Home পাঁচমিশালি ইতিহাসকে বুকে নিয়ে, দীর্ঘ ৫০০০ বছর জীবিত আছেন এই ব্যাক্তি ~ জেনে নিন ইনি কে!!

ইতিহাসকে বুকে নিয়ে, দীর্ঘ ৫০০০ বছর জীবিত আছেন এই ব্যাক্তি ~ জেনে নিন ইনি কে!!

ইতিহাসকে বুকে নিয়ে, দীর্ঘ ৫০০০ বছর জীবিত আছেন এই ব্যাক্তি ~ জেনে নিন ইনি কে!!

আপনার ধারণাতে কী আসবে আদৌ যে, কোন রক্তমাংসের শরীরের মানুষ ৫০০০ বছর বেঁচে থাকতে পারে ? কিন্তু সংবাদ 24 ঘণ্টার এই খবরটি পড়ে আপনি শুধুমাত্র যে অবাক হয়ে যাবেন তাই নয় বরং পাঁচ হাজার বছর ধরে কোন এক ব্যক্তি জীবিত আছেন এবং বর্তমানেও তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জেনে সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে যাবেন। আমরা আপনাকে মহাভারতের অশ্বত্থামা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য জানাতে চলেছি যেগুলির সম্পর্কে আপনি আজ পর্যন্ত অজ্ঞাতই থেকে গেছিলেন।

Image result for asirgarh ashwathama

মহাভারতের একটি অন্যতম বিখ্যাত চরিত্র অশ্বত্থামা। পরাক্রমশালী যোদ্ধা হিসাবে তাঁর বীরত্ব সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন। নিজের পিতার মৃত্যুর বদলা নিতে অশ্বথামা বেড়িয়েছিলেন এবং তাঁর এক ভুলের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা অভিশপ্ত হয়ে তিনি পাঁচ হাজার বছর ধরে মৃত্যু রহিত অবস্থায় অমর হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।এরকম মনে করা হয় যে,মধ্যপ্রদেশে বুরহানপুরের আসিরগড় কেল্লার শিব মন্দিরে রোজ ভোরবেলায় সবার অলক্ষ্যে দিনের সর্বপ্রথম পুজো করতে আসেন অশ্বত্থামা।

Image result for asirgarh ashwathama

অশ্বত্থামা মহাভারতের যুগে অর্থাৎ দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র এবং কৌরব বংশের রাজগুরু কৃপাচার্যের ভাগনা ছিলেন তিনি। গুরু দ্রোণাচার্য কৌরব এবং পান্ডবদের অস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী করে তুলেছিলেন। মহাভারতের যুদ্ধের সময় হস্তিনাপুর রাজ্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হবার কারণে দ্রোণাচার্য কৌরবদের পক্ষ নিয়ে পান্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। পান্ডব সেনারা দ্রোণ ও অশ্বত্থামা অর্থাৎ পিতা এবং পুত্রের দ্বারা বারংবার বিধ্বস্ত অবস্থায় পৌঁছে অত্যন্ত নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন এবং তাই দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্রোণাচার্যকে বধ করবার জন্য একটি কৌশল গ্রহণ করেন।

Image result for mahabharat ashwathama dronacharya

ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির কখনোই মিথ্যা কথা বলতেন না এবং তাঁর সত্যনিষ্ঠা সম্পর্কে সকলেই অবহিত ছিলেন। অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে তাঁকে ব্যবহার করে, কৌশলগতভাবে দ্রোণাচার্যকে শ্রীকৃষ্ণের সহায়তায় পাণ্ডবরা বধ করেন। দ্রোণাচার্য ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির কে অশ্বত্থামার মৃত্যুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে যুধিষ্ঠির জবাব দেন “অশ্বত্থামা হত ইতি গজ ” অর্থাৎ “অশ্বথামা মারা গেছেন কিন্তু তা নর নাকি হস্তী তা জানা নেই।” এই খবর শুনে দ্রোণাচার্য অস্ত্রত্যাগ করে কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় যুদ্ধভূমিতে বসে পড়েন এবং সেই অবসরে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন তাকে হত্যা করেন।

Image result for mahabharat ashwathama dronacharya

পিতার এই মৃত্যু সংবাদ অশ্বত্থামাকে অত্যন্ত বিচলিত করে। পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবার জন্য অশ্বত্থামা সকল পাণ্ডব পুত্রদের হত্যা করেন এবং উত্তরার গর্ভে প্রতিপালিত হওয়া অভিমন্যুর পুত্র পরিক্ষিতকে হত্যার জন্য ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং পরিক্ষিতকে রক্ষা করেন। শাস্তি স্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ অশ্বত্থামার শিরস্থিত মণি তুলে ফেলে তাকে তেজহীন করে দেন এবং তাঁকে অমরত্ত্বের অভিশাপ দেন।

Image result for asirgarh ashwathama

তার পর থেকেই যুগ যুগান্তর ধরে সেই অভিশাপ বহন করে চলেছেন অশ্বত্থামা। বলা হয় যে আসিড়গার ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের জামালপুর শহরের নর্মদা নদীর কিনারে অশ্বত্থামাকে ঘুরতে দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনের মতানুসারে কখনো কখনো নিজের মাথায় শ্রীকৃষ্ণকৃত ঘায়ের যন্ত্রণার উপশম করার জন্য এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য তিনি স্থানীয় লোকেদের থেকে হলুদ আর তেল চেয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ বলেন অন্ধকারে পুকুরের ধারে কোন অদেখা ব্যক্তি তাকে ধাক্কা দিয়েছিল মাছ ধরার সময় যে হয়তো ওই পুকুরের আশেপাশে কোন লোকজনের আসা পছন্দ করে না। গ্রামের বৃদ্ধ ব্যক্তিরা এই কথা মানেন যে যারা অশ্বত্থামাকে একবার দেখে নেন তারা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যান।

কেল্লা স্থিত পুকুরে স্নান করে অশ্বত্থামা শিব মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে যান। আশ্চর্যের বিষয় হল পাহাড়ের শিখরে অবস্থিত পুকুরটি বোরহানপুরের প্রচণ্ড গরমেও কখনও শুকোয় না। এই পুকুরের একটু আগে গুপ্তেশ্বর মহাদেবের মন্দির। এই মন্দিরের চারদিক সুউচ্চ পাহাড় দ্বারা ঘেরা। কিংবদন্তি অনুসারে এই পাহাড়ের মধ্যে কোন এক গুপ্ত রাস্তার মাধ্যমে খাণ্ডব বন থেকে সোজা এই মন্দিরে আসা যায়। এই রাস্তা ধরেই অশ্বত্থামা মন্দিরে প্রবেশ করেন।

Image result for asirgarh ashwathama

এই মন্দিরে কোন আলোর ব্যবস্থা অথবা অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেই। কিন্তু প্রত্যহ এখানে শিব লিঙ্গের ওপরে তাজা ফুল এবং সিঁদুর পাওয়া যায়।

যদিও আশেপাশে সেরকম কোন জনবহুল জনপদের অস্তিত্ব নেই,তবুও প্রত্যহ মন্দির খোলার সাথে সাথে শিবলিঙ্গের মাথায় টাটকা ফুল ও সিঁদুর কোথা থেকে আসে তা এক রহস্য। বুরহানপুর সেবা সদন মহাবিদ্যালয়ের প্রফেসর মহম্মদ শফি বলেন যে বুরহানপুরের ইতিহাস মহাভারতের সাথে জড়িত এবং এই জায়গাটি খান্ডব বনের সাথে যুক্ত ছিল।

Image result for asirgarh ashwathama

আজও অমীমাংসিত প্রশ্ন নিয়ে বিস্ময়ের মুখোমুখি এই দূর্গ রহস্য। বহুলোক যেমন বিশ্বাস করেন আজও, ৫০০০ বছর পরেও, দ্বাপর যুগের অশ্বত্থামা জীবিত অবস্থায় নিজের অভিশপ্ত জীবনের মুক্তি কামনায় রোজ শিবলিঙ্গের পুজার্চনা করেন, তেমনই বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক মনভাবাপন্ন মানুষ কোনভাবেই মেনে নিতে রাজী নন অশ্বত্থামার অস্তিত্ব। কিন্তু তবুও রোজ প্রত্যুষে শিবলিঙ্গের মাথায় কোন অজানা পথে পৌঁছায় ফুল ও সিঁদুর সেই প্রশ্ন রয়েই যাবে। গ্রামীণ মানুষের লোকমুখে প্রচলিত হঠাৎ দেখা ব্যক্তিটিই বা কে,সেই কী অশ্বত্থামা নাকি অন্য কেউ, তার উত্তরও অমিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here