ওয়েব ডেস্কঃ মন পরিবর্তন শীল, তাই স্থির প্রতিজ্ঞ মন হলে সে অবস্থা ও পরিবেশের সাথে পরিবর্তন হয়। এমনকি বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অনেকসময় পরিবর্তন হয়। কিন্তু শরীর? সেও পরিবর্তন হয় তবে হ্যাঁ, কারণ থাকলে, যেমন? সে বিপদের আগে সচেতন করে। আর লক্ষণ ইঙ্গিত করে দেয় যে, হ্যাঁ, সে বিপদের মুখে। কিন্তু সেইগুলি যদি আগে চিনে নিতে পারা যায়, তবে সমস্যা থাকে না।কিন্তু তারজন্য তো সেই নির্দিষ্ট চিহ্ন সম্পর্কে সেই গুলি কি? দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট ঘটনা, ছোট ছোট শারীরিক সমস্যা যা বিপর্যয় ঘটাতে পারে। আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক কি কি সেই চিহ্নগুলি।
অকারণে ওজন কমে যাওয়া ঃ
সাধারণ ভাবে মানুষ নিত্যদিনে ব্যায়াম বা খাবার সংযোম করে নিজের ওজন কে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যদি এমন দেখা যায় যে, নিয়ন্ত্রণ না করেও অকস্মাৎ ওজন কমছে, আর তা অল্প নয়, ৫ কেজি বা ১০কেজি, তবে বুঝতে হবে যে শরীরে রোগ বাসা বাঁধছে। যেমন,
- হতে পারে দেহে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে, যা দ্রুত ওজন কমিয়ে দেয়।
- ডায়াবেটিস হলে ওজন কমে যায়।
- হাইপার থাইরয়ডিজম,অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে বেশী হরমোন ক্ষরণ হলে ওজন কমে যায়। এতে হরমোন বিপাক বেড়ে যায়।
- অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন শরীরের ওজন কমিয়ে দেয়।
- দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ হলে বা ডিমনেশিয়া অর্থাৎ স্মৃতি নষ্ট হলে ওজন নষ্ট হয়।
- ইটিং ডিস অর্ডার, এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা ও বুলিমিয়া নার্ভোসা। এনোরেক্সিয়া নার্ভোসাতে ওজন কমে যায়।
- এছাড়া, বিবিধ ঔষধ গ্রহণ, অন্ত্রের সমস্যা, আবার অনেকে স্টেরয়েড খেয়ে ওজন বেড়ে যায়, তারপর সেটাই তার ক্ষতি করে।
তবে যদি দেখা যায় যে, কোনভাবে ওজন ৩ মাসে ১/ ২ কিলো কমছে তখন, তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সাথে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় ঃ
এই রোগ হলো পেরিওডেন্টাল ডিসিজ, যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোগ। নিয়মিত ধূমপান করলে দাঁতে আঠালো প্লাক জমে যা মাড়ি দূরে সরে যাওয়ার সমস্যাটি উৎপন্ন করে। দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস থাকলে ও কলম বা পেন্সিল কামড়ানোর অভ্যাস থাকলে এমন হয়। দাঁতের এনামেল ছাড়াই মাড়ির ক্ষয় হয়। গ্যাস্ট্রিক, হার্টবার্নের রোগীদের ক্ষেত্রে তারা হয়ত নিজেরাও বোঝে না, তখন ইসোফ্যাগাল ক্যান্সারের আক্রমণের ভয় থাকে। তাই অ্যাসিডিটি থাকলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়।
ত্বক জ্বালাপোড়া ঃ
এইরোগে হঠাৎ করে কনুই, হাঁটু, পশ্চাৎদেশ, পিঠ,মাথার তালুতে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। তবে এই ভাইরাস কি? একটি ভাইরাস যার চিকিৎসাগত কোন লক্ষণ প্রকাশিত হয় না সেটিও ইমিউন সিস্টেমের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং সিলিয়াক ডিজিজের মত অটোইমিউন ডিজঅর্ডার তৈরি হয়।
কিন্তু কেন হয় এমন? গবেষকরা কি বলছেন? সিলিয়াক রোগে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে যাদের উচ্চমাত্রার রিও ভাইরাস অ্যান্টিবডি ছিলো তাদের মধ্যে একটি জিনের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায় যা IRF1 নামক প্রোটিন।T1L দুইভাবে কাজ করে – নিয়ন্ত্রক ইমিউন কোষের নির্দিষ্ট ধরনের গঠনকে দমন করে এবং গ্লুটেনের প্রতি ইনফ্লামেটরি প্রতিক্রিয়াকে উৎসাহিত করে।
টয়লেটের অভ্যাসের পরিবর্তন ঃ
ছোট ছোট ব্যার্থরুমে, ঘন ঘন যাওয়া অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস, ব্লাডার বা প্রোস্টেট ক্যান্সার। শুধু তাই নয় ডাইরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ওভারিয়ান ক্যান্সারের বা কোলন ক্যান্সারের কারণ হতেই পারে। এমন কি গ্যাসের সমস্যা, পেট ফাঁপা পাশাপাশি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটা একান্ত জরুরী।
হেমোরয়েড ঃ
পরিপাকতন্ত্রের কোনো অংশে প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক অসুখগুলো খুব কষ্টদায়ক হয়, বিশেষ করে আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজ। পাইলস বা গেজ হলো মলদ্বারের এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তনালীগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে।হেমোরয়েড দুইভাগে বিভক্ত – আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। এতে বসতে খুব অসুবিধা হয় এবং টেস্টের সাহায্যে ডাক্তারের পরামর্শে শরীরের ভিতরের রোগ বা লুকানো রোগ জানা যায়।
হাতের লেখার পরিবর্তন ঃ
পারকিনসন্স, মস্তিষ্ক ক্ষয় জনিত রোগ। স্বাক্ষর করতে গিয়ে হাত কাঁপে। রুগী বড়ো বড়ো লিখতে আরম্ভ করে। হাতের লেখায় জড়তা আসে। পরে অবশ্য সেই লেখা ছোট হয়ে যায়। এছাড়া শিক্ষকের ব্লাকবোর্ডে লেখা যদি ছাত্রদের বুঝতে কষ্ট হয় এবং বাক্য যদি জড়িয়ে লেখা হয়,তবে সেটাও এই রোগেরই লক্ষণ। নাশিকারন্ধে যদি ঘ্রাণ শক্তি হ্রাস পায়, সেটাও এই রোগের লক্ষণ। ন্যাশনাল পারকিনসন্স ফাউন্ডেশনের মতে ভীষণ আনন্দে বা দু:খে হাত কাঁপে। এমনকি হাঁটা চলা, শার্টের বোটাম লাগানো, তরকারি কাটা এসবের ক্ষেত্রে এই রোগ ভীষণ সমস্যা সৃষ্টি করে।এই রোগ মুখমণ্ডলের মাংস পেশি বা ফেসিয়াল মাসল-এর ভঙ্গিমাকেও শ্লথ করে।
হঠাৎ করে রেগে যাওয়া ঃ
অকস্মাৎ ডিপ্রেশন , যা মানুষ কে কেমল নিজেকে গুটিয়ে দেয় না তার সাথে হুট করে মানুষের মনে রাগ সৃষ্টি করে। সবসময় মনমরা হয়ে থাকলে, সব কিছুতেই বিরিক্ত লাগবে আর হুট করে রেগে আগুন হয়ে যায় মানুষ। ক্ষোভ ঐ রাগের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এমন লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে যে ডিপ্রেশন এর প্রধান কারণ।
দীর্ঘদিন যাবৎ কাশি ঃ
এমনি কাশি বিশেষ কোন রোগ না। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাশি অ্যালার্জি, অ্যাসমা বা এ্যালার্জির সমস্যা যদি না থাকে তবে দীর্ঘদিন ধরে কাশি বিশেষ সংকট বা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরী।
স্মৃতিশক্তির অবনতি ঃ
এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব ক্রমান্বয়ে লোপ পায়। আলঝেইমারস ব্রেনের ক্ষয়জনিত রোগ, এটা কোন মানসিক রোগ নয়। আলঝেইমারস রোগ হলো ডিমেনশিয়ার একটি সাধারণ রূপ।এই রোগে বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব ক্রমান্বয়ে লোপ পায়। ডা. এলইস আলঝেইমার ১৯০৬ সালে প্রথম এই রোগের বর্ণনা দেন। আগস্তি দেতার নামে এক ব্যক্তি অলীক দর্শন ও ভাবনা, স্মৃতিগত দুর্বলতা, কথা বলতে কষ্ট হওয়া, সঠিক শব্দটি স্মরণ করতে না পারা, খিটখিটে মেজাজ, রাগ, অসহিষ্ণুতা, সন্দেহপ্রবণতা ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুপরবর্তী পরীক্ষায় দেখা গেল, তাঁর মস্তিষ্ক ছিল চুপসে যাওয়া ছোট আকারের। স্নায়ুতন্তুগুলো এমাইলয়েড প্ল্যাক দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত আর অবশিষ্ট নিউরনগুলো নিউরোফিব্রিলারি ট্যাঙ্গেলে ভরপুর। পরবর্তীকালে এজাতীয় রোগের নামকরণ করা হয় আলঝেইমারস। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, হাইপারটেনশন ইত্যাদি। এই রোগ জিনগত ও পরিবেশ গত কারণে হতে পারে। গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলে ধীরগতিতে এবং বেশি থাকলে দ্রুতগতিতে এসব পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তবে প্রাথম থেকেই এর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
নাক ডাকা ঃ
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীর ঘুমের মধ্যে অসংখ্যবার, এমনকি ঘন্টায় তিরিশ বা তারও বেশী বার শ্বাস প্রশ্বাস থেমে যেতে পারে, এবং প্রতিবার শ্বাস বন্ধ অবস্থার স্থায়িত্বকাল কয়েক সেকেন্ড থেকে মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগটির দুটো ধরণ রয়েছে। প্রথমটি হল অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া যেখানে শ্বাসনালীর কোথাও কোন একটি বাধার কারণে শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটে। রোগী যখন জোর করে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে তখনই নাক ডাকার আওয়াজ হয়।দ্বিতীয় ধরণটি হল সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া যেখানে মস্তিষ্ক থেকে সঠিক সংকেত না পাওয়ায় শ্বাস প্রশ্বাসের মাংসপেশী মাঝে মাঝে কাজ বন্ধ করে দেয়।তবে এর সাথে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ,স্ট্রোক,ডায়াবেটিসের মত রোগের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব থেকে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।তাই প্রাথমিকেই এই রোগের কারণে ডাক্তার দেখানো হলে বা ডাক্তারের পরামর্শ নিলে রোগটি কতটা ক্ষতি করছে জানা যায়।
ইরেকটাইল ডিসফাংশান ঃ
পুরুষের অক্ষমতা বা দুর্বলতা সমাজে এখন সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- ইরেকশন ফেইলিউর : লিঙ্গের উত্থানে ব্যর্থতা।
- পেনিট্রেশন ফেইলিউর : লিঙ্গের যোনিদ্বার ছেদনে ব্যর্থতা।
- প্রি-ম্যাচুর ইজাকুলেশন : সহবাসে দ্রুত বীর্য স্খলন বা স্থায়িত্বের অভাব।
এক্ষেত্রে যৌন আচরণের যে দিকটি পুরুষের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর তাহলো পুরুষাঙ্গ বা লিঙ্গের উত্থানে ব্যর্থতা। এটিকে অনেক সময় “ইরেকটাইল ডিসফাংশন “বলে। তবে শারীরিক বা দৈহিক নানা কারণে যেমন লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হতে পারে ঠিক তেমনি মানসিক সমস্যার কারণে বা আবেগজনিত কারণেও পুরুষত্বহীনতা হতে পারে। পুরুষাঙ্গ এর ধমনীগুলো হয় পাতলা, তাই যদি হার্ট ডিজিজ থাকে তবে এই ইরেকটাইল ডিসফাংশন দেখা যায়।