অন্তরঙ্গ অনন্য সুন্দরী ডুয়ার্স ~ সমিত চক্রবর্তী

0
অন্তরঙ্গ অনন্য সুন্দরী ডুয়ার্স ~ সমিত চক্রবর্তী

ডুয়ার্সের জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেবার। প্রথম রাতটা সুনতালেখোলা বলে ভীষণ মিষ্টি একটা জঙ্গলে কাটল। গাড়ীবিভ্রাটে জেরবার হয়ে পৌঁছলাম যখন, সন্ধ্যা তখন গড়িয়েছে রাতের পানে। জঙ্গলের একেবারে ঠিক মধ্যিখানে এক দারুণ বনবাংলো। কেয়ারটেকার শশধর চমৎকার মানুষ, আর সে যে কি সরেস রান্না করে সে আর কি বলব!একেই ক্লান্ত ছিলাম, তায় তার ফাটাফাটি রান্না খেয়ে তৃপ্ত রসনায় আর বিছানার নরম আদরে রাত কাটল চমৎকার। সেই রাত ছিল শুক্লা ত্রয়োদশীর, চাঁদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছল আলো ভাসিয়ে দিল গোটা চরাচর।

পরদিন খুব সকালে বেরোলাম সেই গ্রামের সাথে আলাপ করতে। সুনতালে নামের ছিপছিপে এক নদী, তাকে ঘিরে বেশ মস্ত এক জঙ্গল, খুব রোমাণ্টিক একটা পায়ে চলার দড়ির ব্রীজ আর সেই জঙ্গল চিরে চিরে যাওয়া শাল সেগুনের পাতাঝরা মেটে পথ। বেলার দিকে আলসে রোদ উঠে সে পথ জুড়ে গাছেদের পাতার ফাঁক দিয়ে ঝিলিমিলি আলোর জাফরি তৈরি করে যায় আপন খেয়ালে। সে নকশা তুমি দেখলে কিনা তাতে তার থোড়াই কেয়ার। অঢেল সবুজের গন্ধ মেখে, পায়ে পায়ে সেই পথ ধরে চলে যাওয়া যায় অনেকদূর। বহুদূর।

 

সারা রাত ধরে শিশিরে স্নান করেছে সবুজ অনাঘ্রাত বনবিথী। ভারী লজ্জা তার, লাজবতী আমাদের দেখে গায়ে ঝটপট কুয়াশার ফিনফিনে পাতলা চাদর জড়িয়ে ফেলল। প্রকৃতির জেগে ওঠার পালা এল, জাগছে সে একটু একটু করে। অজস্র পাখীর কলকাকলি। গাছের প্রতিটি শাখায় শাখায় তাদের সকালের প্রভাতী সুর।

জঙ্গল একটু যেখানে হালকা, সেখানে ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা বাড়ী নিয়ে কি মিষ্টি এক একটা গ্রাম। টিনের চাল থেকে বৃষ্টির জলের মত রাতের জমা শিশির ঝরে পড়ছে টুপটাপ। কি শান্ত, স্নিগ্ধ চারিদিক। শুধু একঝাঁক পাখীদের কিচিরমিচির। সোঁদা মাটির গন্ধ ভেসে আসে।

 

কি অপরূপ, কি মায়াবী হয়ে ধরা দেয় আমাদের নশ্বর জীবনের এক একটি ভোর! এই ভোর সুন্দরের, এই ভোর পাখীদের, এই অপরূপ সকাল ভবানী দয়ানী গানের। এই সকালকে চলে যেতে দিতে মায়া হয়। অরণ্যের দিনরাত্রি’র সেই স্বর্গীয় ভোরের ছবিখানি মনে ভাসে। ওই মায়াবী ভোরে স্মৃতিজুড়ে পাহাড়ী সান্যল ফিরে ফিরে আসতে থাকেন…

“সে ডাকে আমারে

বিনা সে সখারে, রহিতে মন নারে।

প্রভাতে যারে দেখিবে বলি

দ্বার খোলে কুসুমকলি

কুঞ্জে ফুকারে অলি

যাহারে বারেবারে……”

 

সেই পরমপুরুষ, বিচ্ছেদ ও মৃত্যু যাঁকে ছুঁতে পারে না, যাঁর আশীষ নিয়ে আরও একটি দিন ভুমিষ্ঠ হছে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণটিতে হঠাৎই চারিদিকে সেই অসীমের অদৃশ্য কিন্তু সৌরভময় উপস্থিতি যেন টের পাই সারা চেতনা জুড়ে। ঐ যে ঘাসের মাথায় লেগে থাকা শিশিরবিন্দু’টিতে, ঐ যে আধফোটা ফুলের পাপড়ি মেলার ক্ষণটিতে, ঐ যে বুনোফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া ভ্রমরের পাখায় পাখায়, পাখীদের গানের স্বরলিপিতে আর দিগন্ত জুড়ে ছায়া ছায়া আবছা নীল পাহাড়ের বিভঙ্গিত সারিতে তাঁকে স্পষ্ট অনুভব করি।

পুব দিগন্তে তখন টুকরো টুকরো মেঘে খুনখারাবি লাল রঙ, তাঁর ঈশারার অপেক্ষায় বুঝি থমকে আছেন নব দিনমণি। পশ্চিমাকাশ কুয়াশা জড়ানো, আবছা রহস্যের মত ঈষৎ অন্ধকার তখনও লেগে আছে দূর পাহাড়ের দেবদারু আর পাইনের শাখে-প্রশাখে। সোঁদা মাটি, বুনোফুলের গন্ধ আর পাখপাখালি’র কলকাকলিতে ভারী হয়ে আছে বাতাস।

এত ঐশ্বর্য, এত প্রাণ চারিদিকে! কি অসীম করুণা, কি অসীম প্রেম, কি অনিঃশেষ যত্নে সৃষ্টি এই সব রূপরসবর্ণগন্ধস্পর্শ! সারা চেতনা জুড়ে সেই মহাসঙ্গীতের অস্পষ্ট সুরটি রিনরিন করে বাজে।

 

সুনতানেখোলা থেকে সামান্য এগোতেই ঢুকে পড়লাম চা-বাগানের মধ্যে। দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র সবুজ পৃথিবী। নধর চা-গাছের পাতার ওপর দিয়ে সকালের রোদ পিছলে যাচ্ছে।  বাগানের মাঝখান দিয়ে রাস্তা। আঁকাবাঁকা সেই পথ গিয়েছে চলে। কিছুদূর অবধি দেখা যাচ্ছে তাকে, তার পরে হারিয়ে গিয়েছে গভীর বাঁকে। সেই বাঁকের ওপারে পথ আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকে আবছা নীল পাহাড়। পথের নেশায় ঘোরা মানুষকে সেই নীল পাহাড় হাতছানি দেয়, সেই ডাক উপেক্ষা করা কিন্তু ভারী শক্ত কাজ। কাছে, দূরে চা-বাগানে ফুলের মত ফুটে আছেন শ্রমিকরা, সাত-সকালেই কাজ চলছে পুরোদমে।

কোথাও কোথাও ছোট ছোট চাষের ক্ষেত। ধান কাটা হয়ে গেছে, তাই ব্যস্ততা নেই কোথাও। তাই ক্ষেতের রং এখন একটু কালচে সবুজ। মাঝে মাঝে সর্ষেক্ষেতের চোখ ধাঁধানো হলুদ ছোপ। দূর থেকে মনে হয় বহুরঙা এক শতরঞ্চি বিছিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। মাঠময় নাম না জানা পাখির একটা ঝাঁক দোলা লাগা কাঁপা কাঁপা মেঘের মত একবার মাটি ছুঁয়েই আবার উড়ে যাচ্ছে পরক্ষণেই।

 

বিস্তীর্ণ খোলা মাঠের মধ্যে প্রকান্ড এক শিমূল গাছের ছায়ায় ছোট্ট একখানি স্কুলবাড়ী, টিনের চাল, তিন-চার খানি ঘর, টানা লম্বা বারান্দা, লাল মেঝে, সেই লাল মেঝের বারান্দায় তেরছা হয়ে সকালের সোনালী রোদ এসে পড়েছে, এক্কা দোক্কা খেলছে দুটি শালিখ পাখি। পৃথিবীর সব সরলতা নিয়ে দুটি শিশু চলেছে ভোরের ইস্কুলে। সকালের নরম সূর্যের আলোর লুটোপুটি সেই মুখদুটিতে। স্কুলবাড়ী থেকে প্রার্থনার আওয়াজ ভেসে আসে, রিনরিনে সেই সুর বেয়ে মুহুর্তে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় সেই অনাবিল শৈশবে। কি অপরূপ, কি মায়াবী হয়ে ধরা দেয় আমাদের নশ্বর জীবনের এক একটি ভোর!

নির্জন রাস্তার ধারে একলা ছোট্ট চায়ের দোকান। অতবড় আকাশের নীল পর্দায় ওই একরত্তি দোকানটাকে দেখেই বড্ড চা-তেষ্টা পেয়ে গেল। নামলাম। আয়োজন অতি সামান্য, কিন্তু দোকানির অনেকখানি খাদহীন অন্তরিকতা আর যত্নে সেই খামতি চমৎকার ঢেকে যায়।

 

রাস্তা চলতে চলতে মাঝে মাঝেই দেখা হয় অনেক ছোট ছোট খলবলে পাহাড়ী ঝোরার সঙ্গে, কাছে গেলে ঝিরঝির, তিরতির করে তারা খুব গপ্প টপ্প করতে চায় কিন্তু একটু কান পেতে যে তাই শুনব, তার উপায় কি? ঘোড়ায় জিন দিয়ে আমাদের দৌড়, যেখানে সেখানে থামবার কি আর যো আছে? বেলা বাড়ার আগেই পৌঁছতেই হবে ঝালং আর বিন্দুতে। আর বেলাশেষের আগেই মুর্তি। সেই রকমই যে কথা! 

 

জায়গাগুলোর কি ভীষণ মিষ্টি আর কেমন মনমাতানো সব নাম। ঠিক ওইখানকার মানুষগুলোর মত। সেইরকম একটা জায়গা হল মুর্তি। কেমন চমৎকার নাম, বলো? ঝালং, বিন্দু ছুঁয়ে বেলাশেষে এবার এলাম তার কাছে। বেশ ঘন জঙ্গলের মধ্যে ছিপছিপে অসম্ভব মিষ্টি একটা নদী। কি আশ্চর্য, তারও নাম দেখি মুর্তি! আর আছে ভীষণ মিষ্টি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু রিসর্ট আর বনবাংলো। জায়গাটার নামে কি নদীর নাম হয়েছে, নাকি উল্টোটা? কে জানে বাবা!

 

সে নদীর পাড়ে অজস্র বোল্ডার ইতস্তত ছড়ানো। নদীর বুকে বেশ কিছু গাছের কঙ্কাল দাঁড়িয়ে, ওপারে ঘন জঙ্গল। জঙ্গল এ পারেও, তবে অত গহীন নয়। ওপারে শাল, সেগুন, শিমুল, মেহগনি, পলাশের জমজমাট সংসার। তখন বেলা যায় যায়, তাদের মাথার পিছনে পড়ন্ত সূর্যের লালচে আলোয় চমৎকার সিল্যুয়েট। জঙ্গলের জায়গায় জায়গায় চাপ বেঁধে আছে জমাট অন্ধকার-কখনো না বলা গোপন কথার মত। শীতের বিদায়বেলা, নদীতে এখন হাঁটুভর জল। স্রোত কিন্তু বেশ। তবে সাবধানে বোল্ডারে পা ফেলে দিব্যি এপার-ওপার করে আসা যায়। ভরা বর্ষায় কিন্তু তার চেহারা যে অন্যরকম হয় সেটা চওড়া নদীখাত দেখলেই দিব্যি বোঝা যায়। নদীর ওপরে একটা বেশ বড়সড় গাড়ি যাতায়াতের ব্রীজ। এ পার থেকে তাকালে মনে হয় ব্রীজটা যেন ওপারে গিয়েই জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে গেছে।

 

অস্তমিত সূর্য পাটে যেতে যেতে সন্ধ্যের আকাশে অদ্ভুত একটা নেশা ধরানো গোলাপী আর বেগুনী আভা ছড়িয়ে দিয়ে মিলিয়ে গেল পশ্চিম দিগন্তে। শেষ সুর্য রশ্মিটি চলে গেলে আস্তে আস্তে নিঃসাড়ে অন্ধকার নামে। মানুষের কোলাহল থেমে এলে নদী মুখরা হয়। সব রং নিভে গেলে ওপারের জঙ্গল আরও নিকষ হয়ে আসে।

 

সহসা দিগন্ত উদ্ভাসিত হয়। পূর্ণিমা এল বুঝি আজ খুব কাছে – সন্ধ্যে বেলা সামান্য  হলুদ রঙের চাঁদ উঠে জানান দিল। গোটা জঙ্গলটা ভেসে যেতে লাগল সেই চাঁদের হলুদ নরম নরম আলোয়। একটু পরে পরেই একটা কি রকম গা ছমছমে ঠান্ডা হাওয়া সেই চাঁদের আলোকে প্রতিটি গাছ, প্রতিটি লতাপাতা, প্রতিটি ঘাসের ডগায় মাখিয়ে দিয়ে বয়ে যেতে গেল।

সেই সুন্দরের দিকে বেশীক্ষণ তাকালে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, সমস্ত চেতনা অসাড় হয়ে যায়। কি অপার্থিব সেই দৃশ্য! নিথর, নিস্তব্ধ চরাচর, মাথার ওপর নির্মেঘ আকাশে চাঁদের ঝকঝকে রূপোলি আলো, নদীর জলে সেই আলোর অবিরাম ঝিকিমিকি। সময় থমকে দাঁড়ায়। রাত যাপনের আগে জ্যোৎস্নায় স্নাত হতে থাকে সেই জলধারা। বিস্তীর্ণ বোল্ডারের রাজত্ব, পাশের ব্রীজটা যেন অতিকায় কোন ছায়াদানব। মাঝে মাঝে আচমকা কোন রাতচরার কর্কশ আহ্বান আরও বাড়িয়ে তোলে সেই অপরিমেয় মাদকতাময় নিস্তব্ধতা। ঠিক সেই সময় স্বর্গ এসে দাঁড়ায় সেই নদী কিনারে। আমরা সবাই চুপ, বাকরুদ্ধ হয়ে ডুয়ার্সের প্রকৃতির সেই রূপ রস চারিয়ে দিচ্ছিলাম নিজেদের অনুভুতির একেবারে গভীরে।

মাঝে মাঝে হালকা হাওয়া এসে গাছের শাখায় দোলা দিয়ে যায়। যে দোলায় কিশলয় হেসে ওঠে কলকল, জীবনের সুর বাজে, সেই একই দোলায় মিশে থাকে বিসর্জনের বাদ্যি, ঝরঝর ঝরে যায় শুখনো পাতা। শুধু পড়ে থাকে তার স্মৃতিটুকু। প্রকৃতির নিজের আঙিনায় শূন্যতা পূর্ণতা, জীবন মরণের গভীর শাশ্বত বাণীটি বুঝিয়ে দেবার কি সহজ, কি নিখুঁত আয়োজন। তা এমনই সহজ যে, আমাদের চোখে পড়ে প্রত্যহ, প্রতিনিয়ত; কিন্তু উপলব্ধি করতে? বুঝি লেগে যায় কত অনন্ত মানবজীবন।

 

কাল ফিরে যাব। আবার সেই শহুরে পঙ্কিলতা, আবিলতার আবর্তে। যেটুকু যা পেলাম, অমলিন স্মৃতি করে নিয়ে যাই।

“মাঝে মাঝে যা পেলাম

সেই সঞ্চয়

যা কিছু পেলাম না,

সে আমার নয়”…

মধ্যরাতের জঙ্গলের শিশির ভেজা শুঁড়িপথ তখন বুনোফুলের গন্ধে মাতাল, মাটির ওপর করাতের মত গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে, বুনছে কি অপরূপ অজস্র কত আলোছায়া’র নকশা।

এখনও কত কত কিছু দেখা বাকী। ফিরে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু আবার আসব আমি, এই নদীর পাশটিতে, এই জঙ্গল, এই মর্মরধ্বনি, এই সব অপরূপ দৃশ্য আর অনুভবের কোলাজের মাঝে। আসতে হবে বারেবার এই প্রকৃতির কোলে। আমার তাই মন খারাপ হয় না একটুও।

নিশুতি, নিস্তব্ধ মাঝরাত। তখন সন্ধ্যের হলুদ চাঁদ আস্তে আস্তে সাদা হয়ে মাথার ওপর উঠে আসছে।

প্রয়োজনীয় তথ্যঃ-

পূর্ব ডুয়ার্স অর্থাৎ সুনতালেখোলা, ঝালং, বিন্দু, মুর্তি ইত্যাদি ঘুরতে গেলে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শুরু করাই সবচেয়ে ভালো। আবার পশ্চিম ডুয়ার্স অর্থাৎ বক্সা, জয়ন্তী, রাজাভাতখাওয়া, জলদাপাড়া ইত্যাদির জন্য ভালো নিউ আলিপুরদুয়ার। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের বাইরে থেকে প্রচুর গাড়ী পাওয়া যায় দৈনিক ভাড়ায়। তাছাড়া যোগাযোগ করতে পারেনঃ দিপেশ-৯৭৩৩৩-৪৮১৩১।

থাকবার জন্য চোখবুজে বন দপ্তরের বাংলো বুক করুন। প্রতিটি বাংলোর অবস্থান অসম্ভব সুন্দর, যা আপনাকে অন্য কেউ দিতে পারবে না।

অনলাইন বুকিং-এর জন্য লগ-ইন করুনঃ www.wbfdc.com অথবা WEST BENGAL FOREST DEVELOPMENT CORPORATION LIMITED,  KB-19,  SECTOR-III,  SALT LAKE, KOLKATA- 700106, (যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ৪ নং গেটের কাছে, PH NO- 033-23350064) গিয়েও বুক করতে পারেন।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here