কৈলাস পর্বতে বাস হর-পার্বতীর | হিন্দুধর্মের সনাতন বিশ্বাস | আসুন জেনে নিই এই পবিত্র ভূখণ্ড নিয়ে কিছু কথা | শুধু হিন্দু ধর্মই নয় | কৈলাস এবং মানস সরোবর পুণ্যভূমি বলে মনে করা হয় বৌদ্ধ‚ জৈন এবং বন ধর্মবিশ্বাসেও |ভৌগোলিক ভাবে কৈলাস পাহাড় আছে তিব্বত মালভূমিতে‚ চিন-তিব্বত ভূখণ্ডে | ছটি পর্বত শ্রেণী পদ্ম ফুলের পাপড়ির মতো ঘিরে আছে কৈলাস পাহাড়কে | ২২ হাজার ফিট উচ্চতার কালো পাথরের এই পাহাড়কে প্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর স্তম্ভ বলে মনে করা হয় | যা নাকি ধরে রেখেছে পৃথিবীর ভর |
প্রাচীন বিশ্বাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে আধুনিক সন্ধানেও | রুশ ভূবিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন‚ কৈলাস শুধু পাহাড় নয় | বরং এটির অবস্থান একটি অক্ষ বা অ্যাক্সিসের মতো | অনেকে আবার একধাপ এগিয়ে মনে করেন ভিন গ্রহের মানুষ এসে বানিয়ে গেছে কৈলাস পাহাড় | এবং এটি একটি পিরামিড!
সবথেকে আশ্চর্যজনক হল‚ কৈলাস পাহাড় এখনও কেউ জয় করতে পারেননি | বিশ্বের নানা দেশ থেকে এসে চেষ্টা করেছেন পর্বতারোহীরা | কিন্তু তাঁদের কারও প্রয়াস সফল হয়নি | কৈলাস থেকে গেছে অধরা | অথচ এই পাহাড় কিন্তু দুর্গম নয় | এর থেকে অনেক বেশি দুর্গম শৃঙ্গ জয় করেছেন পর্বতারোহীরা | কিন্তু কোনও এক রহস্যময় কারণে তাঁদের কাছে অজেয় কৈলাস |
সংস্কৃতে কেলাস (Crystal) কথা থেকে কৈলাস কথাটির উৎপত্তি | কারণ বরফে ঢাকা কৈলাসকে দেখতে লাগে স্ফটিকের মতো | তিব্বতি ভাষায় এর নাম গাঙ্গো রিনপোচে | তিব্বতে বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবাকে বলা হয় রিনপোচে | তাঁর থেকেই নামকরণ হয়েছে কৈলাস পর্বতের | অর্থ হল বরফের তৈরি দামী রত্ন |
তিব্বতে প্রচলিত প্রাচীন কিংবদন্তি হল‚ গুরু মিলারেপাই শুধু পা রাখতে পেরেছিলেন কৈলাস-শীর্ষে | ফিরে এসে তিনি নিষেধ করেছিলেন এই পর্বত জয়ে যেতে | কারণ একমাত্র সে-ই মানুষই পারবে এর শীর্ষে যেতে‚ যার গায়ে কোনও চামড়া নেই | আধুনিক পর্বতারোহীরাও বলছে মাউন্ট কৈলাসা ইজ আটারলি আনক্লাইম্বেবল | কেন‚ সে কারণ অস্পষ্ট |
কৈলাস পাহাড়ের পায়ের কাছে আছে মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল | এ দুই হ্রদ এশিয়ার বেশ কিছু দীর্ঘতম নদীর উৎস | ১৪‚৯৫০ ফিট উচ্চতায় মানস সরোবর বিশ্বের উচ্চতম মিষ্টি জলের হ্রদ | প্রকৃতির আজব সৃষ্টি !মানস-রাক্ষস দুই হ্রদ পাশাপাশি আছে | অথচ‚ মানসে আছে মিষ্টি জল | আর রাক্ষসে নোনা জল | মানস সরোবরের জল শান্ত | কিন্তু রাক্ষস তালের জল অশান্ত | রামায়ণে বলা হয়েছে শিবের পরম ভক্ত রাবণ তপস্যাবলে সৃষ্টি করেছিলেন এই হ্রদ |
দেখা যাক কৈলাস-রহস্যের কয়েকটিকে~
• পশ্চিম তিব্বতের এই পর্বত কেবল হিন্দুদের কাছেই নয়, জৈন, বৌদ্ধ, তিব্বতের প্রাচীন ‘বন’ ধর্ম— সব ক’টিই কৈলাসকে পবিত্র বলে মনে করে। তিব্বতী তান্ত্রিক ঐতিহ্য অনুযায়ী কৈলাস তাঁদের দেবতা ডেমচমংয়ের আবাস। হিন্দুদের মতে এখানে বাস করেন শিব। জৈন-ধারণায় কৈলাসের বাসিন্দা তাঁদের প্রথম তীর্থঙ্কর। এই তিন ধর্ম অনুসারে কৈলাসে আরোহণ নিষিদ্ধ।
• এক সময়ে রাশিযান বিশেষজ্ঞরা কৈলাস কে একটি বিশালাকৃতি পিরামিড বলে বর্ণনে করেছিলেন। তাঁরা এই পর্বতকে মানুষের তৈরি বলেও জানান। কোনও গোপন কাল্টের উপাসনাস্থল হিসেবে তাঁরা কৈলাসকে ব্যক্ত করেন। খুঁটিয়ে দেখলে কৈলাসের পিরামিডাকৃতি বোঝা যায়।
• ইউরোপের অকাল্টবাদীরা কৈলাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাঁদের মতে, এখানে অতিপ্রাকৃত শক্তির অবস্থান। অনেকের মতে আবার এই স্থান যাবতীয় অতিপ্রাকৃতের কেন্দ্র।
• পুরাণ অনুযায়ী কৈলাস পর্বতের চারটি পাশ স্ফটিক, চুনি, সোনা এবং লাপিস লাজুলি দ্বারা গঠিত। এই তথ্য সত্য নয়। কিন্তু, দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোর পড়ে এই সব পাথর বা ধাতুর বিভ্রম কৈলাস অবশ্যই তৈরি করে।
• কৈলাস অঞ্চলে অবস্থিত হ্রদগুলির আকৃতি রহস্যময়। মানস সরোবর পূর্ণ গোলাকার এক জলাশয়। রাক্ষস তালের আকৃতি অর্ধচন্দ্রাকার। এরা নাকি সূর্য ও চন্দ্রের শক্তিকে প্রকাশ করে।
• কেবল এটুকুই জানা যায়, ১১ শতকের তিব্বতী মহাযোগী মিলারেপাই একমাত্র কৈলাসে আরোহণ করেছিলেন।
• কৈলাস পাহাড়ের আবহাওয়ায় এমন কিছু আছে যাতে নাকি মানুষের চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ দ্রুত ফুটে ওঠে | সাধারণভাবে মানুষের নখ-চুল যে হারে বাড়ে‚ কৈলাস পাহাড়ে অন্তত ১২ ঘণ্টা কাটালে নাকি এই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে যায় | এরকমই হাজারো বিস্ময়ের ধারক ও বাহক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধ্যানস্থ মহাদেবের আবাস কৈলাস পর্বত |