আহারের বাহারে রবি ঠাকুর
“ আজি হতে শতবর্ষ – পরে, কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি… কৌতূহল ভরে-
আজি হতে শতবর্ষ -পরে ।”
আমি বলি শতবর্ষ কেন কোটি বর্ষ ধরে এই বিশ্ববাসী কবি গুরুর কবিতা পরবে । যেভাবে নুন ছাড়া কোন রান্না স্বাদ হয় না ঠিক একি ভাবে গুরুদেবের কবিতা ও গান ছাড়া আমাদের জীবন বিস্বাদ । রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর যেমন বিশ্ব কবি ছিলেন তেমন খাদ্য রসিকও ছিলেন । বিশ্বের অনেক জায়গায় তিনি ঘুরেছেন । যেখানেই ঘুরতে যেতেন সেখানকার খবার পছন্দ হলে নিজের ডাইরিতে প্রণালী লিখে নিতেন । তিনি এমন মানুষ ছিলেন যে নাকি মান কচুর জিলিপি বানিয়ে খেয়েছেন । অবশ্য বানিয়েছেন ওনার স্ত্রী , যাকে তিনি ‘ছোট বউ’ বলে ডাকতেন । আজ গুরুদেবের জন্ম তিথি উপলক্ষে ওনার পছন্দের কয়েকটা রেসিপি আপনাদের জন্য । ওনার ১৫৬ তম জন্ম দিবস উপলক্ষে ওনাকে জানই শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
আম পোলাওঃ
উপকরণ
- ২ কাপ বাসমতী চাল
- ১ কাপ আমের কাঁথ
- কাঁচা মিঠে আমের কুচি
- ঘি
- আদা ও রসুন বাটা
- গোটা গরম মশলা
- গোটা সর্ষে
- নুন
- চিনি
- পেয়াজ কুচি
- কাঁচা লঙ্কা
প্রণালী
বাসমতী চাল ধুয়ে ১৫/২০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখুন । একটি কড়াইতে ৪/৫ চামচ ঘি দিন । ঘি গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিন । পেঁয়াজ বাদামি রং – এর হলে অন্য পাত্রে তুলে রাখুন । এবার কড়াইতে গোটা গরম মশলা , সর্ষে ও আদা – রসুন বাটা দিয়ে কষতে থাকুন । কষানো হয়ে এলে তাতে হলুদ গুড়ো ,লঙ্কা গুড়ো ,আমের কাঁথ, ২ চামচ চিনি ও ১ চামচ নুন মিশিয়ে কষিয়ে নিন । গ্যাসের আঁচ মিডিয়াম রাখবেন । এবার চাল দিয়ে দিন । কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ২ কাপ জল দিয়ে ঢেকে দিন । চাল সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা পেঁয়াজ ও আমের টুকরো ছড়িয়ে দিন । ব্যস,তৈরী আমের পোলাও।
নারকেল চিংড়িঃ
উপকরন
- মাঝারি সাইজের চিংড়ি মাছ (৫০০ গ্রাম )
- নারকেল বাটা
- পেয়াজ বাটা
- হলুদ
- চেরা কাঁচা লঙ্কা
- চিনি
- সর্ষের তেল
প্রণালী
চিংড়ি মাছ খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন । নুন ও হ্লুদ মাখিয়ে রাখুন। একটি নারকেল কুরিয়ে মিক্সিতে পিষে নিন । কড়াইতে তেল দিন ও চিংড়ি মাছ ছেড়ে দিন।এবার পেয়াজ বাটা ২ চামচ,নারকেল বাটা ও চেরা কাঁচা লঙ্কা ৩/৪ টি দিয়ে দিন। গ্যাসের আঁচ মিডিয়াম করে দিন ও ঢেকে দিন।১০/ ১৫ মিনিট পর ঢাকনা উঠিয়ে হাতে জল নিয়ে মাছের উপর দিয়ে দিন। ১ চামচ চিনি দিন। ভালো করে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন । তৈরী আপনার নারকেল চিংড়ি ।
চিতল মাছ ও চালতা দিয়ে মুগ ডালঃ
উপকরণ
- চিতল মাছ
- চালতা
- সোনা মুগ ডাল ১ কাপ
- নুন
- চিনি
- হলুদ
- আদা ও পেঁয়াজ বাটা
- গোটা সর্ষে ও শুকনা লঙ্কা
- তেজপাতা
- সর্ষের তেল
- শুকনো খোলায় মৌরি ভাজা
প্রণালী
১ কাপ সোনা মুগের ডাল শুকনো কড়াইতে ভেজে নিন । চিতল মাছ গুলি ধুয়ে নুন ও হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিন । চালতা কেটে নুন ও হলুদ মাখিয়ে রাখুন । এবার কড়াইতে তেল দিয়ে সর্ষে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে আদা ও পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কষতে থাকুন । কিছুক্ষণ পর চালতা গুলিও দিয়ে দিন । মশলা কষা হলে ডাল দিয়ে দিন। ৫মিনিট নেড়েচেড়ে ২ কাপ জল দিয়ে ঢেকে দিন। ২০/ ২৫ মিনিট পর ঢাকনা তুলে চিতল মাছ গুলি দিয়ে দিন । ১ চামচ চিনি দিন । ৫ মিনিট পর শুকনো খোলায় মৌরি ভেজে গুঁড়ো করে উপর থেকে ছড়িয়ে দিন । তৈরী আপনার চিতল ও চালতা দিয়ে মুগের ডাল ।
কাঁচা ইলিশের ঝোলঃ
উপকরণ
- রিং করে কাটা ইলিশ মাছ
- কাচা লঙ্কা
- কাল জিরা
- নুন
- হলুদ
- শুকনা লঙ্কা বাটা
- সর্ষের তেল
প্রণালী
‘রিং’ করে কাটা ইলিশ মাছ ভাল করে ধুয়ে নুন হ্লুদ মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইতে সর্ষের তেল দিন। তেল গরম হলে কাল জিরে ও কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে কাঁচা মাছ গুলি কড়াইতে দিয়ে ২কাপ জল দিয়ে ঢেকে দিন। ১০/১৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে আধা চামচ শুকনো লঙ্কা বাটা দিয়ে আরও ৫ মিনিট পর এক চামচ কাঁচা সর্ষের তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। ব্যস, তৈরী আপনার কাঁচা ইলিশের ঝোল ।
কচি পাঠার কষা মাংসঃ
উপকরণ
- পাঠার মাংস ৫০০ গ্রাম
- আদা , রসুন ও পেঁয়াজ বাটা
- ছোট এলাচ
- কাঁচ পেঁপে বাটা ২ চামচ
- হলুদ
- জিরা
- এলাচ , দারচিনি , জাইফল ও জয়িত্রী বাটা
- সর্ষের তেল
প্রণালী
পাঠার মাংস ভাল করে ধুয়ে নুন ,হলুদ ,আদা ও রসুন বাটা , ২ চামচ পেপে বাটা এবং সর্ষের তেল দিয়ে মেখে ৩০ মিনিট রেখে দিন। কাঁচা পেঁপে দিলে পাঠার মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়। কড়াইতে তেল দিন। ১ চিমটি চিনি দিন তাতে রং ভাল আসবে । তেজপাতা ও ছোট এলাচ ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কষতে থাকুন । এবার আগে থেকে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে নেড়েচেড়ে ঢেকে দিন । গ্যাসের আঁচ কমিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পর নেড়ে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে ১ কাপ গরম জল দিন। ৫/ ১০ মিনিট পর এলাচ দারচিনি, জায়ফল- জয়ত্রী বাটা দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন । তৈরী কচি পাঠার কষা মাংস ।
আমসত্বের চাটনিঃ
উপকরণ
- আমসত্ব
- চিনি
- শুকনো খোলায় মৌরি ভাজা
- নুন
- কাজু
- কিসমিস
- খেজুর
- নারকেল
প্রণালী
একটি কাচের পাত্রে ২ কাপ জল নিন। আমসত্ব ছোট ছোট টুকরো করে জলে ভিজিয়ে দিন। ৪/৫ চামচ চিনি দিন। ১৫/ ২০ মিনিট পর মিক্সিতে জল সহ আমসত্ব পিষে নিন। এবার কাজু ,কিসমিস,কাটা খেজুর, ছোট টুকরো করা নারকেল ও ১ চামচ নুন মিশিয়ে দিন। এবার ভাজা মৌরি উপর দিয়ে ছড়িয়ে মিশিয়ে নিন । তৈরী সুস্বাদু আমসত্বের চাটনি।