পুরনো ও নতুন দিল্লীর কিছু বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ ভুঁড়িভোজের ঠিকানাঃ-
আমি বরাবরই খাদ্য রসিক, চট পটা খাবার, তা ফুচকা বা পাপড়ি চাট হোক বা চিকেন এগ রোল অথবা বিরিয়ানি, প্রায় প্রতি weekend এ একটু ঘুরতে বেড়িয়ে খাওয়া দাওয়া করার নেশাটা সর্বদাই পেয়ে বসে। এমনিতেই আমরা বাঙালিরা স্বভাবে ভ্রমণ প্রিয় হয়ই, আর এই ভ্রমনের সাথে সাথে যদি সেই জায়গার স্পেশাল খাবার গুলির স্বাদ নেওয়া যায় তবে তো সোনায় সোহাগা।
দেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছি, থেকেছি কিন্তু রাজধানী দিল্লী আমার খুব পছন্দের। রাজনৈতিক ও কিছু আশ্চর্যজনক ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ এর জন্য যেমন দিল্লী প্রসিদ্ধ ঠিক তার পাশাপাশি এখানকার মুখে জল আনার মত এখানকার ‘street food’ও খুব আকর্ষণীয়। শুধু এখানকার মোঘলাই খাবারের স্বাদের জন্য সব জায়গা থেকে এমনকি পাকিস্তান থেকেও পর্যটকরা আসেন। আসুন… চলুন আমার সাথে বেরিয়ে পড়ুন দিল্লীর কিছু খাঁটি ও নামকরা মুখরোচক খাওয়ার উপভোগ করতে, যা আপনার পেটের সাথে সাথে মনকেও সন্তুষ্টি দেবে…
‘পরাঠা(পরোটা) বালি গলি’
পুরানো দিল্লীর চাঁদনী চৌকে অবস্থিত এই পুরো জায়গাটা ‘পরাঠা বালি গলি’ নামে পরিচিত। কারন এখানে রয়েছে শুধু পরোটার দোকান। আর এসবগুলই পুরোপুরিভাবেই নিরামিষ। আলু পরোটা, বাঁধাকপির পরোটার সাথে সাথে আপনি পেয়ে যাবেন কাজু, বাদাম, মটরের মিক্সড পরোটা, রাবড়ি, খোয়ার পরোটা …ইত্যাদি সব ধরনের পরোটা। এই পরোটা গুলি সাধারণত তেঁতুলের মিষ্টি চাটনি, পুদিনার চাটনি, মিক্সড সব্জির আঁচার, আলু-পনিরেরে সব্জি অথবা মেথি আলুর সব্জির সাথে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন হল চাঁদনী চৌক, বা চলে আসুন কোন প্রাইভেট গাড়ী দিয়ে জায়গাটি কে চিনতে মোটেই অসুবিধে হবে না।
[আমার মত আপনিও যদি ভ্রমণ প্রিয় খাদ্য রসিক হন তবে দিল্লী লাগোয়া হরিয়ানার মুরথলে রয়েছে শুধু পরোটা স্পেশাল কিছু বিখ্যাত ধাবা। মনোরম আবহাওয়ায় যেকোনো ছুটির দিনে বেড়িয়ে পড়ুন, দিল্লী থেকে মাত্র দু ঘণ্টার দূরত্বেই মুরথুল। পরোটা স্পেশাল ধাবা গুলির জন্য শীতকালে দিল্লীবাসিদের জন্য মুরথুল হয়ে উঠেছে প্রিয় পিকনিক স্পট।]
‘লালা বাবুর’ চাট ভাণ্ডার
চাট কথাটি শোনার পর এমনিতেই সবার মুখে জল এসে যায়, তার উপর যদি আপনি ভারতের অন্যতম নামকরা কোন চাট ভাণ্ডারে যেতে পারেন তবে তো ‘কেয়্যা বাত হ্যায়’। পুরানো দিল্লীর চাঁদনী চৌকে অবস্থিত ‘লালা বাবুর’ চাট ভাণ্ডার খুবই প্রসিদ্ধ।
এখানে চাট বানানো হয় শুদ্ধ দেশী ঘি এবং ভেজালহীন উপাদান দিয়ে। গোল গপ্পা মানে ফুচকা, দই বল্লা, সিঙ্গারা, কচুরি, পাব-ভাজি এবং টিক্কি এখানকার অন্যতম মুখরোচক খাবার। এছাড়াও আপনি পেয়ে যাবেন তাজা বানানো চটপটে ফ্রূট চাট।
৭৭, চাঁদনী চৌক, ওল্ড দিল্লী। মেক ডও নালডের বিপরীত। সময়- সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা অবধি।
শ্রী বালাজি চাট ভাণ্ডার
এটি ‘রাধা স্বামী’ চাট ভাণ্ডার নামেও পরিচিত এবং চাঁদনী চৌকের প্রসিদ্ধ প্রাচীনতম খাদ্য ভাণ্ডার। যদি আপনি কিছুটা হিসেবি হন তবে শ্রী বালাজি ভাণ্ডারের চাটকে মিস করবেন না। মুচমুচে ভাঁজা পাপড়ির সাথে মাখা আলু সেদ্ধ, দই, সেদ্ধ ছোলা, তেঁতুলের মিষ্টি চাটনি, পুদিনার চাটনি, দিয়ে বানানো চাট স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, যা আপনি অন্য কোথাও পাবেন না। দু’জন ব্যক্তির জন্য মূল্য একশ টাকার থেকে বেশী হয় না।
১৪৬২, চাঁদনী চৌক, ওল্ড দিল্লী। খোলা থাকে প্রায় রাত ১০ টা অবধি।
খানদানি পকোড়া বালা
গরম চা বা কফির সাথে গরম গরম পকোড়া খাওয়া শীতকালে এর তুলনা আর কোন কিছুর সাথে হয় না। সরোজনী নগরের রিং রোডের মার্কেটে অবস্থিত খানদানি পকোড়া বালা আমাদের মত খাদ্যপ্রেমিদের জন্য বড়ই সখের জায়গা। এখানে আপনি পেয়ে যাবেন প্রায় দশ প্রকারের বিভিন্ন পাকোড়া। ব্রেড পাকোড়া, পনীর পাকোড়া এর মধ্যে প্রমুখ, আর এর সাথে দেওয়া চাটনি জিবে জল এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর এই সুস্বাদু পাকোড়া গুলোর দাম মাত্র দশ থেকে কুড়ি টাকার মধ্যেই।
খানদানি পাকোড়ার একদম বিপরীতেই রয়েছে ‘কুলচা কিং’ । যেখানে আপনি পেয়ে যাবেন অমৃতসরই ছোলা – কুলচা, যার মূল্য সত্তর থেকে একশ টাকার মধ্যে।
কবাব কর্নার
আমার এই পুরোটা খাদ্য তালিকাটাই বেকার হয়ে যাবে যদি আমি এতে দিল্লীর মূল ঐতিহ্যবাহী খাবার বা মুঘলিয় খাবারের উল্লেখ্য না করি। আর এই মুঘল ফুড চেইনের অন্যতম হল “করীমস” (Karim’s)। দিল্লিতেই রয়েছে করীমসের আদি শাখা যা ‘জামা মসজিদ’ এর নিকট অবস্থিত। মটন কোরমা, চিকেন রেশমি কবাব, মটন বুরা, দম বিরিয়ানি, চিকেন জাহাঙ্গিরি, শিরমাল ইত্যাদি সব প্রকার মুঘল স্পেশাল খাবার আপনি পেয়ে যাবেন। ১৬, গলি কাবাবিয়ান, জামা মসজিদ, নিউ দিল্লী। সময়- সকাল ১১ টা থেকে রাত সাড়ে ১১ টা অবধি।
করীমস ছাড়াও রয়েছে ‘সেলিম কবাব’ সপ। দক্ষিণ দিল্লীর ডিফেন্স কলোনি মার্কেটে অবস্থিত এই কবাব সপে আপনি পেয়ে যাবেন মুখে জল আনার মত রেশমি কবাব, চিকেন মালাই কবাব, শিখ কবাব, বা রুমালি রুটিতে রোল করা কবাব যা মুখে দিলেই খুব সহজে মেলট হয়ে যায়। চলে আসুন দক্ষিণ দিল্লীর নিউ ফ্রেন্ডস কলোনির মার্কেটের Al Bake center এ, এখানকার সরমা রোল স্থানীয় বাসিন্দাদের খুবই পছন্দের। মূল্য মাত্র ৬০ টাকা এবং এ সন্তুষ্টির চেয়ে অনেক বেশী।
দোলমা অ্যান্টির মোমো
মোমো আজকাল ছোট বড় সবার খুব প্রিয় খাবার। লাজপথ নগরের সেন্ট্রাল মার্কেটে অবস্থিত দোলমা অ্যান্টির মোমো সপ স্থানীয় মোমো লাভারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। মোমোগুলি আশ্চর্যজনক সুস্বাদু ও নরম। মোমোগুলির সাথে পরিবেশন করা হয় দুপ্রকার শুঁকনো লঙ্কা ও রসুনের চাটনি। পেয়ে যাবেন ভেজ, চিকেন, পনীর মোমো।
চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালি মার্কেট
আমরা বাঙালিরা যতই অন্য খাবার খাই না কেন মুখে একটু মাছ ভাত বা রসগোল্লা না পড়লে সন্তুষ্টি পাই না। দক্ষিণ দিল্লীর চিত্তরঞ্জন পার্ক যা মিনি ক্যালকাটা নামে পরিচিত পুরো দিল্লী বাসিদের কাছে, এখানে আপনি পেয়ে যাবেন সবপ্রকার বাঙালি খাবার। এক নাম্বার মার্কেট, দু নাম্বার মার্কেট, তিন নাম্বার মার্কেট, আর প্রতিটি মার্কেটে রয়েছে বেঙ্গল ফুড কর্নার বা রেস্টুরেন্ট। চিংড়ির মালাই কাড়ি, ভাপা ইলিশ, পাঁঠার কসা মাংস থেকে শুরু করে পেয়ে যাবেন আলু পোস্ত, ছোলার ডালও। রয়েছে অনেক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। মিষ্টি দই, চমচম, গুঁড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা …সবই রয়েছে।
পান ভাণ্ডার
খাবার শেষে একটু পান খেয়ে নিলে বেশ হয়। আর পান যদি এখানকার কিছু বিখ্যাত পান ভাণ্ডারের হয় তবে যারা পান খান না তারাও এখানকার পান খাওয়ার জন্য বারবার ছুটে আসবেন।
সেন্ট্রাল দিল্লীর connaught place এ রয়েছে Odeon পান ভাণ্ডার, Jain পান ভাণ্ডার, Pandey’sপান ভাণ্ডার। পেয়ে যাবেন এমন পান যা হয়ত আপনি কক্ষনো খান নি বা নামও শুনেন নি।
চুসকি পান, চকলেট পান, strawberry পান, black currentপান, butterscotch পান, ice পান, এমনকি flaming পানও। না না চিন্তার কিছু নেই তাই বলে আপনার মুখে আগুন লাগবে না। flaming পান মিষ্টি গুল্কন্দ পানের মতই হয় যার মধ্যে মেন্থল দেওয়া হয় তাই এতে আগুন ধরা যায়।