Home অফ-বিট জেনে নিন, যুগ যুগ ধরে ভারতে চলে আসা “পাশবিক – বর্বর – ঘৃণ্য” কিছু নারী প্রথা…

জেনে নিন, যুগ যুগ ধরে ভারতে চলে আসা “পাশবিক – বর্বর – ঘৃণ্য” কিছু নারী প্রথা…

ওয়েব ডেস্কঃ ভারতবর্ষ বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ সমন্বিত একটি দেশ। বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদের বিভিন্ন প্রথার মাধ্যমে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান সমাধা করে। সেই সকল প্রথার সাথে সামাজিকতার সাথে সাথেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন দেখা যায় যা যুগ যুগান্ত ধরে ভারতীয় নারীদের ওপরে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা করে গেছে ও বহুলভাবে সফল হয়েছে। মূক, অবলা, নিরীহ তকমার আড়ালে নারীদের যাবতীয় নৈতিকতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের বিভিন্ন রীতি রেওয়াজের ঘেরাটোপে বন্দী করে রাখার চেষ্টা, সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাকে হেয় করার চেষ্টা সর্বদা চলেছে।

Image result for প্রথার নামে নারীদের ওপর অত্যাচার

বিগত কয়েক শতাব্দী যাবৎ ভারতীয় নারীর অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে মধ্যযুগে, তাদের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। কয়েকজন সমাজসংস্কারকের প্রচেষ্টায় আবার সমমর্যাদার অধিকারে উত্তরণ ঘটেছে। আধুনিক ভারতে নারীরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ, বিরোধী দলনেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। ২০১১ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি, লোকসভার(সংসদের নিম্নকক্ষ) অধ্যক্ষ, লোকসভার বিরোধী দলনেতা তিনটি পদই অলংকৃত করেন মহিলারা। যদিও আজও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মহিলারা লিঙ্গবৈষম্য ও অপরাধের শিকার। শিক্ষা, বাণিজ্য, খেলা, আদালত ছাড়াও বিভিন্ন দিকে বুৎপত্তি দেখিয়ে চলেছেন। কিন্তু বিভিন্ন প্রথা যা ভারতীয় নারীকে অদৃশ্য শিকল পরিয়ে রেখেছিল, তাই হল আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়। নারীত্ব শুধুই গৃহকোণের আবরণ ও আভরণ হিসাবে বিবেচিত হত। সাথে ছিল পাশবিক ও বর্বর কিছু প্রথার দ্বারা অত্যাচার।

Image result for white cloth blood virginity test

১. কুমারী প্রথা (সুতো প্রথা)…

এই প্রথায় কুমারী মেয়েদের কৌমার্যের পরীক্ষা দিতে হয়,যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তারা কুমারী কিনা। একটি সাদা দড়ি বা সুতো মেয়েদের শরীরের ব্যক্তিগত জায়গা অর্থাৎ যৌনাঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। যদি লাল সুতোটি রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায়, তাহলে প্রমাণিত হয় যে মেয়েটি কুমারী অর্থাৎ তার কৌমারীত্ব নষ্ট হয়নি। এই প্রথাটি রাজস্থানের ‘সানসি’ নামক একটি উপজাতির মধ্যে দেখা যায়। যদি কোন মেয়েকে বাঁধা ওই সুতোটি রক্তে ভিজে না যায়, তাহলে ওই মেয়েটি পরীক্ষায় পাশ করতে পারে না। আর প্রচারিত হয় যে মেয়েটির চরিত্রদোষ আছে আর তার কৌমারীত্ব সেই কারণেই নষ্ট হয়েছে। তার ওপরে শুরু হয় সামাজিক অত্যাচার। মেয়েটিকে বর্বর ভাবে প্রচন্ড মারা হয় আর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে বিবাহের পূর্বে কোন্ পুরুষের সাথে তার যৌন সংসর্গ হয়েছে বা কার সাথে তার প্রেম রয়েছে। যখনই সেই মেয়েটি নাম বলে কোন পুরুষের, তখনই ক্ষতিপুরণ বাবদ মেয়েটির বাবা মা ছেলেটির থেকে একটি বিশাল অর্থ দাবী করে।

Image result for virginity test in india under water

২. জল দ্বারা চারিত্রিক বিশুদ্ধতার পরীক্ষা…

নারীকে তার সততা আর কৌমারীত্বের জন্য বরাবর সেই রামায়ণ, মহাভারতের যুগ থেকেই বিভিন্ন পুরুষচালিত বর্বর ও আদিম প্রথায় পরীক্ষা দিতে হয়েছে। নারীর ওপরে বর্বর, পাশবিক অত্যাচারগুলো আস্তে আস্তে যুৃগ যুগান্তরে একেকটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। এরকমই একটি প্রথা হল জল দ্বারা বিশুদ্ধতার পরীক্ষা যা প্রধানত উত্তর ভারতে করা হত।এই পরীক্ষায় যে মেয়েটির বিশুদ্ধতা যাচাই হবে, তাকে জলের তলায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকতে হবে, তখন জলের ওপরে একজন পুরুষ একশত পা হাঁটবে। ওই একশত পা হাঁটার মধ্যে যদি ওই মেয়েটি নিঃশ্বাস ধরে রাখতে পারে, তাহলে সে অতি পুণ্যবতী ও শারীরিক বিশুদ্ধতার পরীক্ষায় পাশ করবে। তার চরিত্র নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠবে না। হয়তো কোন পুরুষের পক্ষেও এই পরীক্ষা অত্যন্ত কঠিন হত। কারণ জলের তলায় অতক্ষণ নিঃশ্বাস আটকে রাখা শুধু কষ্টকরই নয়, প্রায় অসম্ভব। সুতরাং এই মেয়েটি যে চারিত্রিক দিক থেকে নির্মল নয়, সেটা খুব সহজেই প্রমাণিত হত এবং তার ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়ত।

Related image

৩. অগ্নিপরীক্ষা…

সমস্ত বিবাহিত মহিলার জন্য এই প্রথা ছিল তাদের চারিত্রিক বিশুদ্ধতা প্রমাণের একমাত্র এবং ভয়ঙ্কর এক প্রথা। নতুন বউকে নিজের সতীত্ব ও চারিত্রিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণার্থে গাছের পাতা দিয়ে তৈরি বাটির মধ্যে লাল হয়ে তেতে যাওয়া গরম লোহা হাতে মাটি নিয়ে তার ওপরে ধরতে হত এবং সেই অবস্থায় হাঁটতে হত। তার হাত যদি প্রচন্ড গরমে পুড়ে যেত, তাহলে তাকে কলঙ্কিনী, চারিত্রিক দোষ যুক্তা বলে গণ্য করা হত। বলা বাহুল্য, সেই নতুন বউটির পরিণাম ভয়াবহ হত। হাত পুড়ে যাবার যুক্তিতে সেই বউয়ের ওপরে শুরু হত যৎপরোনাস্তি অত্যাচার। সমাজের ঘৃণ্যতার লোলুপ শিকার এভাবে বহু নারী গোপনীয়তার মধ্যেই মৃত্যু মুখেও পতিত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ঘৃণ্য ও বর্বর প্রথাটি ভারতীয় ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে।

 

Image result for sati in ancient india

৪.সতী বা সতীদাহ প্রথা…

সতীদাহ হচ্ছে হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে অর্থাৎ আত্মহুতি দেবার ঐতিহাসিক প্রথা, যা রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় বন্ধ হয়। সতীদাহ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত থাকা একটি পুরানো প্রথা, যেখানে বিধবা মহিলারা স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় স্বামীর চিতায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিতেন। যদিও বিধবাদের এই প্রথায় অংশগ্রহণ স্বেচ্ছায় বলে ধরা হত, কালক্রমে বিভিন্ন ঘটনায় হিন্দু স্ত্রীকে সহমরণে বাধ্য করা হত। বিশেষ করে কোন ধনী লোকের মৃত্যুর পরে সম্পত্তির অধিকার পাবার লোভে তার আত্মীয়রা তার সদ্যবিধবা স্ত্রীকে ধরে বেঁধে, ঢাকঢোল, কাঁসর, খোল করতাল, শঙ্খধ্বনি দ্বারা এবং মুক্তি কামনায় মন্ত্রধ্বনি দ্বারা তার কান্নার আওয়াজকে চাপা দিয়ে তার স্বামীর সাথে চিতায় জোর করে শুইয়ে পুড়িয়ে মারতো। এই নৃশংস ও পাশবিকতার মধ্যে দিয়ে তারা নিজেরা বর্বর আনন্দ লাভ করত এবং মৃত ব্যক্তির যাবতীয় সম্পত্তির অধিকার লাভ করত। নারীরা প্রায়ই বৈদেশিক বাহিনীর দ্বারা ধর্ষিত বা অপহৃত হত। তাই পতিহীন নারীর লজ্জাও সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য এই প্রথার উদ্ভব বলে মনে করা হয়। ১৯৮৭ সালে রাজস্থানের রূপ কানোয়ার মামলায় সতীদাহ প্রতিরোধ আইন জারি হয়।

 

Image result for অবশেষে দেবদাসী দেবদাসী প্রথা

৫.দেবদাসী প্রথা…

এটি মূলত দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত একটি প্রথা। মহিলারা কোনো দেবতার মন্দিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেন এবং এরপর তাঁদের সামাজিক বিবাহ থেকে বিরত থাকতে হত। তাঁরা দেবতার সেবা করার জন্য নিজেদের সারা জীবন উৎসর্গ করতেন। প্রথাটি ১০ম শতাব্দী থেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল।১৯৮৮ সালে এই প্রথাটি দেশে বেআইনি ঘোষণা করা হয়, কিন্তু দেশের কিছু অঞ্চলে নিম্ন বর্ণের মেয়েরা এখনো দেবদাসী হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে তারা বারাঙ্গনা, বেশ্যা হিসাবে কাজ করতে বাধ্য থাকে। আগে মূলতঃ রাজা, জমিদার ও পুরোহিতবর্গের সেবাদান অর্থাৎ মনোরঞ্জনের জন্য তারা নিজেদের বাল্যকাল থেকে প্রস্তুত করত কঠোর অধ্যবসায় দ্বারা নৃত্যগীত চর্চার মাধ্যমে। নিজেরা দেবতার চরণে সমর্পিত হত বা কখনো তাদের লুঠ করে নিয়ে আসা হত। কখনো বা মেয়ে ক্রয়বিক্রয় হত। কিন্তু সবকিছুরই পরিণতি হত একই। নিজেদের শরীরের বিনিময়ে তাদের খুশি রাখতে হত সমাজের সকল সমাজপতিদের।

Related image

৬.জওহর বা জহর প্রথা…

এই প্রথার চর্চা ভারতে আলাউদ্দিন খিলজির আক্রমনের সময় রাজস্থানের চিতোরে শুরু হয়।যুদ্ধে পরাস্ত হবার পরে রাজপুত রমণীরা পরপুরুষের হাতে নিজেদের সম্ভ্রম খোয়াবার ভয়ে, সম্ভ্রম ও আত্মসম্মান রক্ষার্থে বিশাল অগ্নিকুন্ডে আত্মাহুতি দিয়ে প্রাণ ত্যাগ করত। এই প্রথা হিন্দু রাজপুত রমণীদের বীরাঙ্গনায় পরিণত করেছিল।

Related image

৭.তিন তালাক…

এই প্রথাটি ভারতীয় মুসলিম নারীদের ধর্মীয় অনুশাসনের নামে নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা ধ্বংস করার অন্যতম পুরুষতান্ত্রিক উপায়। এই ব্যবস্থা বন্ধে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন ভারতের ৫০ হাজার মুসলিম নারী যার মধ্যে আছেন গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গসহ আরও কয়েকটি রাজ্যের নারীরা।
মহিলা কমিশনের কাছে পাঠানো চিঠিতে ভারতীয় মুসলিম মহিলা অন্দোলন (বিএমএমএ) বলেছে, এভাবে তালাক বা বিচ্ছেদ ‘কোরানবিরোধী’।
মুসলিম নারীরা একতরফা বা মৌখিক বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রথার ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা চান।
জাতীয় পর্যায়ে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে মুসলিম নারীদের ৯২ শতাংশই এই প্রথার অবসান চেয়ে আন্দোলন করেছেন কারণ, এই প্রথা তাদের জীবন ধ্বংস করে দেবার জন্য যথেষ্ট।

 

Related image

৮.পর্দা প্রথা…

পর্দা প্রথা মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য এমন একটি প্রথা যেখানে মহিলাদের নিজেদের সম্ভ্রম বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সর্বদা পর্দা, হিজাব, বা বোরখার আড়ালে থাকতে হয়। মনে করা হয়, এতে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হয়।

 

৯.বাল্যবিবাহ প্রথা…

অতীতের বাল্য বিবাহের সামাজিক কুপ্রথা আজও চলছে৷ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তা বন্ধ হয়নি। গ্রামে গঞ্জের গরীব শুধু নন, নিম্নবিত্ত পরিবার, অশিক্ষিত আদিবাসী-উপজাতি পরিবার বাদেও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে পিছিয়ে পরা বহু পরিবারও কন্যাসন্তানকে জন্ম থেকেই বোঝা মনে করে। যত তাড়াতাড়ি পাত্রস্থ করা যায় ততই ভালো। তারা ভাবে না, ১৮ বছরের আগে কোন নারীশরীর বা মন পূর্ণতা পায় না। ১০-১২ বছর বয়সের মেয়েদের শরীর ও মন তৈরি হবার আগেই যদি বিয়ে দেয়া হয়, তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাবালিকা মা জন্ম দেয় হয় মৃত শিশু, না হয় অপরিণত বুদ্ধি আর বিকলাঙ্গ শিশুর৷ শুধু তাই নয়, নাবালিকা মায়ের স্বাস্থ্য কম বয়সেই ভেঙে পড়ে৷ বহু সময় তাদের মৃত্যুও হয় সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে।তারা নানারকম স্ত্রী ব্যাধি ও যৌনরোগের শিকার হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here