ওয়েব ডেস্কঃ গ্রামবাঙলার মা, মাসি,পিসিমার একটু সেকেলের ব্যবহার হলেও বোরোলিনের চল আছেই। যেমন রাঢ় বাঙলার চাঁদুটের ঠাকুমার কাছে বোরোলিন একমাত্র ক্রিম। অনেকের মুখে শুনেছি বোরোলিন রোদে মেখে বেরোলে নাকি মুখ কালো হয়ে যায়, কিন্তু গ্রামের এক পালাগানের চ্যানেলে বলেছিলেন, তাঁর অপূর্ব সাদা ধপ ধপে রঙের পিছনে নাকি একমাত্র মুখের ক্রিম বোরোলিন।আর মাসি পিসিমা পায়ে হাতে ফাটা, ছোট্ট শিশুর ঠোঁট ফাটা একমাত্র আরোগ্যের উপকরণ বোরোলিন। আজও ” সুরোভিত অ্যাণ্টিসেপটিক ক্রিম “ শুনলেই সেই বোরোলিন মনে পড়ে। তাই সেকাল নয় একালেওসেই চল অব্যাহত। মনে হয় খুব এই বোরোলিনের ইতিহাস একটু জানি। আসুন তবে সেই আশা পূর্ণ করা যাক।
সময়টা ১৯২৯, ভারতের বুকে আন্দোলনের ঝড়। লাহোর কংগ্রেসের পূর্ণ স্বাধীনতা, আইন অমান্য ও খাজনা বন্ধের প্রস্তাব গ্রহণ, লোহোর ষড়যন্ত্র মামলা এতো সত্ত্বেও বিদেশী বাজারে স্বদেশী বেচাকেনা। কারণ তখন বিদেশী উপাদান সামর্থের বাইরে । আর তখন ভেষজ উপাদানের ব্যবহার ছিল বহুল। বাঙালীরর জয়যাত্রা শুরু হলো জি ডি ফার্মেসির গৌরমোহন দত্তের হাত ধরেই। আর দেশীয় ক্রিম বলে কথা, শুরু হলো আঁকড়ে ধরে পথ চলা। শোনা কথা ভেষজ গুণ আছে বলে পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু এই বোরোলিন ব্যবহার করতেন।
এবার শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবসময়ের জন্য এই ক্রিম মানুষের ব্যবহারের উপাদান হয়ে উঠল। শুধু তাই নয়, এই বোরোলিন উপাদান ছেড়েও দেহ স্বরূপ অঙ্গ হয়ে উঠল। আর এই বোরোলিন ছিল সেই সময়ের একমাত্র বিদেশী উপাদান বর্জনের দ্বারা স্বদেশী উপাদানের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিযোগিতা বহুল কিন্তু গৌরমোহন দত্ত কিন্তু অনড়। কিছুতেই নিজের অবস্থান থেকে নড়েন নি। কারণ তিনি মনে করতেন বিদেশী উপাদান বর্জনের জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনকে সংগঠিত হতে হবে নিশ্চিত। তাই তিনি ১৯২৯ সালে হাতি মার্কা সবুজ রঙের টিউবের বোরোলিনকে সামগ্রিক উপাদান হিসাবে বাজারে আনেন। অবশ্য ভেষজ গুণে বোরোলিন নিজেই সে জায়গা করে নেয়। এই ক্রিম বন্ধ করার জন্য ব্রিটিসগ সরকার অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু পারে নি।একে তো স্বদেশী উপাদান, তার উপর বাণিজ্য মহলের সংগঠন যা এক নির্দিষ্ট বাজারে পরিণত করে।
আজ এই জি ডি ফার্মেসি কারখানা আছে কলকাতায় ও গাজিয়াবাদে। বর্তমানে এই বোরোলিনের জি ডি ফার্মেসি কারখানার মালিক গৌরমোহন দত্তের নাতি দেবাশিস দত্ত।কিন্তু আমরা কথায় কথায় বলি সেই রাজাও নেই সেই রাজ্যপাটও নেই। কিন্তু এখানে মনে হয় একটু ভিন্ন কথায় বলতে হয় যে ৮৯ বছর ধরে কর্ণধার না থাকলেও রাজ্যপাট কিন্তু ঠিকই বজায় আছে। আবার পরিবর্তনও হয়েছে। যেমন বর্তমানে ছোট বড়ো বিবিধ কৌটোর আকারে পাওয়া যায়। পরিবেশ স্বচ্ছ রেখেই কাজ এগিয়েছে। কোনদিন রেপুটেশন ” কথাটার অন্যথা হয়নি।
শোনা যায় ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার দিন এই বোরোলিন বিনা পয়সায় মানুষকে দেওয়া হয়েছিল। মানুষ জানে, চেনে, বিশ্বাস করে তাই তার আভিজাত্য বজায় আছে নিত্য। বর্তমানে বরোলিন ছাড়াও এসেছে এলিন, সুথল, গ্লোসফট ইত্যাদি। কিন্তু অতীত ভিত্তি হয়েই দাঁড়িয়ে আছে, এখানেই সার্থকতা।