ওয়েবডেস্ক: মানুষের জীবনের নানা উত্থান-পতন রয়েছে। মানুষ অনেক সময় বিভিন্নভাবে আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অবাক হলেও এটাই সত্য স্কটল্যান্ডে কুকুরও আত্মহত্যা করে। নির্দিষ্ট একটি ব্রিজ থেকে আত্মহত্যা করে। সেই ব্রিজের উপর থেকে লাফিয়ে পাথুরে নদীতে পড়ে কুকুরগুলো আত্মহত্যা করে। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে তা হয়তো রহস্য উদ্ঘাটন করা যায় কিন্তু কুকুরের আত্মহত্যা লোকমুখে নানা কথা থাকলেও সত্য অজানা এক রহস্য রয়েই গিয়েছে।
জানা যায়, ডামবারটন শহরের বাসিন্দা ডোনা কুপার তাঁর পোষ্য কুকুরটাকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারসহ হাঁটতে গিয়েছিলেন একটি ব্রিজে। কুকুরটি হঠাৎ ব্রিজের ডান দিকের দেওয়ালে উঠেই নিচে লাফ দিল। নিচে অগভীর জলপ্রপাত থাকায় আঘাত পেয়ে মারা যায় কুকুরটি।
স্কটল্যান্ডের ডাম্বারটন শহরে ১৫০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় ‘ওভারটন ব্রিজটি’। তবে এখন আর এই ব্রিজটিকে ‘ওভারটন’ বলে না। এখন মানুষ এই ব্রিজটিকে ‘ডগ সুইসাইডাল ব্রিজ’ নামেই চেনে। কুকুরগুলো যেখানটাতে লাফিয়ে পড়ে সেখানটা পাথর। এভাবেই ৪০ ফুট উঁচু একটি সেতু থেকে ৫০টির বেশি কুকুর লাফ দিয়েছে। স্কটল্যান্ডের ডামবারটনে অবস্থিত কুখ্যাত এই সেতুটির নাম ওভারটন ব্রিজ। আরও আশ্চর্য ব্যাপার হলো, সেতুর ডান দিকের একটি জায়গা থেকেই কেবল ঝাঁপ দেয় কুকুরগুলো। লাফিয়ে পড়ে বেঁচে যাওয়া অনেক কুকুরকেই দ্বিতীয়বারও একই স্থান থেকে লাফ দিতে দেখা গেছে। আসলে ব্রিজের নিচে কোনো জল নেই।
ইতিহাস বলছে, ১৯৯৪ সালে কেভিন নামের এক লোক নিজের বাচ্চাকে খ্রিস্টানবিরোধী ও শয়তান দাবি করে সেতুর নিচে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার কিছুদিন পরেই সে নিজেও একই সেতু থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেকেই তাই মনে করে ব্রিজটিতে আছে অশুভ কোনো শক্তির প্রভাব।
ড. স্যান্ড প্রাণী আচরণের গবেষক। তিনি বলেছেন, ব্রিজের দুই পাশেই রয়েছে পাথরের তৈরি মাঝারি উচ্চতার দেওয়াল। কুকুরগুলো তাই বুঝতেই পারে না সেতুর নিচে কী রয়েছে। আর এই বিভ্রান্তি থেকেও লাফিয়ে পড়ে। স্যান্ডসহ অন্য গবেষকরা মনে করেন, ঝাঁপ দেওয়ার এই প্রবণতাটি আসলে আত্মহত্যার ইচ্ছা নয়। ব্রিজটির আশপাশেই ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মিঙ্ক (বেঁজিজাতীয় প্রাণী) ও ইঁদুর। উজ্জ্বল ঝলমলে রোদের দিনে বাতাসে এসব প্রাণীর গন্ধ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ছড়িয়ে যায়। কুকুরগুলো মিঙ্কের আর্কষণেই সেতুর দেওয়ালে চড়ে। তারপর এর উচ্চতা কত তা বোঝার আগেই ঝাঁপ দেয়।সারা স্কটল্যান্ডে প্রায় ২৬ হাজারের মতো মিঙ্ক রয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, শুধু নির্দিষ্ট এই সেতুটি থেকেই কেন কুকুরগুলো লাফ দিয়েছে। ২০০৫ সালে ছয় মাসেই এভাবে মারা যায় পাঁচটি কুকুর।
অনেকেই মনে করেন অতিপ্রাকৃত শক্তি ও মহাজাগতিক কোনো কিছু এই জন্য দায়ী। তার কারণ এই ব্রিজটি এমন স্থানে অবস্থিত যেখান থেকে স্বর্গের দরজার দূরত্বটা খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞ শেফাড মনে করেন, কুকুরের আত্মহত্যার পেছনে সাইকোসিস নামক একটি মানসিক রোগ থাকতে পারে। তাই বলে এই একটি মাত্র ব্রিজ থেকে এবং একটি মাত্র দেশে কেনো এই ঘটনা ঘটবে?
প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধ নিয়ে কাজ করা স্কটিশ সোসাইটি কুকুরের অদ্ভুত এই আচরণটির কারণ খুঁজে বের করতে ওভারটনে এ পর্যন্ত অনেক গবেষককেই পাঠিয়েছে। তবে প্রকৃত কারণটি আজও অজানাই থেকে গেছে……