পথ ------ ৪০ ------------------ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাইমারি স্কুলের পাশেই ছিল আমাদের হাইস্কুল। একেবারে গায়ে গায়ে না হলেও দু'চারটে বাড়ি পরেই। বাড়ি থেকে হেঁটে দশ মিনিট। রোজ সকাল সাড়ে ছ'টায় পড়তে বসতে হতো। ন'টা বাজলেই পড়া থেকে উঠে পড়তাম। আমাদের ঘড়ি ছিল না। নটরমণি ফুল ফুটলেই বুঝতে পারতাম ন'টা বেজে গেছে। বই তুলে রেখে সোজা পুণ্যিপুকুরের পাড়। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সেখানে যেতাম। পুণ্যিপুকুরের পাড় লাল ফড়িং-এ ভর্তি থাকত। ডানাগুলো ছিল কাঁচের মতো স্বচ্ছ। আমার খুব ভালো লাগতো। শুধু ভালো লেগে দূরে রাখলে হবে না, আমরা সেগুলো ধরতে চেষ্টা করতাম। ধরার যন্ত্র ছিল আমাদের হাতে। বেশ লম্বা একটা পাটকাঠি নিতাম। পাটকাঠির ভেতরে ছিদ্র থাকে। পাটকাঠির যেদিকটা সরু সেই দিকটার ছিদ্রের মধ্যে একটা খ্যাংড়াকাঠির দুটো মুখকে ঢুকিয়ে দিতাম। এবার সেটা দেওয়ালে যেখানে ঝুল হয়েছে সেই ঝুলের কাছে নিয়ে গিয়ে তার ভেতর কিছুটা ঝুল মাখিয়ে নিতাম। ওটাই হোত ফাঁদ। পুণ্যিপুকুরের পাড়ের জমির ওপর আধশোয়া হয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতাম ওই পাটকাঠিটা হাতে নিয়ে। যুদ্ধের সৈনিকেরা যেভাবে মাটির ওপর দিয়ে আধশোয়া হয়ে এগিয়ে যায়, আমরা যাওয়ার সময়ও ওটা মাথায় রাখতাম। ফড়িংটা হয়ত জমির ওপর এসে বসেছে।আমরা আস্তে আস্তে গিয়ে ফড়িংটার ওপর ঝুলের যে জাল বানাতাম সেটা ফেলে দিতাম। ফড়িংটা ওই ঝুলে আটকে যেত। এবার ফড়িংটাকে হাতে নিয়ে কচু পাতার রস খাওয়াতাম। রস খেয়ে ফড়িংটা আর উড়তে পারত না। নেশায় মাতাল হয়ে যেত। উড়তে গিয়েও ঘুরে পড়ে যেত। দশ পনের মিনিটের সময়ে কত ফড়িং যে ধরতাম তা গুণে শেষ করা যাবে না। পুকুরের পাড়ে ফড়িংগুলো পড়ে থাকত। স্কুল থেকে ফিরেই পুণ্যিপুকুরের পাড়ে গিয়ে দেখতাম একটা ফড়িংও নেই। নেশা কাটার পর তারা উড়ে গেছে। বাবার ছোট কাকা মানে আমার ছোট দাদু ফড়িং নিয়ে আমাদের এই খেলাতে খুব রেগে যেত। আমাদের তাড়া করত। কেউ কেউ বলত ফড়িং ধরলে ফড়িং-এর মতো চেহারা হবে। দ্বিতীয়টায় আমরা বেশি ঘাবড়ে যেতাম। ফড়িং-এর মতো চেহারা হলে তো সর্বনাশ। পাশাপাশি এটাও সত্যি কোনো কিছুই আমাদের ফড়িং ধরা থেকে সরাতে পারত না। *********************