেবে।
এবার একটা আনন্দের কথা বলি, আপনারা কি জানেন যে তাওয়াং এর পারিপার্শ্বিক স্থানগুলি যেতে স্বল্প খরচে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে একটা কথা বলে রাখি ২৩ আসনের হেলিকপ্টার কিন্তু বেশী। আর তিনটি করে করি বসার সারি, তাই বন্ধুবৎসল হলে বেশ আনন্দেই ভ্রমণ করা যাবে।
তারপর চারদিকে পাহাড়, বাড়ি ঘর, মন্দির যেন মাথা উঁচু করে অতিথি আপ্যায়ন করছে। আর দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৃতি যেন ভিন দেশ থেকে আসা অতিথিদের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে আছে, বলতে চাইছে এটাই তার প্রদেশের সম্মান।
জানেন কি হেলিকপ্টার এখানের আবহাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষ এতটাই সজাগ, যে এখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটে না। আবহাওয়া বুঝে খেচর হয় হেলিকপ্টার।
তাওয়াং ঘুরে দেখবেন বুঝবেন শহরগুলির উচ্চতা দশ থেকে এগারো হাজার ফুট।
আর রেল পথ মাধ্যম জানতে চান?
ভারতীয় রেলওয়ের উত্তর পূর্ব রেল জোন দ্বারা আসামের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটি দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত। গুয়াহাটি উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রেলের সদর দপ্তর। ভ্রমণকারীরা রেল পথের মাধ্যমে আসামে সুবিধাজনকভাবে পৌঁছতে পারে কারণ এটি ভারতের সব প্রধান শহরগুলির সাথে রেলপথ দ্বারা সু-সংযুক্ত।
সড়ক পথে আছে যাতায়াতের সুবিন্যস্তকরণ জাল –
৩৭-নং, ৩১-নং, ৪০-নং, ৩৮-নং ও ৫২-নং জাতীয় সড়ক আসাম ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে।
- মাধ্যম তো জানলাম, তবে দর্শনীয় স্থান জানতে তো হবে, আসুন তবে জেনে নি –
অরুণাচল প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন
মৌলিং জাতীয় উদ্যান
ভীষ্মকনগর দুর্গ
বৌদ্ধ গুম্ফা
নামদফা জাতীয় উদ্যান
মালিনীথান
৭ থেকে ৮ শতাব্দী পুরানো এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। প্রতীক, নকশা, স্তম্ভ, যা অতীতের স্মৃতিচারণ করায়।
টিপি অর্কেডারিয়াম
পরশুরাম কুন্ড
প্রাচীন পুরাণের আখ্যানে পরশুরাম কুন্ড। এখানে পরশুরাম তাঁর মাতৃহত্যার পাপ ধুয়ে ফেলেছিলেন। জানুয়ারি মাসের পরশুরামের মেলায় দূরের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
বৌদ্ধমন্দিররের ঝকঝকে তিব্বতী প্রভাব অনন্য।
“তাওয়াং মনাস্ট্রি ৪০০ বছরের পুরানো। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বুড্ডিস্ট মনাস্ট্রি । এক সময় টাসি বলল, বৌদ্ধদের প্রধান পুরোহিতকে দালাই লামা বলা হয়। বলা হয় যে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দালাই লামা একজনই, যিনি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় পুনর্জন্ম নেন। তাই প্রধান পুরোহিতের নাম সব সময় দালাই লামা। আর সময় হিসেব অনুসারে তাদেরকে দালাই লামা ১, ২, ৩ এভাবে সম্বোধন করা হয়। বর্তমানে দালাই লামা ১৪-এর সময় চলছে।
তবে শুধু কি ইতিহাস, প্রচলিত মত কেও গুরুত্ব দিতে হবে তো। আসুন তবে দেখি, জনগণ কি বলে –
মোবাস্ট্রি নির্বাচনের জন্য স্থান নির্বাচন করতে গিয়ে মেরাগ লামা তার ঘোড়া ছেড়ে দেন। ঘোড়া যে স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে স্থান মনাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচিত হয়। হয়ত সে কারণেই এই স্থানের নামকরণও করা হয়েছে ‘তাওয়াং’ – যার অর্থ হচ্ছে ‘চুজেন হর্স বা পছন্দের ঘোড়া’।
জওহরলাল নেহেরু রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম –
ঐশ্বর্যশালী সমাজের অতীত কথন, বাদ্যযন্ত্র,
বস্ত্র, অলংকার, জাতীয় জীবনের অতীত গৌরব এর প্রদর্শন এখানে উল্লেখ্য।
ইটাদুর্গে অহম শাসকের দ্বারা গঠিত তিন পক্ষের তিন দরজার দুর্গ এটি। এখানে প্রায় ৮০ লক্ষ ইট এবং ৪৫ ঘনমিটার পাথর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আকাশগঙ্গা –
মহাদেব যখন তাঁর স্ত্রী পার্বতীর মৃতদেহ বহন করছিলেন, তখন প্রভু বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে তার শরীরকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেন। তা থেকেই স্বর্গীয় স্থানের সৃষ্টি হয়।
ঢোলা-সাদিয়া সেতু :
অসমের একটি সেতু।অসমের লোহিত নদীর উপর খুব শীঘ্রই উদ্বোধন হবে ভারতের তথা দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম এই সেতুর।
এছাড়া রয়েছে অভয়ারণ্য :
পাখুই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সেইজোসাইটানগর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, নাহারলাগুনডঃ ডি ইরিং মেমোরিয়াল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পাসিঘাটমিহাও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রোইংকামলাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মিয়াওঈগল নেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সেইজোসাকেন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, আলোং,
এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে নিশ্চয় ভুলবেন না। তবে দেখা যাক কতপ্রকার পাখি দেখতে পারি আমরা,
যেমন – টেমিঙ্কের ট্র্যাগোপান, স্ক্ল্যাটারস মোনাল, সাদা ডানার কাষ্ঠ হাঁস, মিশমি রেন, বেঙ্গল ফ্