Home ব্লগবাজি পথ — ৪৬ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৪৬ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৪৬  ~   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —– ৪৬
——————
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ছাত্রজীবনে খুব বেশি প্রাইভেটে টিউটরের কাছে
পড়া আমার হয়ে ওঠে নি। একজন শিক্ষকের কাছেই সবকিছু পড়তাম। একদিন বাবার কাছে
বায়না করলাম, আমি পশুপতি স্যারের কাছে পড়তে যাব। উনি কি বিষয় পড়ান? আমি
জানতাম না। উনি কি খুব ভালো পড়ান? আমি তাও জানতাম না। তাহলে কোন উদ্দেশ্যে
তাঁর কাছে পড়তে যাওয়া?
রাতেরবেলা আমার কোথাও পড়তে যাওয়া ছিল না। সন্ধ্যে উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে
সাথে আমাকে বাড়ি ঢুকতে হতো। অথচ রাত্রি দেখার আমার বড় শখ। পড়তে যাওয়া
ছাড়া তো আর কোনো ভাবেই রাতে বের হওয়া সম্ভব নয়। তাই পশুপতিবাবুর কাছে পড়তে
যাওয়ার আমার এত ইচ্ছা।
একদিক থেকে একটা সুবিধা ছিল। পশুপতিবাবু আমাদের যজমান ছিলেন। তাই ভর্তি
হয়ে যাওয়াটা কোনো সমস্যাই তৈরি করল না।
সপ্তাহে দু’দিন পড়তে যাওয়া থাকত। সন্ধ্যেবেলা খেলে বাড়ি ফিরে কিছু
খেয়েই পড়তে বেড়িয়ে যেতাম। হাতে হ্যারিকেন নিয়ে পড়তে যেতাম। দুয়ারে একসাথে
অনেকগুলো হ্যারিকেন একজায়গায় কমানো থাকত। আমরা ঘরে বাল্বের আলোয় পড়তাম।
পড়তে এসে জানলাম পশুপতিবাবু আমাদের অঙ্ক করাবেন। ব্যাস, আমার তো হয়ে
গেল। এমন একটা বিষয় যাকে কাছে টানতে এতটুকু আগ্রহ বোধ করি না। অঙ্ক কষতে কষতে
বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি।
পশুপতিবাবুর কাছেও বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়তাম। আর উনি তো একটা বিষয়
একবারের বেশি দু’বার বলবেন না। তাই ওনার মারের হাত থেকে আমাকে বাঁচাবার সাধ্য
কারো ছিল না।
কিন্তু যখনই ভাবতাম পড়ার শেষে হ্যারিকেন হাতে করে গ্রামের রাস্তা ধরে
বাড়ি ফিরছি তখন সব ভুলে যেতাম। তখন বৈশাখ মাস। কালবৈশাখী ঝড়ে সবকিছু ওলটপালট
হয়ে গেল। শুরু হল বৃষ্টি। কারেন্ট চলে গেল। আমরা সবাই নিজের নিজের হ্যারিকেন
এনে পড়তে শুরু করে দিলাম। একসময় ছুটি হল।
আমার রাস্তা দিয়ে আমি একাই ফিরতাম। চারপাশে ব্যাঙ ডাকছে। আমি হ্যারিকেন
হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছি। একটা ভেজা ভেজা ভাব। আমগাছতলায় আম পড়ে আছে। আমি শুধু
দেখতাম। কুড়োবার অনুমতি ছিল না। দিদির কড়া নিষেধ। রাতেরবেলা ওইভাবে বাড়ি
ফিরতে আমার খুব ভালো লাগতো।
এইভাবে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আমার কখনও মনে হত না আমি একজন পড়ুয়া। মনে হতো
এই রাতে হ্যারিকেন হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্যেই বোধহয় আমি পথে নেমেছি।
রাতের নির্জনতা অনুভব করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
**********************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here