Home আইন আদালত মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ~ দ্বিতীয় পর্ব : সংযুক্তা সেন

মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ~ দ্বিতীয় পর্ব : সংযুক্তা সেন

মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ~  দ্বিতীয় পর্ব : সংযুক্তা সেন

লেখিকা পরিচিতি ~ সংযুক্তা সেন, প্রখ্যাত আইনজীবী বিধাননগর মহকুমা আদালত ( ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ )

 

মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ

দ্বিতীয় পর্ব

মহিলাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধগুলি হয়ে থাকে আমরা সেগুলির মধ্যে হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি আগের পর্বেএবারে আমরা আলোচনা করবো যৌনতামূলক অপরাধ নিয়ে।

ধর্ষণ

ধর্ষণ এমন একটা অপরাধ যেটা কোন নারীর শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতি করেনা, ভীষণভাবে মানসিক ক্ষতিও করেএছারাও পারিবারিক ও সামাজিক সম্মান নষ্ট তো আছেই।

এই অপরাধের কতগুলো উপাদান আছে যেমন কোন পুরুষ যদি কোন মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে যৌন সহবাস করে বা কোন মহিলাকে ভয় দেখিয়ে বা  আঘাত করে তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার সম্মতি আদায় করে, তবে সেটা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। এছারাও কোন পুরুষ যদি কোন মহিলাকে সে তার স্বামী এই বিশ্বাস দিয়ে প্ররচনামুলক ভাবে বা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সম্মতি গ্রহণ করে তার সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় অথবা কোন বিকৃত মস্তিষ্কের মহিলার সাথে বা কোন মহিলা কে মাদক বা অন্য কোন ওষুধ প্রয়োগ করে তাকে আচ্ছন্ন করে তার সাথে যৌন সহবাস করে তবে সেটাও ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। ১৫ বছর বা তার নীচের বয়সের কোন মহিলার সম্মতি নিয়ে তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলেও সেটাকেও ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে।

ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের দণ্ডর প্রকারভেদঃ

যৌন অপরাধে দোষী কোন পুরুষের দোষ প্রমান হলে ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৭৬ ধারায়, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে যে নতুন অর্ডিন্যান্স এসেছে  সেই অনুযায়ী নুন্যতম শাস্তি ৭ বছর থেকে প্রসারিত করে ১০ বছর করা হয়েছে ও সর্বোচ্চ শাস্তি আজীবন কারাবাস, ও আর্থিক জরিমানা হতে পারে।

৩৭৬এ ধারায়, কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বল পূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে  যদি সেই নারীর মৃত্যু ঘটে বা সে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্জীব হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে দোষীকে নুন্যতম ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড যা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত প্রাসারিত হতে পারে।  

কোন পুরুষ যদি তার নিজের স্ত্রীর সাথে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে যৌন সহবাস করে  সেই মহিলা বা স্ত্রী, আদালতের ডিক্রি বা চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী তার স্বামী অর্থাৎ সেই পুরুষের থেকে পৃথক বসবাস করছে তখন ৩৭৬বি ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে, নুন্যতম ২ বছরের কারাদণ্ড যা ৭ বছর পর্যন্ত শাস্তি প্রসারিত হতে পারে ও আর্থিক জরিমানা হতে পারে।

৩৭৬সি কোন পাবলিক অফিসার বা কোন সারকারি কর্তৃপক্ষের অধিনে কর্মরত পুরুষ যদি কোন মহিলার সাথে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে যৌন সহবাস করে তখন ৩৭৬সি ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে,  নুন্যতম ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড যেটা ১০ বছর পর্যন্ত শাস্তি প্রসারিত হতে পারে এবং জরিমানাও হতে পারে

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে যে নতুন অর্ডিন্যান্স তৈরী করা হয়েছে তাতে কিছু নতুন ধারা নিয়োগ করে যেমন এখানে ৩৭৬এবি আনা হয়েছে যেখানে ১২ বছর নীচে কোন নারীকে ধর্ষণের শাস্তি নুন্যতম ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড যা মৃত্যু দণ্ড পর্যন্ত প্রাসারিত হতে পারে। ততটুকু জরিমানা আরোপ করা হবে যাতে রোগীর চিকিৎসার খরচ ও পুনর্বাসনের যথাযথ এবং যুক্তিসঙ্গত ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। ১৬ বছর বয়সের নীচে কোন নারীকে ধর্ষণের শাস্তি নুন্যতম ২০ বছর করা হয়েছে

 

গণ ধর্ষণ  

যখন একদল ব্যক্তি কোন একটি মহিলার সাথে বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তখন তাকে গণ ধর্ষণ বলে। ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৭৬ডি ধারায়, গণ ধর্ষণে অভিযুক্তব্যক্তিদের জন্য নুন্যতম শাস্তি ২০ বছর সশ্রম কারাবাস যেটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত প্রাসারিত হতে পারে।

নতুন ধারা ৩৭৬ডিএ ও ৩৭৬ডিবি অনুযায়ী যথাক্রমে ১৬ বছর ও ১২ বছরের কম বয়সই নারীর গণ ধর্ষণে অভিযুক্তব্যক্তিদের জন্য নুন্যতম শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড,  ১২ বছরের কম বয়সই নারীর গণ ধর্ষণে অভিযুক্তব্যক্তিদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।

নতুন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী দণ্ড প্রক্রিয়া সংহিতা্র ও কিছু সংশোধন করা হয় যেমন সমস্থ ধর্ষণের মামলার তদন্ত পুলিশ থানায় নথিভুক্ত হবার পর থেকে ৩ মাসের শেষ করতে হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে অ্যাপীল ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। ১৬ বছর বয়সের নীচে কোন নারীকে ধর্ষণের আভিযুক্তকে কোন অগ্রিম জামিন দেওয়া যাবে না।

যদিও কোন মহিলা অন্য মহিলা কে ধর্ষণ করতে পারে না কিন্তু তবুও যদি দেখা যায় যে কোন মহিলা কোন পুরুষ কে ধর্ষণ কাজটি করতে সাহায্য করেছে তবে তাকেও গণ ধর্ষণের বিচারের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

শ্লীলতাহানী

যখন কোন পুরুষ কোন নারীর শ্লীলতাহানী করার উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে, তখন ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৫৪ ধারায় এটিকে শাস্তি যোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। সেক্ষেত্রে দোষীকে নুন্যতম ১ বছরের কারাদণ্ড যা ৫ বছর পর্যন্ত শাস্তি প্রসারিত হতে পারে।

যখন কোন পুরুষ অযাচিত ভাবে কোন নারীর সাথে শারীরিক সংযোগ ঘটায় এবং স্পষ্ট ভাবে যৌন সহবাসের চাহিদা প্রকাশ কর, তখন ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৫৪এ ধারায় এটিকে শাস্তি যোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। সেক্ষেত্রে দোষীকে ৩ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ড বা উভয়ই হতে পারে। তবে এটি একটি জামিন যোগ্য অপরাধ

৩৫৪বি ধারায়, যখন কোন পুরুষ কোন নারী কে অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে আক্রমন করে ও সেই নারীর বস্ত্র খুলে নিয়ে তাকে নগ্ন করার চেষ্টা করে থাকে, তখন অপরাধীর নুন্যতম শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড যা ৭ বছর পর্যন্ত শাস্তি প্রসারিত হতে পারে। এছারাও জরিমানা হতে পারে।

৩৫৪সি ধারায়, যখন কোন পুরুষ কোন নারীকে তার ব্যাক্তিগত কাজ করা অবস্থায় তাকে দেখে, সেই নারীর আজান্তে তার ছবি তোল, তখন সেটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে ধরা হয় সেক্ষেত্রে প্রথমবার দোষী সাবস্ত হলে, অপরাধীর নুন্যতম ১ বছরের কারাদণ্ড যা ৩ বছর পর্যন্ত শাস্তি প্রসারিত হতে পারে। দ্বিতীয় ও পরবর্তী সময়ে দোষী সাব্যস্ত হলে, অপরাধীর নুন্যতম ৩ বছরের কারাদণ্ড যা ৭ বছর পর্যন্ত শাস্তি প্রসারিত হতে পারে। এছারাও জরিমানা হতে পারে।

৩৫৪ডি ধারায়, কোন পুরুষ যদি কোন মহিলাকে তার সম্মতি না নিয়ে তাকে অনুসরন  করে বা তার পিছু করতে থাকে অথবা ইন্টারনেট, ই-মেইল, বা কন ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম দ্বারা কোন মহিলার গতিবিধি, ব্যবহারের ওপর নজর রাখে সে ক্ষেত্রে অপরাধী প্রথমবার দোষী সাবস্ত হলে, তার ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে দ্বিতীয় ও পরবর্তী সময়ে দোষী সাবস্ত হলে, অপরাধীর শাস্তি ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড  প্রসারিত হতে পারে এবং জরিমানাও হতে পারে।

নারী পাচার ও বল পূর্বক পতিতাবৃত্তি  

কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীকে বল পূর্বক বা ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে তাকে কলুষিত করার অভিপ্রায় তবে ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৬৬ ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে ১০ বছরেরে কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে।

কোন ব্যক্তি যদি ১৮ বছর বয়সের নীচে কোন নারীকে নীতি বিরুধ্য উদ্দেশ্য সাধনার্থে, ভয় দেখিয়ে বা কোন পদ্ধতিদ্বারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরিত করে ও কোন পুরুষের সাথে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করে তখন ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৬৬এ ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে ১০ বছরেরে কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে  

কোন ব্যক্তি যদি ভারতের বহিঃস্ত কোন দেশ বা জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ২১ বছর বয়সের নীচে কোন নারীকে আমদানি করে ও কোন পুরুষের সাথে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করে তখন ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ এর ৩৬৬বি ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে ১০ বছরেরে কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে।

ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ১৮৬০ ছারাও অনৈতিক ট্র্যাফিক (প্রতিরোধ) আইন, 1956 আছে যেখানে ৪ ধারা অনুযায়ী কোন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ যদি কোন নারীর পতিতাবৃত্তির উপার্জনের ওপর নির্ভর করে নিজের দিন যাপন করে তবে তার শাস্তি হবে, কারাবাস যা ৭ বছরের নিচে নয় আবার ১০ বছরের ওপরে হবে না।

অনৈতিক ট্র্যাফিক (প্রতিরোধ) আইন, 1956 আছে যেখানে ৫ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি কোন নারীর সম্মতি ছাড়া তাকে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে ক্রয় করার প্রচেষ্টা করে বা পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করে তখন তার সাজা হবে, যা ৩ বছরের নিচে নয় আবার ৭ বছরের ওপরে হবে না।  

সংযুক্তা সেন  

আইনজীবী