চাইনিজ খেতে ভালবাসেন? তবে জেনে নিন কলকাতার কোথায় সেরা চাইনিজটি পাওয়া যায় অথচ বাড়ির সবাইকে নিয়ে খেতে গিয়ে পকেট খালি হয়ে না যায়..।।
মাছ-ভাত এবং বিরিয়ানি ছাড়া বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় সম্ভবত চাইনিজ। সেই কবে থেকে কলকাতায় এসেছিলেন চিনের মানুষেরা। তিন-চার প্রজন্ম পরে তাঁরা এখন হাফ-বাঙালিই হয়ে উঠেছেন। একটা সময়ে অথেন্টিক চাইনিজ খেতে সবাই চায়না টাউন দৌড়তেন। এখন কিন্তু সেই মনোপলি আর নেই। পাশাপাশি চাইনিজও অরিজিনাল চাইনিজ নেই। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁতেই যা রান্না করা হয় তা ভারতীয়দের রুচি-পছন্দ অনুযায়ী মডিফায়েড।
কলকাতায় চাইনিজের এই পারফেক্ট কম্পিটিশনের বাজারে পকেট সামলে সেরা চাইনিজের ঠিকানাগুলি দেখে নিন—
১) দক্ষিণ কলকাতায় বাসন্তী দেবী কলেজের কাছে, ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের বিপরীতে ‘হাটারি’ রেস্তোরাঁটি মধ্যবিত্তের চাইনিজ খাবার জন্য আদর্শ। অতুলনীয় রান্না এবং প্রচুর মেনু তো বটেই, তার থেকেও বড় হল পোরশন।
হাটারির স্টার্টার থেকে সাইড ডিশের পোরশন এতটাই বেশি যে দু’জন তো বটেই, তিন-চারজন অনায়াসে খেতে পারবেন পেটভরে। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে ১০০০ টাকার আশপাশে।
২) মেইনল্যান্ড চায়না খুবই জনপ্রিয় চাইনিজ রেস্তোরাঁ হলেও অনেকের কাছেই বেশ খরচসাপেক্ষ। তুলনায় অনেক সস্তা এই গ্রুপেরই অন্য একটি রেস্তোরাঁ ‘হাকা’। কিন্তু এখানেও আ-লা-কার্টে না খেয়ে বুফে খেলে পকেটের পক্ষে ভাল এবং বুফেতে যা মেনু থাকে তা খেয়ে শেষ করা যায় না।
একজনের বুফের খরচ ৪৫০ টাকা। এর মধ্যে স্টার্টার, স্যুপ, স্যালাড, তিন-চার রকমের ভেজ ও ননভেজ সাইড ডিশ, ন্যুডলস, রাইস, যথেচ্ছ আইসক্রিম, কেক সবই পড়বে। হাকা রয়েছে সিটি সেন্টার সল্টলেকে এবং মণি স্কোয়্যার মলে।
৩) ‘জিমিস কিচেন’ হল কলকাতার অন্যতম সেরা চাইনিজ রেস্তোরাঁ। অনেক তারাখচিত রেস্তোরাঁকেও হার মানায় এদের চিলি পর্ক, চিলি ক্র্যাব, ক্রিসপি চিকেন এবং চাইনিজ মিক্সড স্যুপ। থিয়েটার রোড ত্রিমূর্তি পেট্রল পাম্পের কাছে এই রেস্তোরাঁটি চেনেন না এমন খাদ্যরসিক কমই আছে। দু’জনের জন্য খরচ ৭০০ টাকা।
৪) কলকাতায় চাইনিজ খাওয়া ঠিক সম্পূর্ণ হয় না চায়নাটাউনে চাইনিজ না খেলে। এখানকার ‘বেইজিং’ সবচেয়ে বিখ্যাত এবং খরচসাপেক্ষও বটে। তবে দু’জনে মিলে থ্রি-কোর্স মিল খেতে চাইলে তা ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার
মধ্যে হয়ে যাবে। এখানে এলে অবশ্যই প্রন স্টার্টার খাবেন এবং সাইড ডিশে যে কোনও একটি সিফুড নেবেন।৫) চায়না টাউনেই রয়েছে আর একটি ভাল বাজেট রেস্তোরাঁ, কিম লিং। এখানে দু’জনের খরচ পড়বে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে।
৬) পার্ক স্ট্রিটকে বাদ দিলে কি আর চলে? এখানে সেরা বাজেট চাইনিজ রেস্তোরাঁটি ছিল ‘পিপিং’। দুর্ভাগ্য, সেটি এখন বন্ধ। পরবর্তী অতিবিখ্যাত চাইনিজ জয়েন্ট ‘বারবিকিউ’ হলেও ইদানীং খাবারের কোয়ালিটি আর ঠিক আগের মতো নেই। তাই পার্ক স্ট্রিটে বাজেটের মধ্যে ভাল চাইনিজ পেতে গেলে যেতে হবে ‘টুং-ফুং’য়ে। দু’জনের খরচ ১০০০ টাকার আশপাশে।
৭) পার্ক স্ট্রিটের মাল্টিকুইজিন রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে ভাল চাইনিজ পাবেন ‘ওয়েসিস’-এ। এখানেও দু’জনের খরচ পড়বে ১০০০ টাকার আশপাশে। তবে এদের চাইনিজ মেনুর রেঞ্জটি বিশাল নয়।
৮) দু’জনের জন্য বাজেট যদি হয় ৫০০ টাকা, তবে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারেন গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের উলটোদিকে, ‘গ্রাব ক্লাব’-এ। এসি নেই। তবে প্যাচপ্যাচে গরম নয় কারণ রেস্তোরাঁটি বেশ খোলামেলা। এখানে চাইনিজ ও টিবেটান দুইই পাবেন।
৯) সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে, চাঁদনি মেট্রো স্টেশনের গায়েই রয়েছে কলকাতার প্রাচীনতম চাইনিজ রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে একটি— ‘চাংওয়া’। এটি বার কাম রেস্তোরাঁ। সেই উত্তমকুমারের যুগের বাংলা সিনেমার ‘কেবিন’-কালচার বজায় রয়েছে এখনও। বাংলার দিকপাল কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের প্রিয় ঠেক ছিল চাংওয়া। এখানে বসে খেতে ইচ্ছে না হলে পার্সেল করে নিন। কারণ রান্নাটা এখনও ভাল। দু’জনের জন্য খরচ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
১০) চাঁদনি চকের ‘ক্রিস্টাল চিমনি’ হল এমন একটি বাজেট চাইনিজ জয়েন্ট যার প্রবল খ্যাতি রয়েছে কলকাতার মূল অফিসপাড়ায়। চাইনিজ ও তিব্বতী, দুরকম খাবারই পাবেন। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে ৬০০ টাকার আশপাশে।