সারা বিশ্বের প্রত্যেক জাতির মধ্যেই মৃত্যুর পর কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করার রীতি আছে. কিছু নিয়ম বিজ্ঞানসম্মত আবার কিছু একেবারে অদ্ভুত. সৎকারের জন্য কেউ যেখানে মৃতদেহটি পুড়িয়ে ফেলেন , আবার কেউ বা মাটিতে কবর দেন.আবার কেউ বা সযত্নে সেটিকে কফিনজাত করেন. কিন্তু এসবের বাইরেও এমন অনেক রীতিনীতি আছে যা আপনার স্বাভাবিক ভাবনা চিন্তার বাইরে. জানতে ইচ্ছা করছে না , পৃথিবী জুড়ে চলা এইআশ্চর্য এবং ভয়ঙ্কর মৃত্যু অনুষ্ঠানগুলি কি কি? কিভাবে সেগুলি পালিত হয়? কারা করেন? চোখ রাখুন খবর ২৪ এর পাতায়.
জেনে নিন বিশ্বের ১০ টি অভাবনীয় মৃত্যু অনুষ্ঠান…
১. এন্ডোক্যানিবালিজম (Endocannibalism): আমাজন রেইন্ ফরেস্টের ইয়ানোমমি উপজাতি , পাপুয়া নিউ গিনির মেলানসিয়ানস উপজাতি এবং ব্রাজিলের ওয়ারীরা উপজাতির মধ্যে এই বিশেষ মৃত্যু অনুষ্ঠানটি দেখতে পাওয়া যায়. এখানে একটি মৃতদেহকে খাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয় এই উদ্দেশে যে সেই মৃত ব্যাক্তির আত্মা স্বর্গে যাবে .
এই জাতির লোকেরা বিশ্বাস করেন যে মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়. উপরন্তু তারা ভাবেন যে তাদের প্রদিদ্বন্দী গোষ্ঠী কোনো অশুভ আত্মাকে প্রেরণ করেছে. তাই এই ঘটনায় রোধ করার জন্য তারা এই অনুষ্ঠানটি করে থাকেন যাতে মৃত ব্যাক্তির আত্মা জীবিত থাকে এবং তার পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে . এর জন্য প্রথমে তারা মৃতদেহটিকে পাতা দিয়ে মুড়ে বাড়ি থেকে অল্প দূরে জঙ্গলে রেখে আসেন. এর পর মোটামুটি ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় সেই পঁচাগলে যাওয়া মৃতদেহ থেকে হাড় সংগ্রহ করে নিয়ে আসে. এরপর কলা দিয়ে বানানো একধরণের সুপ্ এর মধ্যে মৃতদেহের ছাই মিশিয়ে গোষ্ঠীর সকলে সেটি পান করে. তবে অনেক ক্ষেত্রে এই নিয়ম শুধুমাত্র গোষ্ঠীর শিশু ওই মহিলারা পালন করে থাকেন.
২. ফামাদিহানা (Famadhihana) :
মাদাগাস্কারের মালাগাসী জাতির মধ্যে এটি একটি অতি প্রাচীন ঐতিহ্য যা প্রতি পাঁচ বা সাত বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে. এখানে মালাগাসীরা তাদের আত্মীয়ের মৃতদেহকে তুলে নতুন কাপড় পরিয়ে সমাধিস্থানের
কাছাকাছি মৃতদেহকে নিয়ে সংগীত সহযোগে নাচ করে থাকে. তারা মনে করে এইভাবে মৃত ব্যাক্তি তার পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন উৎসবে যোগ দিতে পারছে. এই অনুষ্ঠান ‘হাড়ের বাঁক’ বা ‘মৃতের সঙ্গে নাচ’ হিসেবেও পরিচিত.
৩. তিব্বত বৌদ্ধ মহিমা কবর (Tibetan Buddhist Celestial Burials or Sky burial) :
তিব্বতি ঐতিহ্যের প্রতীক এই উদ্ভট অন্তেষ্টিক্রিয়া. এই অনুষ্ঠানে মৃতদেহকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাহাড়ের মাথায় রেখে আসা হয় এবং পাখিদের
বিশেষত শিকারী পাখিদের দান করা হয়. অনেক সময় অক্ষত মৃতদেহ রেখে দেওয়া হয়. বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে মৃতদেহকে খালি জাহাজ মনে করা হয় যা সংরক্ষনের কোনো দরকার নেই. মূলত, তিব্বতের কঠিন জলবায়ু ও পাথরে ভরা জমিতে কবর দেওয়া এক পক্ষে অসম্ভব.
৪. সাসপেন্ড কবরস্থান (Suspended Burials):
এই অন্তেষ্টিক্রিয়াটি প্রাচীন চীন বংশের মধ্যে দেখা যায়.যেখানে তারা মৃতদেহকে কফিনে পুড়ে উঁচু পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত শিলার উপর ঝুলিয়ে রেখে দিতো. তারা মনে করতো যে মৃতদেহকে আকাশেরকাছাকাছি রাখা উচিত যাতে তারা বন্য প্রাণীদের নাগালের বাইরে এবং ভগবানের নাগালের মধ্যে বা কাছাকাছি থাকতে পারে.
৫. সতী:
যদিও সতীদাহ প্রথার প্রচলন বর্তমানে হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ , তবুও একটা সময়ে এই অন্তেষ্টিক্রিয়াটি হিন্দু ধর্মের এক সনাতনী ঐতিহ্য হিসাবেই মানা হতো. এই রীতি অনুযায়ী, মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী কে বধূবেশে সাজিয়ে একই চিতায় মৃত্যু বরণ করতে হতো. বলা হতো যে এর মাধ্যমে মৃত স্ত্রী সতিরূপে স্বর্গলাভ করবে.
৬. ভাইকিং ফিউনারেল (The Viking Funeral):
এটি একটি অন্যতম নৃশংস অন্তেষ্টিক্রিয়া. এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে একটি অস্থায়ী কবরে দশ দিনের জন্য রাখা হতো এবং তার জন্য নতুন জামাকাপড় ও তৈরি করা হতো . অন্যদিকে একজন
ক্রীতদাসীকে বাছা হতো যে ওই মৃত মানুষটির পরবর্তী জীবনের সঙ্গিনী হবে. এরপর সেই মেয়েটি ওই গ্রামের সকলের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো যেটাকে মনে করা হতো মৃতব্যাক্তির প্রতি প্রেম নিবেদন. তারপর তার গলায় ফাঁস দিয়ে এবং সবশেষে ছুরি মেরে হত্যা করা হতো. এরপর একটি কাঠের জাহাজে মৃত ব্যাক্তির সাথে তাকেও রেখে দিয়ে অগ্নি সংযোগ করা হতো.
৭. আঙুলের আবৃততা (Ritual Finger Amputation) :
পাপুয়া নিউ গিনির দানি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই নিয়মটি প্রচলিত . এই নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির কোনো প্রিয় ব্যাক্তি মারা গেলে তার সঙ্গে সম্বন্ধিত মহিলা ও শিশুরা তাদের আঙুলের কিছু অংশ
কেটে ফেলতো. এরপর কাদা ও ছাই মুখে মেখে মৃতব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করতো. যদিও এই নিয়মটি এখন নিষিদ্ধ.
৮. টোটেম পোলস (Mortuary Totem Poles):
টোটেম পোল আসলে স্থানীয় সভ্যতার বিভিন্ন গল্প তুলে ধরার জন্য তৈরি করা হয়. হায়দা উপজাতির মধ্যে এই রীতি দেখতে পাওয়া যায়. এই রীতি অনুযায়ী মৃতব্যাক্তির শরীরকে পেটানো হবে যতক্ষন না এটি একটি ছোট বাক্সে এঁটে যায়.এরপর এই বাক্সটি একটি টোটেম পোল এর উপর রেখে মৃত ব্যাক্তির বাড়ির সামনে রেখে আসা হয়.
৯. Buried in a fantasy Coffin:
এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে এমন একটি কফিনে রাখা হয় যেটি তার জীবনকে অথবা পেশাকে উপস্থাপনা করে. যেমন কোনো বিমান চালক কে বিমানরূপী কফিনে, কোনো জেলেকে মাছরূপী কফিনে আবার কোনো ধনী ব্যাবসায়ীকে একটি দামি গাড়ীরূপী কফিনে রাখা হয়.
১০. অন্ধ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (Blindfolded funeral):
এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের চোখ বেঁধে তাকে বাড়ির মুখ্য দরজার সামনে রেখে দেওয়া হয়. উত্তর পশ্চিম ফিলিপিনেসে এটি দেখা যায়. এগুলো ছিল বিশ্বের সবথেকে অদ্ভুত ১০টি মৃত্যু অনুষ্ঠান. এছাড়াও সারা পৃথিবী জুড়ে আরো বহু রকমের অদ্ভুত এবং ভয়ংকর অন্তেষ্টিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়.