ওয়েব ডেস্কঃ বিশ্বময় আজ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে দিনদিন। আজ যে শুধু নারীরা তা নয়, পুরুষরাও আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে। মূলতঃ দু’ ধরণের কারণ এই ক্যান্সারের পেছনে দায়ী। প্রথমত, অপরিবর্তনযোগ্য কারণ এবং পরিবর্তনশীল কারণ। অপরিবর্তনযোগ্য কারণ বলতে মূলত জেনেটিক অর্থাৎ বংশগত ঝুঁকিসমূহ এবং হরমোন দায়ী । পরিবর্তনযোগ্য কারণগুলি পুরোপুরি আমাদের নিজেদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রার সাথে জড়িত। শুধুমাত্র নারীর নয়, ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর ব্যাপারে জেনে রাখা উচিৎ পুরুষেরও। চলুন, দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু শারীরিক লক্ষণ যার পেছনে দায়ী হতে পারে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার….
পিন্ড বা লাম্প…
স্তন ক্যান্সারের একটি প্রধান ও মূল লক্ষণ হলো স্তনে শক্ত এবং ব্যথাবিহীন একটি পিন্ড। নিপলের ঠিক পেছনে বা পাশেই মূলত এই পিন্ড দেখা যায়। অনেক সময়ে পুরুষের স্তনে পিন্ড দেখা যায় তবে সেসব পিন্ড হয় নরম এবং তাকে চাপ দিলে সরে যায়। ব্রেস্ট ক্যান্সারের ফলে যে লাম্প বা পিন্ড সৃষ্টি হয় সেটা মূলতঃ শক্ত হয়। এক্ষেত্রে চাপ দিলেও পিন্ডটি সরবে না। গাইনেকোম্যাস্টিয়া নামের একটি হরমোন এর পেছনে দায়ী। পেকটোরাল বা বক্ষদেশে সৃষ্ট এই লাম্প কর্কট রোগের বীজাণু বহন করছে কিনা, তা জানতে ম্যামোগ্রাম এবং কখনো কখনো নিডল বায়োপসি পরীক্ষার দরকার হয়।
আকৃতির পরিবর্তন…
অনেক সময়ে স্তনের আকারেও হঠাৎ অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে দেখা যায়। আকার-আকৃতির এই পরিবর্তন এবং কোনো ব্যথা এড়িয়ে গেলে চলবে না, এগুলি হতে পারে ক্যান্সারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
নিপল বা স্তনবৃন্তের পরিবর্তন…
স্তনের পাশাপাশি নিপলের বা বোঁটার আকার, আকৃতি, রং বা ত্বকে কোনো পরিবর্তন হলে সাথে সাথেই ডাক্তারকে জানানো উচিত। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০-৫০ শতাংশ ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি দেখা যায়। এছাড়া, স্তনবৃন্তে লালচেভাব এবং খসখসে হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলিও দেখা যায়।
লাল, ফোলা স্তনঃ
স্তনে আঘাত লাগলে স্বাভাবিকভাবেই এটি ফুলে যাবে। কিন্ত স্তনে যদি দীর্ঘদিন ধরে গরম অনুভূত হয় কিংবা লালচে রঙ কিংবা স্তনগ্রন্থির স্ফীতি অথবা জ্বালা অনুভূত হয়, তবে সেক্ষেত্রে তা কর্কট রোগের কারণ বলে মনে করা হয়।এছাড়া স্তনের টিউমারের কারণে স্তন ফুলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগী নিজেই নিজের স্তন খালি হাতে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
নিপল(স্তনবৃন্ত) থেকে নিঃসরণ …
গর্ভবতী অবস্থায় কিংবা স্তন্যদায়িনী মা ছাড়াও সাধারণত নারীদের নিপল থেকে তরল জাতীয় পদার্থ নিঃসরণ তেমন অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবে পুরুষের ক্ষেত্রে এই ডিসচার্জ অবশ্যই অস্বাভাবিক ব্যাপার। সাধারণত এটিকে এক কথায় ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ বলা হয়। সাধারণত, এই নিঃসরণ স্বচ্ছ হতে পারে, আবার ক্ষেত্র বিশেষে এর সাথে রক্তও মিশ্রিত থাকতে পারে। মূলত, জামা-কাপড়ে দাগ থেকে সাধারণত পুরুষেরা এটা বুঝতে পারেন। নিঃসরণের ধরণ যেমনই হোক না কেন, তা চোখে আসার সাথে সাথেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই প্রয়োজন।
ত্বকের আকস্মিক পরিবর্তন…
ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণটিই হয় বুকের ত্বকে পরিবর্তন। তাদের ত্বকে লালচেভাব, র্যাশ এমনকি এডেমা অর্থাৎ রস জাতীয় পদার্থ নির্গত হতে দেখা যায়। এসব লক্ষণ দেখে ইনফেকশন মনে হতে পারে। অনেক সময়েই অনেকেই এই লালচেভাব এড়িয়ে যায় , কারণ সে মনে করে কাপড়ে ঘষা লেগে এমন হচ্ছে। এর পাশাপাশি স্তনপ্রান্তের আশেপাশে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বা দানা অথবা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
ব্রেস্ট বা নিপলে ব্যথা…
ক্যান্সার ছাড়াও অন্যান্য কারণে এই ব্যথা হতে পারে,যেমন- মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকের ঋতুস্রাবের আগে নিপলে ব্যথা অনুভব করে থাকেন যা সাধারণত, পিরিয়ডের পরেই নিজ থেকেই কমে যায়। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা, এক্ষেত্রে এই নিপল ডিসচার্জ ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি বড় লক্ষণ হতে পারে। কোন কারণ ছাড়াই যদি স্তনবৃন্তে ব্যথা অনুভব হয়, তবে অবশ্যই তা আপনার ডাক্তারকে জানানো দরকার।
হাড়ের ব্যথা…
সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে না। শনাক্ত করতে দেরি হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে। ব্রেস্ট ক্যান্সার খুব সহজেই হাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এ থেকে হাড়ের ব্যথা হয়।
লিম্ফ নোডের ফুলে ওঠা…
হাড়ের পাশাপাশি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে লিম্ফ নোডেও। ক্যান্সার শনাক্ত করতে দেরি হলে এমনটা দেখা যায়। মূলত বগলের আশেপাশে এক বা একাধিক লিম্ফ নোড ফুলে ব্যথা করতে পারে। এর পেছনে অন্যান্য কারণও থাকতে পারে বটে। কিন্তু ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেওয়াটা খুব জরুরী।
লক্ষণ দেখা দিলে কী করা উচিত ?
এসব লক্ষণের কোন একটি বা একাধিক যদি রোগীর মধ্যে দেখা যায়,তবে খুব দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শে যাওয়া উচিত। প্রথমেই ম্যামোগ্রাম ও আলট্রাসাউন্ড করে নেওয়া দরকার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বায়োপসিও রোগীকে করা হয়। তাই পুরুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম এই ভেবে নিশ্চিন্ত থাকা মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয় এবং উপরিউক্ত লক্ষণ অবহেলা করা উচিত নয়। প্রসঙ্গত, বলে রাখা উচিত,প্রাথমিক পর্যায়ে এই কর্কট রোগ ধরা পড়লে তা সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে হলে…
মূলতঃ বংশগত বা জিনগত কারণ এবং বয়সের সাথে হরমোন লেভেলের তারতম্যের ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কিছু কিছু ব্যাপার আমরা অনায়সে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে তা সকলেরই উপকারে আসবে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, প্রচুর টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া, টিনজাত খাবার বর্জন করা, ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দেওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা শুধু ব্রেস্ট ক্যান্সারই নয়, যে কোনো ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।