লেখিকা পরিচিতি ~ সংযুক্তা সেন, প্রখ্যাত আইনজীবী বিধাননগর মহকুমা আদালত ( ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ )
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আধুনিক সমাজ ব্যাবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপহার বলে গণ্য করা হয় । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি সাইবার প্রযুক্তির অঙ্গ যেটা বর্তমান যুব সমাজের সাথে অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত… প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্ন অপরাধের ও আবির্ভাব হয়েছে তার মধ্যে সাইবার অপরাধ একটা বিশাল স্থান দখল করে নিয়েছে । সাইবার অপরাধ এখন বিশ্ব্যাপী সমস্যা । অল্প যে কয়েকটি দেশ সাইবার অপরাধের বিরুধ্যে আইন গঠন করেছে ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম । ২০০০ সালে ভারতে Information Technology Act, ২০০০ বা তথ্য প্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়… এই আইনে হ্যাকিং, ট্যাম্পারিং কম্পিউটার তথ্য, ডাটা চুরি এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করা আছে । তবে সাধারণভাবে নারীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে এই আইনে যা আলোচনা করা আছে তা কিন্তু যথেষ্ট নয় । সাধারণত এই সাইবার অপরাধের পিছনে কিছু কারন থাকে যেমন যৌন হয়রানির, প্রতিশোধ, কারুর প্রেমে পাগল হয়ে, কাউকে ঘৃণা করে বা কোন দুর্বল মহিলার ওপর শক্তি প্রদর্শন করার জন্য।
নারীদের বিরুদ্ধে যেসব সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেগুলো হলো :-
ই মেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া এর মাধ্যমে হয়রানি, সম্মানহানি, সাইবার স্টকিং , সাইবার পর্নোগ্রাফি, মর্ফিং, ই মেইল স্পুফিং ইত্যাদ…
ই মেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া এর মাধ্যমে হয়রানি যেমন ধমকি, ভীতিপ্রদর্শন, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেলিং । কিন্তু যখন নকল ID দিয়ে এইসব অপরাধ করা হয় তখন বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয় ।
কারুর পরিচয় চুরি করা মানে অন্য কোন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া বা তার অজান্তে ইচ্ছাকৃত তার পরিচয়কে যেমন তাদের নাম, নম্বর পরিচয়, বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর, ব্যবহার করা, সাধারণত কোন আর্থিক সুবিধা লাভ বা জালিয়াতি বা অন্যান্য অপরাধ মূলক কর্মে্র জন্য ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে যে ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করা হয়েছে তাকে প্রতিকূল পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে, বিশেষ করে যদি কোন অপরাধী মূলক কাজেরজন্য চুরি করা হয়ে থাকে। তথ্য প্রযুক্তি আইন এর ৬৬সি ধারায় অভিযোগ করা যেতে পারে। দোষ প্রমান হলে ৩ বছরের সাজা বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে…
কোন ব্যাক্তি যদি কারুর অনুমতি ছাড়া বা কারুর অজান্তে ইচ্ছাকৃত ভাবে কারুর গোপনাঙ্গের ছবি তোলে, প্রাচার করে বা ছবি পোস্ট করে তবে তথ্য প্রযুক্তি আইন এর ৬৬ই ধারায় অপরাধির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যেতে পারে। দোষ প্রমান হলে ৩ বছরের সাজা বা ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কারুর বিষয়ে আপত্তিজনক বক্তব্য প্রকাশ করা একটা অপরাধ। কোন ব্যাক্তি যদি ইন্টারনেট এ যৌনতা মূলক কোনো রটনা বা ছবি প্রাচার করে বা যদি কোন অশ্লীল বা যৌনতামূলক সূচনা প্রকাশিত বা প্রচারিত করা হয় তবে তথ্য প্রযুক্তি আইন এর ৬৭এ তে অভিযোগ করা যেতে পারে ও দোষ প্রমান হলে ৫বছরের সাজা বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে ।
শিশুদের নিয়ে যৌনতা মূলক কোনো রটনা বা শিশুদের অপমান বা গালাগালি দেওয়া যদি প্রচার বা প্রকাশ করা হয় তবে ৬৭বি তে অভিযোগ করা যেতে পারে দোষ প্রমান হলে ৭ বছরের সাজা বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
যদি কোন ব্যাক্তি শিশুদ্বারা যৌনতা মূলক কাজের ছবি বা ভিডিও প্রাচার করে বা ছবি ইন্টারনেট এ পোস্ট করে তবে সেতা অপরাধ বলে গন্য হবে সেক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি আইন এর ৬৭ বি তে অভিযোগ করা যেতে পারে এবং দোষ প্রমান হলে প্রথম দোষী সাব্যস্তে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাবরণ বা ১ লাখ পর্যন্ত জরিমানা দ্বিতীয়বার দণ্ডে দণ্ডিত হলে সাত বছর পর্যন্ত বা / এবং ১ লাখপর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
সাধারণত যে সব মহিলারা মানসিকভাবে দুর্বল এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে অনভিজ্ঞ তাদের কে সহজে শিকার বানানো হয়, মেয়েরা এর শিকার হয় পুরষদের দ্বারা
অনলাইন ট্রলিং মানে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণা, ব্যভিচার, বর্ণবাদ, ভুলভ্রান্তি বা অন্যের মধ্যে সাধারণ বিচ্যুতি ছড়ানো । যারা ট্রলিংয়ে অংশ গ্রহণ করে তারা ট্রল্স হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তারা কোনও ব্লগ সাইটগুলি, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলি (ফেসবুক এবং টুইটারের মত), সংবাদ সাইট আলোচনা ফোরাম এবং গেম চ্যাটের মত পাবলিক অবস্থানঙ্গুলি ব্যবহার করে মন্তব্য করার জন্য।
সাধারণ টিজিং যদিও গুরুতর ক্ষতিকর নয়, কিন্তু যখন এই বিদ্রুপ ও ক্ষতিকর মন্তব্য কোন শিশুর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সেই শিশুটিকে বিষন্নতা ও অবসাদ গ্রস্ত করে তলে তখন সমস্যাটি কেবলমাত্র মোবাইল ফোনে এবং ইন্টারনেটে স্কুল ছাত্রের মধ্যে সীমিত থাকে না। বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে কারণ শিকারের পরিচয় একটি বড় চেনাশোনার জগতে প্রকাশ হতে পারে। সেই কারণে মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
সংযুক্তা সেন
আইনজীবী