ওয়েব ডেস্কঃ ” Anybody can make history / only a great man can write it “…( অস্কার ওয়াইল্ড )
ইতিহাস গড়তে পারে অনেকে, কিন্তু সৃজন কল্পে কলম কাঠি গড়তে পারে কয়েকজন! কালের প্রেক্ষাপট ধরে দিনলিপির ঐতিহাসিকতা। আজ “আন্তর্জাতিক নারী দিবস ” যার আদি নাম ছিল – ‘আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস“। ৮ ই মার্চ দিনটির সাথে নারী দিবস নামটি জড়িত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই দিনের আলেখ্য লিখতে হলে একই বিষয়ের বা ব্যক্তির উপলক্ষণ করে তার ঐতিহাসিকতা লেখা হয়, কিন্তু কেবল নারী দিবসে বিভিন্ন জায়গায় এক এক বিশিষ্টতা দেখিয়ে দিনের ইতিবৃত্ত পালন করা হয়। কোথাও সম্ভ্রম, কোথায় মর্যাদা, কোথাও অর্থনৈতিক, কোথাও রাজনৈতিক গুরুত্ব দান করা হয়, তবে সেটা নারীকে ঘিরে। আসুন দিনের উপলক্ষ দেখা যাক……সময়টা ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দ। শ্রমজীবী নারীদের দাবি তখন সোচ্চার। পুঁজিবাদ কে পরিসমাপ্ত করে শ্রমজীবী কে আনতে সোচ্চার ” কাস্তেটা শান দিয়ো বন্ধু”। কারণ শ্রমিক অত্যাচার তো চলছেই। এখানে লিঙ্গ নয়, ভেদ নয় বরং অত্যাচার টা সকলের ক্ষেত্রেই সমান। তাই নির্দিষ্ট সময় মানতে, অর্থের দাবি, বৈষম্য হীন সমাজের দাবি করেই মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা রাস্তায় নামলেন। আর প্রতিবন্ধক হয়ে রাস্তায় নামলে সরকারী লেঠেল বাহিনী যে অত্যাচার করবে তা সময়ের সাথে সাথে একই হয়ে আসছে। তবে গরিবানা পূর্ণ জীবনে আভিজাত্যের লেঠেল মনে হয় একটু বেশী চলে। আর তার অন্যথা হলো না। কারণ গরীবের চামড়া লাঠিখেলার পক্ষে যথাযথ।এবার আসি প্রতিবাদের পালায়। ১৯০৮ সালে “সোশ্যাল ডেমোক্রেট নারী সংগঠন” একটা সমাবেশ গড়ে তোলে। আর তাতে সমাজতান্ত্রিক জার্মান নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়।১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহার্গেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তির্জাতিক নারী সম্মেলন। এখানে ১৭ টি দেশ থেকে ১০০ জন প্রতিনিধি যোগ দান করে।এই সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ ই মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য প্রস্তাব রাখেন। এখন প্রশ্ন উঠিবে এই ক্লারা জেটকিন কে? ইতিহাস বলছে তিনি একজন মার্কসবাদী তাত্ত্বিক। এবার যদি কাল ধরে আলোচনা করি তবে বলতে হবে, তিনি ১৯১৭ সালে জার্মানির সমাজ গণতান্ত্রিক দলের কর্মী ছিলেন, পরে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক দলে যোগদান করেন। পরে অবশ্য স্পার্টাকাস থেকে জার্মানিতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। তিনি ১৯২০- ৩৩ পর্যন্ত রাইখস্ট্যাগের দলে প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯১১ সালে নারী সম অধিকার দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে ৮ ই মার্চ পালিত হতে লাগল, কিন্তু স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে। ১৯৭৫ সালে এই দিনটি স্বীকৃতি পায়, আর সেই দিন রাষ্ট্রসংঘ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান করে।এইভাবে ৮ ই মার্চ দিনটি নারী দিবস হিসাবে পালিত হয়।৮ ই মার্চ নারীদিবস – তবু পরিসংখ্যান মনে করিয়ে দিচ্ছে বার বার, ধর্ষণ, কুলীন বলি, নৈতিকতা আর ঔদ্ধত্য নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ, একাত্তরের সিলেট, গণধর্ষণ, যৌনক্রীতদাসী, কণ্য ভ্রূণ হত্যা, আর যৌনাঙ্গের ক্ষুন্নিবৃত্তি – সেখানে মোমবাতি নয়, প্রতিবাদ আর সমাজের রূপান্তর প্রয়োজন। ফিরে আসুক সম্মান, মর্যাদা প্রতি পদে স্থায়িত্ব পাক নিরন্তর।