ওয়েব ডেস্কঃ জল তো জীবন, তাই জল ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সাধারণত ভাবা যায় না। তবে যোগ সাধনার দ্বারা সম্ভব হলেও, জলের সাথে জীবনের সম্পর্কটা অস্বীকার করা যায় না। তাই আজ “বিশ্ব জলদিবসে”র প্রেক্ষাপটে কলকাতার টালা ট্রাঙ্কের ইতিহাস নিয়ে না হয় তথ্য সম্বৃদ্ধ হোক খবর ২৪ এর পাতা।
সময়টা আনুমানিক ১৯০১ সাল হলেও ভারত তখন স্বাধীনতা পায়নি। পরাধীন ভারতের বুকে কলকাতাকে জল দিতে ব্রিটিশ সরকার কয়েকটি পুকুরকে মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচুতে তুলে দিয়েছিল। কলকাতা কিন্তু তখন তিলোত্তমা হয়ে উঠে নি। কারণ সবে পাশ্চাত্য প্রভাব ধরা পড়ছে, নগরায়ন হবে। কিন্তু নগরায়ন বললেই কি সেটা সম্ভব? না, তার জন্য উপযুক্ত পরিষেবা প্রয়োজন। আর সেটা প্রয়োজন বলেই তো এই টালা ট্রাঙ্কের কথা উঠে আসে। আর প্রধান উৎস হলো বেশ কিছু পুকুরের জল সরবাহ। তবে তখন নাম বলতে ভবানীপুরের পুকুর, হেঁদুয়া, ওয়েলিংটন স্কোয়ার এই তিন জায়গা থেকেই জল সরবরাহ হতো। কিন্তু দেখা গেল মানুষের বাস ক্রমশ বাড়ছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে চাহিদা, তাই সরবরাহ যে বাড়াতে হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেই মুহুর্তে জলের ঘাটতি মেটাতে সেই সময়ের পুরো ইঞ্জিনিয়ার মিস্টার ডেভেরাল একটি ট্রাঙ্কের কথা বললেন, যা একপ্রকার প্রস্তাব বলা যেতেই পারে। আর সেই হ্যাঁ তে ইতিবাচক মত দিয়ে সহমত পোষণ করলেন তাঁর সহকারী মিস্টার পিয়ার্স। বেঙ্গল গভর্নমেন্ট কিন্তু সেই মতে সাথ দিয়েছিলেন। ১৯০১ সালে প্রস্তাব আর ১৯০২ সালে কর্পোরেশন গ্রহণ করলেন। কিন্তু তারপরই পুরো ইঞ্জিনিয়ার বদলে যায়। নয়া নিযুক্ত হন ডব্লু বি ম্যাক ক্যাবে। তিনি ৬৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৪ অঙ্কের প্রস্তাব রাখেন। আর এতে নাকি আরো উন্নত জল পাওয়া সম্ভব বলে পুরোসভা সম্মানিতও হয়।
কিন্তু প্রশ্ন কোথায় হবে সেই ওভারসেড ট্রাঙ্ক? আর জায়গা বলতে টালা বেছে নিল পুরোসভা। কিন্তু কেন? কারণ সেখানেই ছিল বেশ কিছু পুকুর । আর এই পুকুর ভরাট করে তৈরি হবে ১১০ ফুট উঁচুতে। আর মাধ্যাকর্ষণের সাহায্য এই জল সরবরাহ নীচে দিকে সরবরাহ করা যাবে, তাই তো বলাই যায় যে জলের তাগিদ মেটাতে পুরো সভা বেশ কিছু পুকুরকে ১১০ ফুট উঁচুতে নিয়ে গেলো,তৈরি হলো ওভারসেড ট্রাঙ্ক। ১৯০৯ এর ১৮ ই নভেম্বর এর উদ্বোধন করলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার এডওয়ার্ড বেকার। কিন্তু কেমন করে হলো এই কাজ। প্রথমে পুকুর বোজা, তারপর জলশুন্য তারপর শাল বল্কার খুঁটি যোগে ২০ – ২৫ ফুট পাইল করে খোয়া সহকারে ভর্তি করা হলো। ভারী স্ট্রিম রোলার দিয়ে পেস্ট করে ৯ ইঞ্চি পুরু স্তর তৈরি।হলো। তারপর আড়াই ফুট কংক্রিট সিমেন্টের উপর ফ্ল্যাট স্টিল টাঁইয়ের সাথে বোল্ড স্টিল জয়েন্টের উপর স্তম্ভ দাঁড় করানো হলো। আর ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছিলেন টি সি মুখ্যার্জী অ্যাণ্ড কোম্পানি। তবে বাকিটা করেন লিডসের ক্লেটন কোম্পানি।১৯১১ -১২ তে শেষ হলে তারপর সেই বছরই ব্যবহার শুরু হয়। তখন কার দিনে এর খরচ পড়ে ২২ লক্ষ ২৫ হাজার ৪১ টাকা।
তবে জানেন কি এই ১০ তলার সমান ওভারহেড রিসার্ভ বিশ্বের বৃহৎতম রিজার্ভার।এটি আয়তনে ১ লক্ষ বর্গফুট, গভীরতা ১৬ ফুট – মানে একটা খেলার মাঠ পুরো ঢুকে যাবে।এই রিজার্ভার ৯ লক্ষ গ্যালন জল ধরতে পারে। লোহার খাঁচাটির ওজন ৮ হাজার ৫০০ টন, আর এটি বৈশিষ্ট্য হলো কোন রকম সরবরাহ বন্ধ না রেখেই পরিষ্কার বা সারাই -এর কাজ করা যেতে পারে, কারণ এই ভাবে কম্পার্টমেন্টটি বিভক্ত। বলা বাহুল্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান লক্ষ্য রেখে টালা ট্রাঙ্কে বোমা ফেলে আর তাতে মাত্র ৯ টি ফুটো হয়। কিন্তু ধ্বংস নৈব নৈব চ। ১৯৬২ আর ১৯৭১ এ চীন আর পাকিস্তান ও এই টালা ট্রাঙ্ক কেই নির্দিষ্ট করে। তবে বলতেই হয় ইতিহাস বলছে লক্ষের বস্তু হলেও, এই রিজার্ভার কিন্তু নিজেকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা রাখে, তাই ধ্বংস হয় নি, বরং ইতিহাসের প্রতীকী হিসাবে হলুদ পাতায় স্পষ্ট হয়ে আছে।