Homeঘুরে আসিট্রেক করে চলুন রূপসী...

ট্রেক করে চলুন রূপসী রূপকুন্ডে – “Skeleton Lake” এর রহস্যের সন্ধানে…

আমি ছোটবেলায় যখন ঘুমাতে যেতাম একটা ভয় কাজ করত। এই বুঝি আমায় কেউ উঁচু পাহাড় থেকে নিচের দিকে ফেলে দিল। কষ্ট হত খুব। ঘুম ভেঙে যেত। সময় বয়ে গেল স্রোতের নদীতে। অনেকবার হাওড়ার ব্রিজ টপকে বেরু বেরু করতেও গেলাম। কিন্তু পাহাড়কে জয় করার আকাঙ্খা দিনে দিনে বেড়ে গেল। একটি কাজের জন্য ওয়ালপেপার দেখতে গিয়ে অপূর্ব এক দৃশ্য চোখে এলো। জায়গাটির নাম আলী বুগিয়াল। অপূর্ব। নেট ঘেটে জানলাম ট্রেকিং করে যেতে হয় রূপকুন্ড। সেই পথেই এই স্থানটি। আর রূপকুন্ডে রয়েছে একটি লেক।

Image result for roopkund trek"

যেখানে ১৯৪৩ সালে বনবিভাগের কর্মীরা কাজ করতে গিয়ে খুঁজে পায় অনেক মাথার খুলি, কঙ্কাল। যদিও কেন এত মানুষ ওখানে মারা গেলেন তার হদিস পাওয়া যায়নি। অনেক পাথরে, লোহার তৈরি হাতিয়ার তাদের কাছে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেন খুলিগুলোতে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। হতে পারে কোনও আদিম জনগোষ্ঠী এখানে ছিল। আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মারা যান। তবু এই স্থানটির একটা চুম্বকীয় টান আছে। হতে পারে আমিও হারিয়ে যাব। হতে পারে আমিও এই রূপকন্ডে হয়ে যাব কঙ্কাল তবু আমায় এই ট্রেকিং-এ যেতেই হবে। এখানে না গেলে আমার এ জন্মই বৃথা। আমার স্বপ্নের সেই পাহাড় যে বাস্তবে আছে, কেউ যে আমায় ফেলে দিচ্ছে সেটাই চাক্ষুস দেখতে হবে। হয়তো ঐ কঙ্কালের মধ্যে আমিও ছিলাম কোনও এক জন্মে। আবার ফিরে এসেছি এজন্মে খবর২৪-এর এক রিপোর্টার হয়ে। আমি নিজেও জানি না। অনেক কষ্ট করে ছুটির আবেদন করেও যখন কর্তৃপক্ষ পুজোর আগে ছুটি দিতে চাইল না, তখন না বলেই হাতে যেটুকু সম্বল ছিল নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।

Image result for roopkund trek"

আসলে যে কথাটি বলা হয়নি, তা হল এই রূপকুন্ডে ট্রেকিং-এর সব থেকে ভাল সময় হল মে মাসের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। তাই এই সময়টা গেলেই ট্রেকিং-এর অন্যান্য দলের সঙ্গে আপনিও যেতে পারবেন। তবে আমি রাগ জেদ করে একাই বেরিয়ে যাই। প্রথমে দিল্লি। তারপর রানিক্ষেত্র এক্সপ্রেস-এ কাঠগোদাম। সেখান থেকে লোহাজঙ। তবে আপনারা দেরাদুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বার নেমে সেখান থেকেও লোহাজঙ পৌঁছাতে পারেন। আমি কাঠগোদাম হয়ে লোহাজঙের পথটি ধরেছিলাম।

 

তাহলে কিভাবে যাবেন – কলকাতার হাওড়া থেকে ট্রেনে হরিদ্বার বা হলদোয়ানি / কাঠগোদাম গিয়ে ভাড়ার গাড়ি বা বাস / জীপে করে  কর্ণপ্রয়াগ / থারালি হয়ে লোহাজঙ / ওয়ান। তারপর ৫/৭ দিনের ৭০ কিমি ট্রেক।

স্থানীয় ব্যবস্থা – লোহাজঙ / ওয়ান এ গাইডরাই সব ব্যবস্থা করে দেবে। নরেন্দ্র সিং – 9012171505/৮৯৫৮১০৮৩৮১/৯৪১০৪৮০৩০৮, নারায়ণ সিং – ৯৪১১৫৬৪৫৭৮, মোহন সিং – 9012173647/৯৬৩৯২৮৬২৯২। 

আনুমানিক খরচ – গাইড ৮০০/-, ঘোড়া সহ পোর্টার ৫০০/-, রান্নার সরঞ্জাম ৩০০/-, টেন্ট ২০০/-  দৈনিক।  পারমিট ৫০০/-। ৪ জনের দলের কলকাতা থেকে জনপ্রতি  খরচ ১২০০০/- । তবে খরচ কিছুটা বদলে যায় মরসুমের ভিড় কেমন তার উপর নির্ভর করে।

Image result for roopkund trek lohajong"

লোহাজঙ

আট হাজার ফিটের উপর লোহাজঙ স্থানটি বেশ শীতল ও মনোরম। মনে শান্তি আসে। শরীরটা শান্তিময় হয়ে যায়। আমাদের যিনি নিয়ে যাবে রূপকুন্ডে তার নাম সিংজী। তিনি তখন একটু দূরে দেবল-এ ছিলেন। তার সাথে কথা হল। এখান থেকে রূপকুন্ড ট্রেক-এর সমস্ত ব্যবস্থা ওঁনারাই করে দেন। তাদের আস্তানাতেই রাত কাটালাম। পরের দিন সকালে সিংজি এসে ঘুম ভাঙালো। অনেকটা পথের জার্নি করে শরীরটা কেমন যেন করছিল। তবু রূপকুন্ডের টানে জেগে উঠলাম। এখানে এরা একটু অসুবিধা দেখায়। কে নিয়ে যাবে এটা দেখিয়ে একটু বেশি টাকা রোজগার করে নিতে চায়। তবু ঘোড় সহ পোর্টার পাওয়া গেল। সিংজি রান্নার জিনিস জোগাড় করে নিয়ে আসল। স্থানীয় দোকান থেকেই এখানে সব রসদ পাওয়া যায়। কেরোসিন নেই। তাই সামনের এক গমকল থেকে ডিজেল নেওয়া হল।

লোহাজঙ-এ ট্রেকিং এর জন্য দরকারী সবকিছুই কিনতে পাবেন বা ভাড়ায় পাবেন। আরও উপরে উঠলে টেন্ট মিলবে। এখান থেকে নিলাম না। ঠাণ্ডায় আজই স্নান করে নিলাম গরম জলে। এরপর কয়েকদিন তো স্নান হবে না, বরফের বাসিন্দা হতে হবে। আলুপরটা আর চা খেয়ে যাত্রা শুরু করতে সাড়ে দশটা হল। এখন আরও কিছু লোক আমার সাথেই যাবে। আমাদের পথ এখন দিদিনা, দূরত্ব প্রায় ৭ কিমি।  যদিও অনেকেই গাড়িতে চলে যান ওয়ান নামক স্থানে। সেখান থেকেই ট্রেক শুরু করে।

আমরা নিচের দিকে নামতে থাকলাম। ঘোড়া বয়ে নিয়ে চলেছে রুকস্যাক। এখানে একটু সাবধানতা প্রয়োজন। নামার সময় চটজলদি করতে গেলে পায়ে লেগে যাবে। একেই মাসেল ক্রাম্পের ভয় রয়েছে। আমরা তো আর এই পরিবেশে অভ্যস্ত নই। এরপরের দিকে আড়াই ঘণ্টার উৎরাই বেশ কষ্টের। আসলে হাফ ধরে যায়। যদিও ওক-পাইন-রডডেনড্রনের জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড় খুবই সুন্দর।  একটা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ও নীলগঙ্গা নদী পার হয়ে এবার একটা মারাত্মক একটি চড়াইয়ের পথ ধরলাম। তার মধ্যে সামান্য বৃষ্টিও হয়ে গেল। রাস্তায় কিছু জনপদের সাথে দেখা হল। মোটামুটি বিকেল চারটের সময় দিদিনায় পৌঁছালাম। তুলি ক্যানভাসে রঙ করা মাটি-পাথরের দোতলা বাড়িতে আশ্রয় নিলাম আজ। হোম-স্টে আমাদের ট্রেকিং-এর পথে স্বর্গের মতো লাগে।

Image result for roopkund trek"

দিদিনা

এই স্থানটি মোটামুটি ৮০০০ ফিট, ঠান্ডাও একই রকম হাল্কা। এখানের কাঠের উনুন। সেখানে চা থেকে খিঁচুড়ি সবই হল। এখানে আরও কিছু বাঙালির সাথেই দেখা হয়ে গেল। আড্ডার সাথে রাতে ডিমের ঝোল ও ভাত। সিংজি কোথা থেকে পিঁয়াজ আর শসা নিয়ে এলেন। স্যালাডও মন্দ হল না। লেবুটা পেলাম না।

পরের দিন ভোরবেলায় গাইড-পোর্টার রান্না করতে চাইছিলেন না। আমাদের খাটিয়ে নিতে চাইছিল। তবু খিচুড়ি রান্না হল। সকাল নটায় যাত্রা শুরু হল। এবারে শুকনো পাতার মধ্যে দিয়েই কঠিন চড়াই। পোর্টার বলল টোলাপানি দিয়ে উঠলে চড়াই কম হত। এখন আর বলে কী হবে, চার ঘন্টা লাগল খুপাল টপ-এ পৌঁছাতে। এই স্থানটির থেকেই শুরু আলি বুগিয়ালের। 

 

আলি বুগিয়াল

বিস্তীর্ণ বুগিয়ালের সবুজ এলাকা। সেই কম্পিউটারের ডেস্কটপের ছবি। এখন আমার নিজের চোখের সামনে। বেশ সুন্দর স্থানটি। এখানে তেমন বসতি নেই। আমরা কয়েকজন এখানেই একটু ছাতু মেখে খেলাম। আসলে স্থানটি এমনই এক মেঘবালিকার খেলাঘর যদি আকাশ পরিস্কার থাকে অনেক তুষারশৃঙ্গ দেখা যায়। আরও ঘণ্টা দুয়েক হেঁটে দেখা পেলাম আরও এক বিখ্যাত বেদিনীবুগিয়ালের।  

Image result for roopkund trek"

বেদিনী বুগিয়াল

প্রায়  ঘণ্টায় আমরা ১২ কিমি পথ ট্রেক করে বেদিনী বুগিয়ালের ক্যাম্পে পৌঁছলাম। তখন বিকেল ৪ টে বেজে গেছে। এখানকার উচ্চতা প্রায় ১২০০০ ফুট। এখান থেকে সোনালি রোদের মধ্যে দিয়ে কিচু দূরেই ত্রিশূল, নন্দাঘুন্টি  দেখতে পেলাম। যদিও ক্যামেরা ভিউফান্ডারে কিছুটা, তবু অনেকটাই দূরত্ব।  এখানে ফরেস্টের  টি হাট ও একটি ঝুপড়িও দেখতে পেলাম, যারা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও ফোন করার সুবিধাও রেখেছিল।  একটি  টেন্টে আমাদের আজকের আশ্রয়। আমরা রোদের উপর সবুজ ঘাসের কার্পেটেই চা-মুড়ি বাদাম পেটস্থ করলাম। এখানে দেখলাম একটু দল রূপকুণ্ড যেতে না পেরে ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন। এখানে একটা হাটকে রান্নাঘর করে নিয়েছে, আমরাও সেখানে আমাদের জিনিসেই  ডিমের ঝোল ভাত বানালাম। এখানে যারা ছিল তাদের সাথেই ক্যাম্প ফায়ারেও যোগ দিলাম। বেশ ঠান্ডা নামল রাতে। টেন্টের মধ্যেও বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল। আমাদের স্লীপিং ব্যাগও মনে হয় এই অধিক উচ্চতার ঠান্ডার জন্য উপযুক্ত ছিল না, আসলে আগেই বলেছি উচ্চতা ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয় সময় আমি নিয়ে আসিনি। 


সকালে ওভারকাস্ট আবহাওয়া। সিংজি ম্যানেজ করে অন্যদের সাথেই ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থাটা করে দিল। এখানে আজ তেল চপচপে পুরী-সব্জি হয়েছিল। এইসব খেয়ে পেটরোগার এতটা পথ যাওয়া চাপের। ফরেস্ট গার্ড এসে ৫00 টাকার রসিদ দিল, আলাদা করে টেন্টের জন্য আর কিছু চাইল না। আজ সকাল ৭টায় রওনা দিলাম। আমারা কয়েকজন  বেদিনী কুণ্ডের পাশের ছোট্ট মন্দিরে পুজো দিলাম। বর্ষার পর কুণ্ডে যখন জল থাকে তখন নন্দাঘুন্টি আর ত্রিশূলের অসাধারণ প্রতিফলন আমার এই জন্মটা স্বার্থক করে দিল। আমি অপদার্থ হতে পারি কিন্তু এই দৃশ্য টাটা বিড়লা ট্রেক করে এসেও দেখতে পাবে বলে মনে হয় না। ঐ দূরে পাহাড়ের খাঁজে সেই যে রাস্তাটা মিলিয়ে যায় সেটাই ঘোড়ালোটানি।

আমরা সামান্য চড়াই ভেঙ্গে সেখানে পৌঁছালাম। এরপর সহজ লম্বা পথ পাথরনাচুনি পর্যন্ত যেতে হল। আমরা বিশ্রাম নিতে নিতেই এগোচ্ছিলাম। অভ্যস্ত নই। তাই লাঠিতে ভর দিয়ে নিজেদের অক্সিজেনটা নিয়ে নিচ্ছিলাম। তিন চারজন বিদেশী দম্পতি বিন্দাস আমাদের ওভারটেক করে চলে গেল। আসলে মিস্টার আমি যে ভেতো। সেটা বুঝলাম।Image result for roopkund trek lohajong"

পাথরনাচুনিতে ফরেস্ট হাট রয়েছে, বেদিনীর মত একটা ঝুপড়িও আছে। এখান থেকে দেখা যায় সামনের পাহাড়ের মাথায় কলু বিনায়ক। কঠিন চড়াই। গণেশ দাদান বলে কথা নিজের মনের ও হাঁটুতে জোর সঞ্চয় করে লড়াইটা শুরু করে দিলাম ! মাঝপথে ছাতু খাবার আছিলায় বেশ খানিকটা বিশ্রাম। পথের ধারে বরফ দেখে মনের মধ্যে কেমন যেন করতে লাগল। কলু বিনায়ক-এ ছোট্ট একটা মন্দির।

দূরের পাহাড়িয়া দৃশ্যরা দারুণ। এখান থেকে একটা সহজ পথ গিয়েছে বাগুয়াবাসা ক্যাম্পে। আমরাও এই পথে মাঝেমধ্যেই বরফে ঢাকা পেলাম। বরফে হাঁটা একটু সমস্যার তো বটেই। প্রায় ৯ কিমি পথ আমরা কয়েকজন ৯ ঘণ্টায় ট্রেক করে বিকাল ৪ টে নাগাদ পৌঁছলাম।

Image result for roopkund trek"

বাগুয়াবাসা

বাগুয়াবাসার উচ্চতা প্রায় ১৪০০০ ফুট।  আবহাওয়া মেঘলা, তবুও ঠাণ্ডাটা ভালই লাগছিল। এরটি নাম করা সংস্থার টেন্টেই আজকের আশ্রয়। এখানে ফরেস্টের দুটি  হাট রয়েছে। একটি দল আবার দেখলাম ব্যর্থ হয়ে ফিরল। বুঝতেই পারলাম আমারও মনে হয় স্কেলেটন লেক দেখা হবে না। আগের দলটি প্রাণ নিয়ে কোনও রকমে ফিরল। দূরে দেখতে পেলাম চার জন নামছে। আসলে বরফে আছাড় খেতে হয়। কয়েকজন পুরো ভিজে গেছে। এই ঠান্ডায় পুরো কাঁপুনি দেয়। তারপরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। কে জানে আমাদের এরপর কী হবে। আসলে আবহাওয়া বদলে গেছে। এখানে ঠান্ডা বেড়েছে। মনের মধ্যে সেই রবি ঠাকুর বলতে লাগল – বিপদে মোরে রক্ষা করো….একলা চলো রে। যেতে আমাকে হবেই। মরার আগে আমি মরব না। এটাই অপদার্থের প্রতিজ্ঞা। বিদেশী একজন ভদ্রলোক আমায় বাঁশি শোনাল। এই ঠান্ডাতেও মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখছে এটাই পাওয়ার। বিদেশি ভদ্রলোক নাকি ইস্কনের ভক্ত তাই বাংলাও জানেন। কী কেলো, ওদের ভেঙিয়ে কত কিছু বলেছি, সবই বুঝেছে। সর্বনাশ। সারা রাত টেন্টের বাইরে তুষার চুমু দিয়ে গেছে।

       Image result for roopkund trek"          

ভোরে উঠে রেডি হলাম। পেটে খাবার দিয়ে শরীর মটরকে চাঙা করে নিলাম। ভোর পাঁচটায় যাত্রা শুরু করলাম। আজ জুতোতে ক্রাম্পন লাগিয়ে নিলাম। গাইডের কাছে অনেক সরঞ্জাম রইল। মোট সাত জন একসাথে চলেছি। যা হবে দেখা যাবে, লড়কে লেঙ্গে স্কেলেটন। পুরো পথটাই প্রায় চড়াই আর বরফে ঢাকা, তাই বেশ কঠিন। মাসখানেক পরে বরফ গলে যাবার পর আবার ততটাই সহজ। তখন এই পথেই ব্রহ্মকমল, হেমকমল ইত্যাদি অধিক উচ্চতার পাহাড়ি ফুলগুলো সুন্দর ভাবে দেখতে পাওয়া যায়।  গাইড পথ বানাচ্ছিল বরফ কেটে। আমরা সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করছিলাম।

Image result for roopkund trek"

শুরু থেকেই আমি পিছিয়ে গেছিলাম। উচ্চতা ও বরফের ভয় মনেতে। এর আগে বরফের উপরে বিনোদনের মতো হাঁটা হয়েছে। এখানে নিচে টপকে গেলে ইতি। মাঝপথে সহ সাথীর কোকা-৩০ একডোজ খেতে বাধ্য হলাম। এমন ঠান্ডায় একমাত্র ইয়েতি বেঁচে থাকতে পারে।  মোটামুটি ৭-৩০টায় আমরা প্রায় একসাথেই রূপকুন্ডের মন্দিরে পৌঁছলাম। উচ্চতা প্রায় ১৬০০০ ফুট। চারিদিকে এদিক সেদিকে বরফের ঢালে ঘেরা বরফাবৃত রূপকুণ্ড।

মনের মধ্যে এমন একটা হচ্ছিল যে পাগলের মতো লাগছিল। এভারেস্ট তো জয় করতে পারব না। এই মুহূর্তই সারাজীবনের সঞ্চয় হয়ে রয়ে গেল। অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। অনেকেই ষস্টাঙ্গে মন্দিরের সামনের বরফে শুয়ে পড়ল। এখানেও পুজো দেওয়া হল! রূপকুণ্ড বা মিস্ট্রী লেকের গল্পটা গাইডই নতুন করে বলল। পাওয়া গেছিল অনেক আগে বন বিভাগে কর্মচারীদের কথা মতো কঙ্কাল। সেই কঙ্কালের লেক নিচেই রয়েছে। অনেকে সেই সব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি ঐ কঙ্কালের ইতিহাস, কে সেই সব করেছে, কেনই বা মেরেছিল তিনশো জন মানুষকে সে সব বুঝলাম না। হতে পারে পুরোটাই মিথ। স্থানটিকে দর্শনীয় করতেই হয়তো…আবার মনে হল এখানে হয়তো এক যুগে জনবসতি ছিল। আবহাওয়া বদলের সাথে সাথেই নানা ভাবে মানুষ মারা যায়। তবু গাইড যখন বলল খুলিতে আঘাত, তখন বুঝলাম হয়তো কোনও জনগোষ্ঠীর মারপিট হয়েছিল। তাই জন্য এমন হয়েছে।

Image result for roopkund trek"

কাল সারারাত বরফের পরে আজকের আবহাওয়া দারুন সুন্দর। আমরা ঠিক করলাম জোনারগলি পাসেও উঠব।  এক ঘণ্টায় পৌঁছেও গেলাম। উচ্চতা প্রায় ১৭০০০ ফুট।  চারিদিকে ধবধবে সাদা বরফের উপরে দাঁড়িয়ে, নীলাকাশে সাদা পেঁজা তুলোর মত মেঘ। স্বর্গ এই পৃথিবীতেই রয়েছে! এমন স্থানে তো মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করেই পৌঁছালাম। মনে হচ্ছে দুই পা দিলেই নন্দাঘুন্টি আর ত্রিশূল।  এই শৈলসমুদ্র পার করেই দুই পর্বতের মধ্যে দিয়েই হোমকুণ্ড আর রন্টি স্যাডল যাবার পথ।

Image result for roopkund trek"

যদিও সেখানে যেতে গেলে অগস্টের পর আসতে হবে।  আমার ছাতুমাখা আর ওদের আপেল ভাগ করে খাওয়া হল। এবার স্বর্গ থেকে বাস্তবে নেমে আসার কঠিন বাস্তবতা বাঙালি আমি! বরফের রাজ্য থেকে কর্কশ পাথুরে কলকাতায় ফিরে আসা। তবুও নামার সময়েও সাবধানের ত্রুটি রাখিনি। আমি অনেক দেরিতে ধীরে ধীরে সবার শেষে বাগুয়াবাসায় ফিরলাম ১০ কিমি পথ ৭ ঘণ্টায় হাঁটার পরে দুপুর ১২টায় ফিরলাম।

Image result for roopkund trek"

তারপরে একই পথে ব্যাক করলাম লোহাজঙ। যারা এখন যাচ্ছেন তাদের উৎসাহ দিতে থাকলাম। মনে মনে জানি এই পথ সত্যই মুক্তিযুদ্ধের মতোই কঠিন। এই পথ জীবনের বেঁচে থাকার মতোই কঠিন। তুষারপাত, ঠান্ডা, হাওয়া, বরফে আছাড় খাওয়া। প্রচন্ড বাস্তবতা তবু মানুষকে উৎসাহিত তো করতেই হবে। মানুষই তো পারে সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে প্রকৃতিকে জয় করতে। সেই পথ ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কাঠগুদাম থেকে একটু দূরেই হলদিওয়ানি স্টেশনে এসে আর দেখতে পেলাম না পাহাড়। ফিরে তাকালাম আকাশের মেঘের দিকে। চিন্তে পারলাম। মেঘটাও আমায় দেখে হাসল। নাকে ভেসে এলো পাহাড়ি পথের গন্ধ। ঐ তো দূরে একটি পাহাড়ি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুল নিয়ে…আচ্ছা ও কে, ও কী আমার ভালবাসার চেতনা, নাকি সত্যই এক নারী…কঙ্কালের লেকের মধ্যে তবে যে খুলি দেখলাম সেখানে কী তবে আমার পূর্বজন্ম ছিল, তাই কী আমি বরফের ঐ চূড়ায় আলাদা শক্তি পেয়ে গেলাম। ভাবতে ভাবতেই ট্রেনের মধ্যে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতে পারিনি। টিটি ডাকছে, টিকিটটা দেখাবেন প্লিজ। আমি আমার ক্ষত পা কোনও রকম নামিয়ে বললাম এই তো টিকিট, বলে দেখিয়ে দিলাম স্কেলেটন লেকের ছবি…

Image result for roopkund trek lohajong"

সেই কঙ্কালের রহস্য জানতে হলে দেখুন নিচের ভিডিও

 

- A word from our sponsors -

spot_img

Most Popular

আরও খবর...

বাংলায় নতুন আটটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন, চিকিৎসা জগতে বড় সুখবর

আরও আটটি মেডিক্যাল কলেজ পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। এই আটটি...

- A word from our sponsors -

spot_img

সব খবর...

রাজ্যে BJP ৩৬টা আসন পেলে ৬ মাসে রাজ্য সরকারকে বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দেব: শুভেন্দু

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি ৩৬টি আসন পেলে ৬ মাসের মধ্যে তৃণমূল সরকারকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবেন তিনি। বৃহস্পতিবার যাদবপুর কেন্দ্রের রানিকুঠিতে নির্বাচনী সভায় এমনই দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ২০২১ সালে তৃণমূল সরকারকে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে সিপিএম।আরও পড়ুন: ব্যক্তি...

‘‌আমার বাংলায় একসঙ্গে সবাই যেন ভাল থাকতে পারি’‌, ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতারে মমতা

তিনি বারবারই বলেছেন, বিবিধের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখতে হবে। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা। তাঁর সভা থেকে শোনা যায়, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। হ্যাঁ, তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি দুর্গাপুজোর উদ্বোধনও করেন, ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের নিয়ে রাস্তায় হাঁটেন, গুরুদ্বোয়ারায় গিয়ে পুজো...

কলকাতা মেট্রো এবার ছুটবে বিমানবন্দর পর্যন্ত, দুর্গাপুজোর আগে চালুর সম্ভাবনা

গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো এখন হাওড়া পৌঁছে গিয়েছে। তাতে যাত্রীদের মধ্যে একটা খুশির হাওয়া বইছে। কম সময়ে নিরাপদে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে হাওড়া স্টেশনে। এবার কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত কলকাতা মেট্রো পৌঁছে যাবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা চলতি বছরের দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে কাজ শেষ যাবে বলে সূত্রের...

বাংলায় নতুন আটটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন, চিকিৎসা জগতে বড় সুখবর

আরও আটটি মেডিক্যাল কলেজ পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। এই আটটি নতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সেই আটটিরই অনুমোদন মিলেছে বলে খবর। দেশজুড়ে নতুন মেডিকেল কলেজ চালুর জন্য আবেদন কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েছিল। তার মধ্যে থেকে মোট ১১২টির ক্ষেত্রে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার মধ্যে...

Mamata calls Councillor: তোমাকে প্রার্থী করতে পারলাম না, বরাহনগরের কাউন্সিলরকে ফোন মমতার

বরানগর বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে জল্পনার মধ্যেই স্থানীয় কাউন্সিলরকে ফোন তৃণমূলনেত্রী। বরাহনগর পুরসভার কাউন্সিলর রঞ্জন পালকে ফোন করে মমতা বলেন, তোমাকে প্রার্থী করতে পারলাম না। তবে ভালো প্রার্থী দিয়েছি।আরও পড়ুন: প্রচারে ব্যস্ত, ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে দিল্লি যাচ্ছেন না...

নবীনবরণকে কেন্দ্র করে মামলা গড়াল কলকাতা হাইকোর্টে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সরগরম

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ উৎসবের রাশ কার হাতে থাকবে?‌ এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ এই প্রশ্ন তুলে ধরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন পড়ুয়া। তাঁদের অভিযোগ, গত ২১ এবং ২২ মার্চ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণ অনুষ্ঠান হয়েছে। বরাবর...

PM Modi’s economic advisor on Kolkata: সিগারেট-মদেই ডুবে থাকে, বাঙালিদের তোপ মোদীর উপদেষ্টার, ‘অপমান’ মৃণাল সেনকে

জীবনে বড় কিছু করার কোনও ইচ্ছা নেই। মৃণাল সেনের সিনেমা পর্যন্তই দৌড় বাঙালিদের। এমনই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তথা অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যাল। সিদ্ধার্থ আহলুওয়ালির 'দ্য নিওন শো' পডকাস্টে কলকাতা ও বাঙালিদের ‘অধঃপতন' নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে...

দু’সপ্তাহ, ৩৫০ ঘণ্টা পার, শ্বেতপত্র কই? প্রশ্ন অভিষেকের, জবাব দিল বিজেপিও

আবাস যোজনা এবং একশ দিনের কাজ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন বিজেপিকে। কিন্তু তা নিয়ে গেরুয়া শিবির কোনও হেলদোল না দেখানোয় ফের সেই প্রসঙ্গ তুলে  বিজেপি তোপ দাগলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘প্রায় দু’সপ্তাহ ৩৫০ ঘণ্টা হয়ে গেল। বিজেপি এখনও আমার চ্যালেঞ্জ...

Rat inKMC: ইঁদুর মারা চলবে না, শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে কলকাতা পুরসভা

কলকাতা পুরসভায় ইদুরের তাণ্ডব দীর্ঘদিনের। তার ওপর সম্প্রতি সাপের দেখা মিলেছে পুরসভার ট্রেজারি বিভাগে। যার ফলে পুরসভা কর্মীদের আতঙ্ক বেড়েছে। এমন অবস্থায় কামড়ের ভয়ে অনেকেই চেয়ারে পা তুলে বসে থাকছেন। এর ফলে আবার দেখা দিচ্ছে পায়ের ব্যাধি। তারওপর ইঁদুর মারার নির্দেশ নেই। কারণ বিশ্ব...

আজ শেষ হচ্ছে রাজ্য সরকারি অর্থবর্ষ, চাপে পড়ে গিয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতর

৩১ তারিখ নয়, ২৮ মার্চ তারিখেই আর্থিক বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ আর্থিক বছরের শেষ তিনদিন ছুটি। সুতরাং বন্ধ থাকবে সরকারি অফিস। শুক্রবার গুড ফ্রাইডে, শনিবার এবং রবিবার উইকেন্ডের স্বাভাবিক ছুটি। আর তার জেরে ৩১ মার্চের বদলে ২৮ মার্চ তারিখই আর্থিক বছরের শেষদিন হিসেবে...

Panchayet board: লোকসভার আগে মহাজোটে ভাঙন ধরিয়ে পঞ্চায়েত দখল করে নিল তৃণমূল

লোকসভা ভোটের আগে আরও একটি পঞ্চায়েত দখল করে নিল তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানে বোর্ড গঠন করেছিল রামধনু জোট। তবে দু’দফায় আস্ত পঞ্চায়েতে দখল করে নিল তৃণমূল। কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএমের প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যরা একে একে ঘাসফুলে যোগ দিতেই পঞ্চায়েতটি রামধনু জোটের হাতছাড়া হয়েছে।...

Teachers scuffle: চাবি নিয়ে স্কুলের মধ্যেই ২ শিক্ষকের মারামারি, হাতে কামড়ে দিলেন হেডমাস্টার

ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল স্কুলে। প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের মধ্যে হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল স্কুল চত্বর। কিল, চড়, ঘুষি, থাপ্পড় তো বটেই এমনকী এক শিক্ষককে কামড়ে দিলেন অপর শিক্ষক। এমন ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঘটনাটি মালদার মানিকচকের এনায়েতপুর হাইস্কুলের। শুধুমাত্র চাবি...