প্রতিদিনের ব্যস্ত কাজে হাঁপিয়ে উঠেছেন ? আসুন তবে পূজোর ছুটির দিন গুলোতে যদি একটু পাহাড়ী অঞ্চলে বেড়াতে যাই তবে কেমন হয় ?আর জায়গাটা যদি তামিলনাড়ুতে নীলগিরির পর্বতের কোলে অপূর্ব হিল স্টেশন হয়, তবে বিষয়টা যথেষ্ট চমৎপ্রদ। আর সেই হিল স্টেশন যদি হয় ঊটি , আহা প্রকৃতির রম্যতার জন্যই ঊটির গুরুত্ব ,আর তার অন্য নাম হল “কুইন অফ হিল স্টেশনস্”। আসুন তবে জেনেনি এই স্থানের খুঁটিনাটি । তবে , আগে বলি যাবো কি করে ……
তামিলনাড়ুর ছোট্ট হিল স্টেশনের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার ।চেন্নাই কোয়াম্বাটোর নীলগিরির রেলপথের শেষ স্টেশন মেটুপালায়ম। আহা পাহাড়ি রানির কোলে নিশ্চিন্ত মানুষ ।শুধু কি পাহাড়ি কোল , না , তার সাথে আছে সুন্দর মনোরম স্নিদ্ধ পরিবেশ । তাই সেখানে টয়ট্রেনে যে মনোরম সফর দেবে এটা বলাই যাই । আমরা কিন্তু প্রাইভেট গাড়ি পাবলিক ট্রানস্পোর্ট যাবার জন্য ব্যবহার করতে পারি । তবে পথের আলোচনা করা যাক!…..
কলকাতা থেকে যদি ট্রেনে যাই তবে ৯ ঘন্টার রাস্তা । এখন প্রশ্ন নির্দিষ্ট ট্রেন আছে কি ?না সরাসরি কোন ট্রেন নেই ।কলকাতা থেকে মাদ্রাজ যেতে হবে ,তবে সেই ট্রেনের নাম ,”নীলগিরি এক্সপ্রেস”।ট্রেনটি রাত্রি ৯-১৫ তে ছাড়ে , ৯ ঘন্টার পথ। সেখান থেকে যেতে হবে মেটুপালাইয়াম , তবে সেটা যেতে হবে টয়ট্রেন।
বাস , তবে গাড়ি করে যেতে পারেন ।দূরত্ব প্রায় ৫০ কিমি ।ব্যাঙ্গালোর থেকে যাওয়াটাই ভালো। তবে মোটামোটি পথের পরিচয় পাওয়া গেল।
বিমান মাধ্যমে
ঊটির নিজস্ব কোনও বিমানবন্দর নেই এবং এর নিকটবর্তী বিমানবন্দরটি হল ঊটি থেকে প্রায় 97 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোয়েম্বাতুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ক্যাবে চড়ে সেখানে পৌঁছাতে প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় নেয়। ঊটিতে তিনটি হেলিপ্যাড (হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গা) রয়েছে; যার মধ্যে একটি থিত্তুকালে ও বাকি দুটি কোদানাড়ে অবস্থিত। থিত্তুকালে অবস্থিত হেলিপ্যাডটি হল সান্নিধ্যতম, যা উটি থেকে মাত্র 4 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ট্যাক্সি নিয়ে হেলিপ্যাড থেকে ঊটি পৌঁছাতে 11 মিনিট সময় লাগে।
রেল মাধ্যমে
ঊটিতে উদাগামন্ডলম রেলওয়ে স্টেশন, নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে থেকে রেলের দ্বারা পরিষেবিত হয়। নিকটবর্তী প্রধান রেলওয়ে স্টেশনটি হল কোয়েম্বাতুর জংশন স্টেশন, যা ঊটি থেকে প্রায় 86 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সড়ক মাধ্যমে
ঊটি সড়ক মাধ্যমে নিকটবর্তী অঞ্চলগুলির সাথে সু-সংযুক্ত রয়েছে। এটি সড়ক মাধ্যমে কুন্নূর ও কোয়েম্বাতুর থেকে যথাক্রমে 19 কিলোমিটার ও 84 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তামিলনাড়ু রাজ্য সড়ক পরিবহন নিগম-এর অনেক বাস শহরটিতে যাতায়াত করে।
এবার একটু কৌতুহল হচ্ছে যে উটির চারদিকে দর্শনীয় স্থান কি কি আছে ? তার সম্পর্কে জানতে চান? আসুন তবে , এক এক করে আমাদের সামনে আনব সেই স্থানে নাম আর বিবরণঃ
গর্ভমেন্ট রোজ পার্ক….
আহা গোলাপ কেনা ভালোবাসে , তাই না ? সেই প্রাচীনকাল থেকে ভালোবাসার উপহার গোলাপ। আমাদের আপনাদের সকলের ভালোবাসা নিবেদনের উপাদান হল গোলাপ । মনের মানুষ , তাকে প্রেম নিবেদন করব আর গোলাপ দেব না ? না না বেমানান লাগছে , তাই গোলাপের প্রতি আহ্লাদী আমরা সবাই । তাই তো মনোরম প্রেমের বাগানে হাজার প্রজাতির গোলাপ নিয়ে হাজির ঊটির “গর্ভমেন্ট রোজ পার্ক “।
দেদাবেত্তা শৃঙ্গ….
ঊটি থেকে ১০ কিলোমিটার উঁচুতে এই শৃঙ্গ । আমরা যারা উঁচু জায়গা থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে চাই , তারা সত্যই এর উপর থেকে ঊটিকে আরো মনোরম করে মনের অনুভূতির স্পর্শে দেখতে পাবো । এটাইও বা কম কিসের, তাই দর্শনীয় স্থান হিসাবে এটি যথার্থ ।
উটি বোটানিক্যাল গার্ডেন….
1848 সালে ট্যুইড্যেল-এর মারক্যুইস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, এটি হাজার হাজার প্রজাতির গাছপালার গৃহস্থল; এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে 2 কোটি বছর বয়সী একটি জীবাশ্ম বৃক্ষ এবং একটি মাঙ্কি’স পাজেল ট্রি, যেটিতে কোনও বানর চড়তে পারে না।
আমরা যদি বিভিন্ন ফুল , গাছ নিয়ে আকর্ষণ অনুভব করি , তবে তো উটি বোটানিকযাল যথার্থ। কারণ এখানে আছে অর্কিড , গুল্ম , ফার্ণ ইত্যাদির সম্ভার ।আর এর পরিধি ? আরে নানা , যথেষ্ট তার পরিধি , একবারে ২২ একর ।অর্থাৎ বিস্তৃত ভূমির শান্ত মধুর পরিবেশে গুল্ম , অর্কিডের সাথে আমরা , ভাবতেই রোমাঞ্চ লাগে ।
তবে বছরের একটা সময় এখানে ফুল প্রদর্শন করা হয় , সেটাকে গ্রীষ্মকালীন উৎসব বলে। যারা এই উ ৎসবে সামিল হতে চান , তবে তো ঠিক সময়ে আসতেই হবে । আর সময় , বিবরণ তো আমাদের পাতায় ।
ঊটি লেক….
ঊটি থেকে ৩ কিলোমিটার এক কৃত্রিম লেক ।এই লেকে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি । বিকেলটাকে যদি নৌকায় উপভোগ করতে চান , তবে আপনার ইচ্ছা সার্থক।
ওয়্যাক্স ওয়ার্ল্ড….
ঐতিহাসিক মূর্তির সাথে আলাপ করতে কে না চায় ।তাই তো ইতিহাস প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক কর্মী ও রাজনীতিবিদদের মোমের মূর্তি আমরা এখানেই দেখতে পাবো ।
কেবলমাত্র জনজীবনে স্বদেশী মুক্তিযোদ্ধা নয় , ১৪২ বছরের পুরানো যাদুঘরটিতে উপজাতীয় আভাসের বিশেষ প্রমাণের দলিলে পরিণত হয়েছে ।
ট্রাইবাল মিউজিয়াম….
এখানে দ্রুতগামী বাষ্পচালিত ইজ্ঞিন দেখা যায় , যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে ।এটি ঊটি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।পানিয়া , টোডা , কোটা প্রভৃতি উপজাতীর জীবন , বসবাস , কালের ইতিহাস এবং এদের বসতবাড়ি , যা পর্যটকদের বিশেষ ভাবে অকর্ষণ করে ।
ঊটির বসবাসযোগ্য হোটেল……
১) স্বল্প ব্যায়ের গ্রীণ অ্যাপেল রেসিডেন্স
২) ন্যাজিস্টিক ক্রাউন হোটেল
৩) মাঝারি বাজেটের মধ্যে “হোটেল লেক ভিউ এবং হোটেল ফেয়ার স্টে হল
৪) উচ্চবৃত্তদের জন্য ক্লাব মহিন্দ্রা ড্যানিশ ভিলা অথবা ফরচ্যুন রিসর্ট সুল্যিভন কোর্ট-কে বেছে নিতে পারেন।
এখন যদি ডায়েরির পাতায় কিছু নথিবদ্ধ করে রাখার প্রয়োজন থাকে তবে ,বলি…….
১) এই অঞ্চল টোডা নামক উপজাতিদের দ্বারা অধ্যুষিত ছিল , যদিও ব্রিটিশরা এটিকে উন্নত করে তোলেন ।
২) “উটাকামণ্ড “ এর সংক্ষিপ্ত নাম “ঊটি”
৩) নীলগিরি মাউন্ট্যেন রেলওয়ে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যময় স্থান এই ঊটি।
৪) সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এটি ২। ২৪০ মিটার উপরে অবস্থিত। এই শহরটি পরিদর্শনের সেরা সময় হল এপ্রিল ও জুনের মাঝামাঝি ও তারপর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যবর্তী সময়।
ঊটির প্রচলিত ভাষা….
তামিল, কানাড়া, মালায়লাম, বাডাগা ও ইংরাজী।
বিশেষ সতর্কতাঃ
শীতকালে এই শহর পরিভ্রমণে গেলে ভারী পশমীয় পোষাক নিতে কখনো ভুলবেন না । আর গ্রীষ্মকালে পরিভ্রমণে যাওয়ার সময় হালকা পশমীয় পোষাক নিয়ে যাওয়ার উচিৎ,আর সঙ্গে থাকবে কিছু ব্যাথা আর জ্বর আর সামান্য অম্বলের ঔষধ ।কারণ পাহাড়ী এলাকায় ভ্রমণ অনেকের বমির কারণ হয়। য়ার এখানে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় ।তাই তা থেকে বাঁচতে ওয়াটার প্রুফ নেওয়া যেতেই পারে ।কারণ ঠাণ্ডা লেগে গেলে ঘোরাটা মাটি । তবে আর দেরী কেন ? চলুন বেড়িয়ে পড়া যাক। দেরী নয় , আমরা পাড়ি দি ঊটির দিকে……
Ooty Video……