প্রাচীন পেরুভিয়ান বিশ্বাস অনুযায়ী, চাউচিল্লা এক জাদু-এলাকা। বিভিন্ন বিচিত্র কালোজাদু এখানে ক্রিয়াশীল রয়েছে। আরও আশ্চর্য বিষয়, এখানকার মৃতদেহগুলি আজও বিদ্যমান। তাদের সে অর্থে মমি করা না-হলেও তারা ওই অঞ্চলের শুকনো আবহাওয়ার কারণে টিকে গিয়েছে এই দীর্ঘ সময়। আজ চাউচিল্লা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের জায়গা।
“চাউচিল্লা সেমেট্রি” এমন একটি সমাধিস্থল, যেখানে কোন রকম রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াই অসংখ্য মানুষের দেহাবশেষ মমির মতো হয়ে বসে বা শুয়ে আছে। একে সাধারন সমাধিস্থল না ভেবে উন্মুক্ত সমাধিস্থল বলাই ভালো।
খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত এই সমাধিস্থলটি খ্রিষ্টাব্দ ১০০০ সালে বানানো হয়। যেখানে সমাধি দেওয়া মৃতদেহগুলি এতটাই অবিকৃত যে, তাদের গায়ে জড়িয়ে থাকা কাপড় দেখলে মনে হবে এগুলো কিছুদিন আগে পরানো হয়েছে। আর তা হঠাৎ দেখলে যে কারোই মনে হবে সম্ভবত এখনই উঠে কথা বলা শুরু করবে তারা । অত্যান্ত ভয়ংকর হলেও এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকাও বটে। পেরুর দক্ষিণের শহর নাজাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানটি।
১০২০-এর দশকে খোঁজ পাওয়া যায় এই প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে প্রত্নবিদরা জানান, নবম শতকের পরে আর এই কবরখানা ব্যবহৃত হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় এটাই, এই কবরখানায় মৃতদেহগুলিকে তাদের জীবদ্দশায় ব্যহবহৃত জিনিসপত্র-সহ বসিয়ে রাখা হত।
চাউচিল্লার অভিশাপ~
সম্প্রতি একটি ব্লগে গ্রেগ নিউকার্ক নামে এক ভদ্রলোক তাঁর ঠাকুমার জীবনের এক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। ঠাকুমা নাকি পেরু থেকে একটি বস্তু নিয়ে আসেন আমেরিকায় তাঁর বাড়িতে। আর তার পরেই শুরু হয় বেদম গণ্ডগোল। ১৯৭০ দশক নাগাদ ভদ্রমহিলা পেরু ভ্রমণে যান এবং চাউচিল্লা সেমেট্রি থেকে এক মমির হাত নিয়ে আসেন।
কিছুদিন বাদেই ঠাকুমার হাতে এক রহস্যময় ছত্রাক গজাতে দেখা যায়। হাতের কয়েকটি আঙুলের নখ খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করে। বাড়িতে সর্বদা ছেয়ে থাকে এক অমঙ্গলের ছায়া। বাড়ির পোষা কুকুরদের আচরণে অস্বাভাবিকত্ব দেখা দেয়। ক্রমশ হঠাৎ হঠাৎ গ্যাসের বার্নার জ্বলে উঠতে শুরু করে, বাথরুমে বন্ধ শাওয়ারে ঝরঝর করে জল পড়তে শুরু করে।
একদিন গ্রেগ (তখন বালক) বাড়িতে একা ছিলেন। ঠাকুমা ও দাদু তখন চার্চে। হঠাৎই তাঁর একটা ছমছমে অনুভূতি হতে শুরু করে। তিনি অনুভব করেন ঘরে কেউ প্রবেশ করেছে। কিন্তু সে শরীরী অবয়ব-সম্পন্ন নয়। কাঁধের উপরে কারোর স্পর্শ অনুভব করেন গ্রেগ। কিন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে কারোকে দেখতে পাননি। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান তিনি। একটু পরেই ঠাকুমারা ফিরে আসেন। তখনকার মতো ব্যাপারটা মেটে। কিন্তু প্যারানর্মাল কাণ্ড-কারখানা চলতেই থাকে। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, সেই বাড়িতে বাস করাই অসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। কারোর পরামর্শে সেই হাড়টিকেই চিহ্নিত করা হয় সব নষ্টের গোড়া হিসেবে। বর্জন করা হয় সেই হাড়। ততদিনে ১৮ বছর কেটে গিয়েছে। গ্রেগের পরিবার ততদিনে বিধ্বস্ত।
গ্রেগের অভিজ্ঞতা নাকি অনেকেরই হয়েছে। চাউচিল্লা থেকে কোনও ‘মেমেন্টো’ এনে বিপদে পড়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। পেরুর প্রাচীন নাজকা সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন চাউচিল্লাকে স্টিভেন স্পিলবার্গও তুলে এনেছিলেন তাঁর ‘ইন্ডিয়ানা জোনস’ সিরিজের শেষ ছবিতে। সেখানেও এই কবরখানা ছিল রহস্যময়, অপ্রাকৃত।
দেখুন এই ভয়ঙ্কর কবরস্থান এর ভিডিও~