হিন্দুদের বাড়িতে ঠাকুর থাকবে না এটা মনে হয় ঠিক মানা যায় না। ঠাকুর ঘরেতো ঠাকুরের মূর্তির শেষ নেই। তবে এটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা ভাববার বিষয়। কারণ মূর্তি কোথায় রাখা উচিৎ, কোন দিকে রাখাটা বিধেয় সেটা জানা আবশ্যক। এছাড়া শুদ্ধি, অশুদ্ধি তো আছেই। হিন্দুদের আচারে বিচারে অনেক প্রথা রীতি বর্তমান। যেমন এক জায়গায় দুটি শিব রাখা ঠিক নেই, যা লোকপ্রচলিত যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি করে। আবার বলে হয় পূর্ব দিকে ঠাকুরের মূর্তি পূজা করাটা বিধেয়। আবার বৌদ্ধ দের তথাগত পড়লে জানা যায় যে, বুদ্ধদেব পূর্ব দিকটিকে শুভফল দায়ক বলেছেন। তবে অনেক মূর্তি এনে নির্যাতন হলে, বা, নিয়ম রীতি না মানলে নাকি ভালোর থেকে।ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।হিন্দুধর্মে দেহধারী ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকৃত। আমরা যতই বলি না কেন,ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা ” কিন্তু মূর্তি আকারে পেলে সম্ভ্রম জাগে। যেমন, মা দূর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী মূর্তি। প্রচলিত মত বলে, মা দূর্গার আলাদা আলাদা মূর্তি পর পর আলাদা আলাদা ঘরে রাখা ঠিক নয়। এমনিতে মা দূর্গার মূর্তি বাড়িতে সুখ, ঐশ্বর্য বজায় রাখে। এমনকি যেহেতু মা দূর্গা অসুর বিনাশিনী, তাই নজরের কুপ্রভাব থেকে ভক্তদের রক্ষা করেন। কিন্তু বিবিধ মূর্তি এই মঙ্গলকামনায় বিশিষ্ট অন্তরায়। এছাড়া প্রচলিত প্রবাদে বলা হয় যে, লক্ষ্মী, সরস্বতী একসাথে থাকা মূর্তি কলহের প্রতিকী।এবার বলব গণেশ মূর্তির কথা। হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, ভগবান গণেশের পুজো ছাড়া কোন কাজ সম্পন্ন হয় না। গণপতি বাপ্পা হলো সিদ্ধি দাতা, তাই সাফল্যের প্রতিকী সেইরূপ। তবে গণেশের মূর্তি ঘরের দক্ষিণ দিকে রাখা উচিৎ নয়। তবে গণেশ মূর্তি যা ঐশ্বর্যের আর সিদ্ধিদাতা, সেই মূর্তিকে পশ্চিম দিকে স্থাপন করাটা বিধেয়। তবে ধাতু ব্যবহার করতে চাইলে সেই মূর্তিকে ঘরের উত্তর পূর্ব বা দক্ষিণ পশ্চিমে রাখতে হবে। একথা মনে রাখতে হবে, বাথরুম সংলগ্ন দেওয়ালে গণেশ মূর্তি রাখলে তা শ্রীবৃদ্ধিতে ক্ষতিকারক।
এবার আসি শিবলিঙ্গের পুজোর কথা।বাড়িতে একের বেশী শিবলিঙ্গ রাখাটা ঠিক নয়। প্রচলিত মত বলে, বাড়িতে একের বেশী শিবলিঙ্গ রাখা ঠিক নয়। বলা হয় শিবলিঙ্গের সাথে বেশ কিছু রীতি পালন করতে হয়। যেমন, শিবলিঙ্গের সামনে মিথ্যা কথা বলতে নেই। দিনে পাঁচবার শিবলিঙ্গের আরতি করতে হয়। প্রতিদিন দুধ এবং মধু দিয়ে শিব লিঙ্গের অভিষেক করাটা প্রয়োজনীয়। এই নিয়মের বাইরে গেলে নাকি, পরিবারে রোগ শোক বৃদ্ধি পায়। বাস্তুমতে শিব ঠাকুরের ছবি উত্তর – পূর্ব মুখে রাখাটা বিধেয়। এটা আরো বলা হয় যে, উত্তর – পূর্বে রাখা মূর্তি পজিটিভ এনার্জি দান করে।প্রসঙ্গগত বলে রাখি,ভুলেও বাড়তে নটরাজ মূর্তি রাখতে নেই, কারণ অঘটন ঘটা নাকি দূরে নয়।
প্রচলিত মতানুসারে অনেকগুলি মূর্তি একসাথে রাখতে নেই। যেমন, কৃষ্ণ ঠাকুর ও রাধা, কৃষ্ণ ঠাকুর আর মীরাবাঈ, ভগবান গণেশ রিদ্ধি আর সিদ্ধি মূর্তি, ভগবান কার্তিক এর দুই স্ত্রী বালি ও দেবসেনা। এছাড়াও বগলা মূর্তি, যা কলহের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে নিয়ে যায়। অনেক সময়ে যৌথ যুগল মূর্তি পরিবারের ভাঙন ধরায়।
এবার বলব ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর – এর কথা। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় হলো সেই প্রতিভূ। তাই এই তিন দেবতার মূর্তি নাকি বাড়িতে রাখতেই হবে। এই মূর্তি না রাখলে দেবতা নাকি অসন্তুষ্ট হবেন। আর দেবতার অসন্তুষ্টি মানেই, বিপদ অবশ্যম্ভাবী। এ যেন মনে করে যায়, ” য: শিব: স হরিব্রহ্মা সোহহং ব্রহ্মাস্মি মুক্তিত: “
এককথায় সূর্য, ব্রহ্মা, মহাদেব, ইন্দ্র আসন সবসময় পূর্ব দিকে হতে হবে। কিন্তু মুখ পশ্চিম দিকে থাকবে। গণেশ, দূর্গা, কুবেরের আসন দক্ষিণামুখ পাতলেও ঠাকুরের আসন উত্তর পূব দিকে হওয়াটাই বিধেয়। সাধারণ ভাবে পূর্ব দিক শুভ হয়। তবে উত্তর কোণ খারাপ নয়। উত্তর পূর্ব কোণ পজিটিভ রে দান করে, এখানেই তাই ঠাকুরঘরের অবস্থান বিধেয়।