ওয়েব ডেস্কঃ “ম্যানেকুইন “, হ্যাঁ, পুতুল অবয়ব। আমরা দোকানে দেখি সাজানো রয়েছে হরেক জামাকাপড়ে, কিন্তু কেন এই সাজ? আরে ব্যবসা করব আর প্রদর্শন করব না এমনটা তো হতে পারে না। সুন্দর সুন্দর মুখে জামা কাপড় পড়িয়ে ক্রেতাসাধারণকে আকর্ষণ করা। তবেই তো মানুষ কিনবে সেই পোষাক।কিন্তু পুতুলের অবয়বে যদি সত্যি মানুষ দেহ হয়।কথাটা শুনলে একটু শিহরণ হলো তাই না? হ্যাঁ, তাই আমি যে অঘটনের কথা বলছি তা পড়লে প্রেত বলে মনে হবে।এখন প্রশ্ন কে মানবে এই প্রযুক্তির যুগে সেই প্রেত কথা। কথায় বলে যে, মানুষের চোখের বাইরেও কিছু জিনিস ঘটে,আবার তা বিশ্বাসও করতে হয়। তাই সেই বিশ্বাস নিয়েই একবার চোখ রাখুন ২৪ ঘন্টার পাতায় ……
মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া শহরে বিয়ের পোশাকের দোকানের শোকেসে ৭৫ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যানিকুইনের রোমহর্ষক কাহিনি। শুনলে শরীর হিম হয়ে রোম দাঁড়িয়ে যায়। কারণ এ পুতুল নাকি হঠাৎ গভীর রাতে হলে মানুষের আকার ধারণ করে আর উড়ে যায় ফরাসি যাদুকরের সাথে। এ যেন কাল্পনিক গল্পের সম্ভার – তবে এ গল্প পাসকুয়ালিতার সাথে। আসুন তবে জেনে নি, এই ম্যানিকুইনের সাথে আসল গল্পটি কি? ১৯৩০ সালের ২৫ মার্চ এই দোকানটিতে এই আশ্চর্য ম্যানিকুইন বসানো হয়। যারা দর্শক তারা প্রথমে এই ম্যানিকুইনকে দেখেন, কিন্তু রোমহর্ষক অনুভূতিতে এক মুহুর্তের মধ্যে জেনে নিতে অসুবিধা হয় না যে, এই পুতুল আর কেউ নয় বরং স্বয়ং লা পাসকুয়ালা এসপারাজা । এবার প্রশ্ন নিশ্চয় আসবে কে সে? কি কারণেই বা দর্শকের এমন শিহরণ? কেনই বা, তাদের কাছে এমন চেনা মুখ বলে মনে হচ্ছে?
বলি তবে, এই ম্যানিকুইন বসানোর বেশ কিছুদিন আগেই ছিল দোকানের মালকিন পাসকুয়ালা এসপারাজা মেয়ের বিয়ের দিন। কিন্তু ভাগ্য তাকে গ্রাস করে। বিয়ের দিন বিষাক্ত ব্ল্যাক উইডো মাকড়সার দংশনে প্রাণ হারান তরুণী ।আর শোকাহত বাবা, মা, কি বা করতে পারেন? কারণ বুকে আছে সন্তান হারানোর প্রকট যন্ত্রণা আর মেয়ের মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কান্নার সেই ভাঙ্গা মনে মেয়েকে চিরজীবনের মতো চোখের সামনে পেতেই মেয়ের দেহ দিয়েই ম্যানেকুইন বানান।
সেই কাল আর নেই। বদলে গেছে মালকিন। দোকানের মালিকানা আজ অন্যের হাতে, কিন্তু কি হবে তাতে, সে ম্যানেকুইন আজ ও আছে। দোকানে প্রতিসপ্তাহে দুদিন এই ম্যানেকুইনের দেহ থেকে পোশাক বদলানো হয়। আর সেই কাজটা করেন সনিয়া বার্সিয়াগা। তবে জানেন কি, তিনি নাকি এ কাজ করতে করতে ঘেমে যান, অবিশ্যই উদ্বেগে। তবে এ তার নিজস্ব ভয় নয়, বরং ঘটনার সত্যতা তাঁরা জানেন। কারণ মানুষের মতো ম্যানেকুইন দেহের চামড়া চকচকে। শিরা – উপশিরা দেখা যায়। আর এই ম্যানেকুইন স্থান পরিবর্তন করে। শোনা যায় তার চোখ নাকি ক্রমাগত ঘোরে। দোকানের কর্মীরা নাকি কাজের শেষে একা দোকান থেকে বেরোতে ভয় পান। তাই তারা একসাথে সঙ্গবদ্ধ ভাবে বেরোতে চান। তাঁদের মনে হয়, যদি এই জীবন্ত ম্যানেকুইন সত্যি সত্যি যাদুকরের কাছে উড়ে যায়, যদি সেই জীবন্ত প্রতিমূর্তি তাদের নিজেদের সামনে মানুষ রূপ ধারণ করে, তবে সে তারা সহ্য করতে পারবেন না।
এখন প্রশ্ন হাজার, মেক্সিকোর প্রাচীন সভ্যতায় মমি তৈরি সম্ভব ছিল, কিন্তু আজ বিংশ শতকে দাঁড়িয়ে এ সংরক্ষণ অসম্ভব। তবে তা আর মানবে কে? দলে দলে মানুষ আজও আসে এই ম্যানেকুইন দেখতে। কারণ তাঁদের বিস্ময়ের জায়গা বলে কি করে ৭৫ বছর ধরে এই পুতুল সংরক্ষিত আছে, তা অমূলক নয় তো? আবার অনেকে সন্দেহ নিরসন করতে আসেন, যে এই সেই হতভাগিনী কন্যা, লা পাসকুয়ালিতা কি, সেই যে বিবাহের রাতেই মারা যায়। প্রশ্ন আসবেই, কিন্তু সন্দেহ আর অলৌকিকতা নানা কিংবদন্তী তৈরি করবে।
তবে বর্তমানে ‘ম্যানেকুইন চ্যালেঞ্জ’-র ম্যানিয়ায় মাত গোটা বিশ্ব। যখন পুতুল তৈরি হতে হবে একমুহুর্তে।আর পরিধি ভাবছেন? অনেকটাই, যেমন কমেন্ট্ররুম থেকে পর্তুগালের ড্রেসিংরুম। সিআর সেভেন থেকে কপিল-শাস্ত্রীরা এখন ম্যানেকুইন চ্যালেঞ্জে মজেছেন। তাই আজ এই বিস্তৃতি অনেকটাই। তবু এমন অলৌকিক ম্যানেকুইন পাসকুয়ালিতা আজও সকলের মুখে মুখে ঘুরে ফেরে। আর তার আকর্ষণ সে তো দর্শক বলছে। বছরের পর বছর ধরে তারা এই টানেই মেক্সিকো আসছেন, তবে নিশ্চয় “পাসকুয়ালিতা” র টানে। এখানেই তার সার্থকতা।
ভিডিও দেখুন…….